ভিডিও সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভুয়া তথ্যে পুলিশে চাকরি, স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর অভিযোগ

মনজুরুল হক

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে মনজুরুল হক নামে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নানা সাজিয়ে ভুয়া তথ্যে পুলিশে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সম্রাট হাসান তুহিন নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত সম্রাট হাসান তুহিন সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা থানার শেখেরগাঁও গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। তিনি বর্তমানে রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী থানায় কনস্টেবল পদে কর্মরত রয়েছেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনজুরুল হক নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার শেখুপুর গ্রামের বাসিন্দা।

 

এ ঘটনায় তুহিনের স্ত্রী হোসনা বেগম গত ১৬ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত ময়মনসিংহ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।

হোসনা বেগম নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা হিলোচিয়া গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে হোসনা বেগমের সঙ্গে সম্রাট হাসান তুহিনের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের দুই বছর পর ২০১৪ সালে তুহিন পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরিতে যোগদান করেন। চাকরিতে যোগদানের সময় তিনি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার শেখুপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনজুরুল হককে নানা সাজিয়ে মিথ্যা তথ্যে সুনামগঞ্জ নোটারি পাবলিকে হলফনামা তৈরি করেন। এতে তুহিন নিজেকে মনজুরুল হকের মেয়ের পুত্র (দৌহিত্র) হিসেবে দাবি করেন।

 

পরে সেই হলফনামা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার কোটা সুবিধা গ্রহণ করে পুলিশে চাকরি নেন তুহিন। তিনি দীর্ঘদিন নেত্রকোনা জেলার মদন থানায় কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধার কোটায় চাকরির সুবাদে তিনি বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে বেপরোয়া জীবনযাপন করতেন। এমনকি ছুটি না নিয়েও তিনি মাসের পর মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন।

 

জুলাই বিপ্লবের সময় মদনে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচিতে হামলায় সরাসরি জড়িত থাকায় তুহিনকে রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী থানায় বদলি করা হয়। বর্তমানে তিনি রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী থানায় কর্মরত আছেন।

 

হলফনামাসহ এ সংক্রান্ত সব কাগজপত্র ও তুহিনের ছবি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনজুরুল হককে দেখানো হলে তিনি বলেন, তুহিন নামে আমার কোনো নাতি নেই। এমনকি হলফনামায় থাকা স্বাক্ষরটিও আমার নয়, কেউ হয়তো প্রতারণা করেছে। আমার দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি মোহনগঞ্জে; সুনামগঞ্জে আমার মেয়েকে বিয়ে দেইনি। যে এই প্রতারণা করেছে আমি তার শাস্তি দাবি করছি। 

আরও পড়ুন

 

নেত্রকোনা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল সম্রাট হাসান তুহিন জেলার মদন থানায় কর্মরত থাকাকালীন ২০২৩ সালের ৫ জুলাই হতে ১৫৬ দিন কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত ছিলেন।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহের জেলার ফুলবাড়ীয়া থানার সিআর ৭২৯/২৩ নম্বর মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি তুহিন। ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি তুহিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ময়মনসিংহ মহানগর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। তারপরও তিনি চাকরিতে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

 

অভিযোগকারী হোসনা বেগম ওই পুলিশ সদস্যের স্ত্রী। হোসনা জানান, তুহিন প্রতারণা করে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মঞ্জুরুল হকের মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করে নিজেকে নাতি পরিচয় দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশে চাকরি গ্রহণ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হক তার নানা নন।

 

তবে অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে পুলিশ কনস্টেবল সম্রাট হাসান তুহিন বলেন, স্ত্রীর সঙ্গে পারিবারিক ঝগড়া হওয়ার কারণে এমন অভিযোগ করেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হক আমার নানা এটাই সত্যি। তার সনদেই পুলিশেই চাকরি নিয়েছি। অফিসিয়ালি নিয়মিত আমাদের ভেরিফিকেশন হয়। মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণা করে থাকলে এতদিনে চাকরি থাকার কথা নয়।

 

তিনি আরও বলেন, চেক জালিয়াতি সংক্রান্ত একটা মামলায় আমার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট হয়েছিল। একজন প্রতারণা করে সেই মামলাটা করেছিল। অভিযোগ থাকতেই পারে, প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ দোষী নয়।

 

রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) অভিযোগ বিষয়ে ময়মনসিংহ দুদক সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি ঢাকা অফিসে পাঠানো হবে। পরবর্তীতে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিধি অনুযায়ী আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ার শাজাহানপুরের নার্সারি থেকে মরিচের চারা কিনে দিশেহারা কৃষক

চট্টগ্রামে অস্ত্রসহ ৬ উপজাতি সন্ত্রাসী আটক

করতোয়া সম্পাদকের ব্যাংক চেক প্রত্যাখ্যানের মামলায় আসামির ছয় মাস জেল ও ৮ লাখ টাকা জরিমানা

বগুড়াসহ দেশের ১৬ ইউনিয়নে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ওটিপি‘র মাধ্যমে চাল বিতরণ শুরু

নারায়ণগঞ্জে মিললো গাজীপুর সিটির বস্তাভর্তি এনআইডি কার্ড

বগুড়ার শিবগঞ্জে কৃষকের তিন হাজার বেগুন ও ৯শ’ কলাগাছ কর্তনের অভিযোগ