জাল নোটের দৌরাত্ম্য

জাল টাকা দেশের অর্থনীতির জন্য হুমকি স্বরূপ। দেশের অর্থনীতির জন্য প্রত্যক্ষ হুমকি হিসেবে বিবেচিত হওয়ার পরও জাল টাকার হোতাদের থামানো যাচ্ছে না। আইনের ফাঁক দিয়ে এ অপরাধের সঙ্গে যুক্তরা বার বার গ্রেফতারের পরও বেরিয়ে আসছে। আবারও তারা নিয়োজিত হচ্ছে জাল নোটের ব্যবসায়। পত্রিকার পাতায় চোখ মেললেই এদের অপতৎপরতার খবর পাওয়া যায়।
পাবনার আতাইকুলার র্যাব-১২ অভিযান চালিয়ে জাল টাকা প্রস্তুতকারী চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। এ সময় ৫৩ হাজার জাল টাকা জব্দ করা হয়। রবিবার সন্ধ্যায় তাদের আটক করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার দ্বারিয়াপুর গ্রামের রিফাত শেখের ছেলে সবুজ শেখ (৩২), দ্বারিয়াপুর কান্দাপাড়া গ্রামের মৃত তারা প্রামানিকের ছেলে শাহিদুল প্রামানিক (৪০), জুগ্নিদহ গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আতিক মোল্লা (২৩) বাংলা বান্দা গ্রামের সেলিম ফকিরের ছেলে সবুজ ফকির (৩৩)।
এদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। যশোরের বেনাপোল চেকপোস্ট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৯ লাখ ২০ হাজার টাকার জাল নোটসহ এক তরুণকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আমড়ালি চেকপোস্ট এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। আটক তরুণ যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার ভবার বেড় গ্রামের ইছাহাক আলীর ছেলে খালিদ হোসেন (১৮)।
একটি জাল টাকার চালান বেনাপোল হয়ে যশোর পাঠানো হচ্ছে-এমন তথ্যের ভিত্তিতে বিজিবির একটি টহল দল তল্লাশি অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। এ ছাড়া ভোলার লালমোহন উপজেলায় বিপুল পরিমাণ জালটাকাসহ দেবর-ভাবিকে আটক করেছে পুুলিশ। সোমবার বিকেলে পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গজারিয়া এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন লালমোহন ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দেওয়ান কান্দি এলাকার মো: জুয়েলের স্ত্রী মোসা; সুমি বেগম (২৫) এবং মো: তাজউদ্দিনের ছেলে মো: মার্শাল (২০)। তাদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকার ১০০টি ও ৫০০ টাকার ৩০টি জাল নোট উদ্ধার করেছে লালমোহন থানা পুলিশ, যার মূল্য ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে জাল টাকার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং প্রতি লাখ টাকার জাল নোট ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। আটককৃতদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুনআমরা দেখেছি বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও আইনের ফাঁক ফোঁকর গলিয়ে তাদের ৮০ শতাংশ জামিনে মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে এসেছেন এবং পরবর্তী সময়ে আবারও জাল টাকার ব্যবসায় জড়িত হয়েছেন। বার বার গ্রেফতার হওয়া জালিয়াতের সংখ্যাও কম নয়। জাল টাকা চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়। কিন্তু দেখা যায় পুলিশের দেয়া কাগজপত্রে নানা ফাঁক ফোকর থেকে যায়।
ফলে তাদের জামিন পেতে অসুবিধা হয় না। স্মর্তব্য, জাল নোট ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মৃত্যুদন্ডের বিধান ছিল। ১৯৮৭ সালে তা রহিত করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড করা হয়। এ অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের জামিন অযোগ্য করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও আর্থিক জরিমানা সংবলিত নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে-আমরা এমনটিই দেখতে চাই।
আমরা মনে করি, এখন নতুন আইনে বিচারের পদ্ধতি যেন সহজ হয়। তিন মাসের মধ্যে এসব অপরাধের বিচার সম্পন্ন করতে পারলে অপরাধীরা সাজা পাবে এবং এই অপরাধ কমে আসবে।
মন্তব্য করুন