ভিডিও মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট ২০২৫

আলহাজ্ব বুলবুল চৌধুরী

“পঞ্চশ- এ দৈনিক করতোয়া”

“পঞ্চশ- এ দৈনিক করতোয়া”

পাঠক প্রিয় দৈনিক করতোয়া ৪৯তম বছর পেরিয়ে পদার্পণ করেছে ৫০তম বছরে। এটি একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক যা একটি দীর্ঘ এবং সফল যাত্রাকে চিহ্নিত করে। দৈনিক করতোয়ার নিরপেক্ষতা, বস্তুনিষ্ঠতা ও সাহসী ভূমিকা এখন সার্বজনীন। পাঠকের চাহিদা ও সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে দৈনিক করতোয়া সবার নিকট সমাদৃত হওয়ায় আঞ্চলিকতার বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে আজ জাতীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এর প্রচার এবং প্রসার।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় দৈনিক করতোয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। আয়নায় চোখ রেখে একজন মানুষ যেমন সহজেই দেখে নিতে পারে তার রুপ অবয়ব ঠিক, তেমনি সংবাদ পত্রের পাতায় হুবহু প্রতিফলিত হয় সমসাময়িক সমাজের চিত্র। তাই সংবাদ পত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। গুণগত মান, দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ, অঙ্গসজ্জায় বৈচিত্র্য ও স্বাতন্ত্র্যতা বজায় থাকার কারণে প্রতিবারই বর্ষপূর্তি সংখ্যা পাঠক ও বোদ্ধামহলে সমাদৃত হয়েছে।

১৯৭৬ সালের ১২ আগষ্ট উত্তরবঙ্গের পুন্ড্র নগরী নামে খ্যাত বগুড়া শহরের মাটিতে শ্রদ্ধেয় সম্পাদক লায়ন মোজাম্মেল হক লালুর আন্তরিক প্রচেষ্টা, ত্যাগ, ধৈর্য ও প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসে প্রতিষ্ঠা লাভ করে দৈনিক করতোয়া। দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা গুলোর মধ্যে দৈনিক করতোয়া অত্যন্ত উঁচু আসনে অধিষ্ঠিত।

দৈনিক করতোয়া আজ উত্তরাঞ্চল সহ পুরো দেশেরই একটি গর্বের পত্রিকা। বাংলার ইতিহাসে করতোয়া নদী যেমন বগুড়া তথা উত্তরাঞ্চলের মানুষকে পরিচিত করেছে, তেমনিভাবে এই নামে নামকরণ দৈনিক করতোয়া পত্রিকাটি বগুড়া তথা উত্তরাঞ্চলের মানুষের কৃষ্টি কালচার, শিক্ষা, সাহিত্য, ইতিহাস, চিন্তা-চেতনা, শিল্প ক্রীড়া, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট জনতার সামনে পঙ্খানুপুঙ্খু রূপে তুলে ধরতে শতভাগ সক্ষম হয়েছে।

শহর থেকে নগরে, নগর থেকে গ্রামে পৌঁছাতে শুরু করে উত্তর জনপদের মানুষের কত না খবর। ক্রমেই প্রিয় থেকে অতিপ্রিয় হয়ে ওঠেছে উত্তরাঞ্চল সহ দেশের সর্বত্র এই সংবাদপত্রটি। অন্ধকার, অন্যায়, অত্যাচার এবং অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে সত্য ন্যায় প্রতিষ্ঠা করাই হচ্ছে পত্রিকার কাজ। সেই কাজটিই করছে আমাদের পাঠক প্রিয় পত্রিকা দৈনিক করতোয়া।

বগুড়া ছাড়িয়ে গত কয়েক বছর ধরে রাজধানী শহর ঢাকা থেকে নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে দৈনিক করতোয়া। এই পত্রিকা পাঠক প্রিয় হওয়ার আরও অনেক কারণ রয়েছে। তা হচ্ছে, সত্য, সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের সাথে সাথে মুদ্রন ও অঙ্গসৌষ্ঠর হৃদয় গ্রাহি হওয়া, তাই লেটার প্রেসের ভাঙ্গা ভাঙ্গা টাইপের কঙ্কালের ন্যায় পুষ্টিহীন শিশুর সাদৃশ্য পেরিয়ে আধুনিক প্রযুক্তিতে অত্যাধুনিক গজ মেশিনে কম্পিউটার কম্পোজ অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও কারিগরি নৈপুণ্যে বিভিন্ন রং বেরংয়ে প্রকাশিত হচ্ছে আজকের উত্তর বঙ্গের শ্রেষ্ঠ পাঠকপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক করতোয়া।

সংবাদপত্রকে একটি রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ বলা হয়ে থাকে। আর সামাজিক উন্নয়ন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অপরিসীম ভূমিকা সংবাদপত্রের। সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা হলো সাংবাদিকদের। সাংবাদিকতা হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পেশা। সেজন্য অনেক সময় সাংবাদিকদের সমাজের অতন্দ্র প্রহরী বা গেট কীপারস বলা হয়ে থাকে।

একজন সাংবাদিক সদা সত্যের উপাসক। সংসার, সমাজ, সামাজিকতার সব নিয়মনীতি, বাধা-বিপত্তি সবকিছু অতিক্রম করে সংবাদের জন্য ছুটে বেড়ায় দিনরাত, এক জনপদ থেকে অন্য জনপদে। সাংবাদিকতার পেশায় সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো এই পেশার নীতিতত্ব। সেই সাথে বড়বেশি প্রয়োজন সাংবাদিকদের নীতিগত ঐক্য। শুদ্ধ সাংবাদিকতার জন্য চাই নিরপেক্ষতা, স্বাধীন, প্রভাব-প্রতিপত্তি, হুমকি, আত্মীয়তা, ব্যক্তিস্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহার তথা সবকিছুর উর্ধ্বে থাকতে হয় একজন নিষ্ঠাবান সাংবাদিককে। দেশে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা আজ চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন

সমাজের এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা রাষ্ট্র, সমাজ ও মানুষকে নিরলসভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। অথচ না আছে তাদের জীবনের কোন নিরাপত্তা, না আছে যথাযথ পারিশ্রমিক। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডিলানো রুজভেল্ট সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সম্পর্কে বলেছেন, “যদি কখনো সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করা সম্ভব হয় তবে জনসাধারনের বাক স্বাধীনতা, শিক্ষার স্বাধীনতা, বক্তব্য, সভা-সমাবেশের মতো মৌলিক অধিকারগুলো অর্থহীন হয়ে পড়বে। ভূলুন্ঠিত হবে মানবাধিকার আর গণতন্ত্র।

সংবাদপত্রের মূল দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে কথা বলা, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মূখপাত্র হিসাবে কাজ করা। এসব ভূমিকা পালন করতে হবে সুষ্ঠু মতাদর্শ ও জাতীয় চরিত্রসম্পন্ন বাঙালী জাতীয়তাবাদের আদর্শের ভিত্তিতে। একটি সংবাদপত্রের চারটি মৌলিক দায়িত্ব রয়েছে, সঠিক তথ্য প্রদান, শিক্ষা প্রদান, বিনোদন ও প্রভাবিত করণ। তবে বিনোদন হতে হবে তথ্য নির্ভর, মার্জিত। আমাদের সমাজের রুচি মূল্যবোধ কৃষ্টি ও কালচারের সাথে যা সামঞ্জস্যপূর্ণ।

পাঠকনন্দিত পত্রিকা হিসাবে দৈনিক করতোয়ার যেমন রয়েছে শিক্ষা-সাহিত্য, জ্ঞান, বিজ্ঞান, ক্রীড়া ও কৃষক সমাজের নানা সংবাদ পরিবেশন। তেমনি চিত্ত বিনোদনের জন্য নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে বিনোদন সংখ্যা। ধর্মীয় সহ বিভিন্ন দিবসে ছাপানো হয় প্রবন্ধ, নিবন্ধ। রমজান মাসে প্রকাশিত হয় খোশ আমদেদ নামে বিশেষ কলাম। শিশু কিশোরদের প্রতি বিকাশ তথা নতুন লেখক সৃষ্টির জন্য রয়েছে সবুজ আসর নামে একটি ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন, যা ক্ষুদে লেখক তৈরিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

দৈনিক করতোয়া পত্রিকাটি পাঠকপ্রিয় হওয়ার পিছনে রয়েছে শ্রদ্ধেয় সম্পাদক লায়ন মোজাম্মেল হক লালুর আন্তরিক প্রচেষ্টা, ত্যাগ, ধৈর্য্য ও প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস। তাঁর সাথে আছে আত্মবিশ্বাসী সম্পাদক মন্ডলী, সাংবাদিক ও কলাকুশলী। আর এই উদ্দমী সহপাঠিদের নিয়ে দৈনিক করতোয়া আজ একটি পরিপূর্ণ পত্রিকা হিসাবে পাঠক ও শাসক সমাজের নিকট চিরস্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে উঠেছে। মহাস্থানের পুন্ড্রবর্ধন খ্যাত বগুড়া ও রাজধানী শহর ঢাকা থেকে এক যোগে প্রকাশিত এই পত্রিকা  সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে দিন দিন মর্যাদার আসন তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে।

দৈনিক করতোয়া কোন জাতি ভেদ, গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় চলেনা। সকল দল ও মতের উর্ধ্বে থেকে দৈনিক করতোয়া আজ সর্ব মহলেই সুখ্যাতি অর্জন করেছে। আজকে এই পত্রিকা ৪৯ বছর পূর্ণ করে ৫০ বছরে পদার্পণ করে পত্রিকার সুবর্ণজয়ন্তীতে এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আগামীতে দৈনিক করতোয়া আরও মর্যাদাপূর্ণ এবং সফলতার সাথে প্রকাশিত হয়ে দেশ ও আন্তর্জাতিকভাবে সুখ্যাতি অর্জন করুক- এই হোক আমাদের সকলের কামনা।


লেখক  : প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডাকসু নির্বাচনে বাড়ছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, আচরণবিধি মানা নিয়ে প্রশ্ন

২৩০ বিচারক বদলি

হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক হলেন সারজিস আলমের শ্বশুর

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে ৬ লাখ টাকাসহ বিকাশ কর্মী নিখোঁজ

ডাকসু নির্বাচনে পোস্টার-ব্যানার নিয়ে কঠোর নির্দেশনা

কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি গ্রেফতার