শুল্কে ফিরল স্বস্তি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল যখন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিলেন তখন তোলপাড় শুরু হয়েছিল বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশ সরকার, রপ্তানিকারক থেকে শুরু করে দেশে সাধারণ মানুষও উৎকণ্ঠায় পড়েছিল এই খবরে। এরপর থেকে গত তিনমাস শুল্ক নিয়ে আলাপ-আলোচনা, দফায় দফায় মিটিং শেষে অবশেষে সব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করে মার্কিন শুল্ক নিয়ে এলো স্বস্তির খবর। বাংলাদেশি পণ্যের জন্য পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে মার্কিন প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তিতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক বিজয় অর্জিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এক বিবৃতিতে তিনি এ ঐতিহাসিক সাফল্যের জন্য বাংলাদেশের আলোচক দলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনায় এই সাফল্য একটি সুদৃঢ় কূটনৈতিক বিজয়। তিনি আরো বলেন, আলোচনার মাধ্যমে অর্জিত এই চুক্তি আমাদের তুলনামূলক সুবিধা সংরক্ষণ করেছে। পাশাপাশি বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি এবং আমাদের মূল জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করেছে।
এই অর্জন কেবল বাংলাদেশের বৈশ্বিক অঙ্গনে ক্রমবর্ধমান শক্তিকে তুলে ধরে না, বরং এটি বৃহত্তর সম্ভাবনা, ত্বরান্বিত প্রবৃদ্ধি এবং দীর্ঘ মেয়াদি সমৃদ্ধির পথ উন্মুক্ত করে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নি:সন্দেহে উজ্জল উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘আজকের সাফল্য আমাদের জাতীয় দৃঢ়তা ও আগামী দিনের আরও শক্তিশালী অর্থনীতির সাহসী দৃষ্টিভঙ্গির একটি শক্তিশালী প্রমাণ।
শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তৃতীয় দফা আলোচনা শেষে গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এক নির্বাহী আদেশে নতুন এ হার ঘোষণা করা হয়। ট্রাম্পের ওই নির্বাহী আদেশ গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে গত ৭ জুলাই বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের কথা জানিয়েছিল হোয়াইট হাউস। এদিকে ট্রাম্প সরকারের শুল্কহার কমানোর সিদ্ধান্তে স্বস্তি এসেছে দেশের রপ্তানিকারকদের মধ্যে। তারা বলেছেন, বাড়তি শুল্ক নিয়ে তিনমাস ধরে যে ধরনের অনিশ্চয়তা ও ভয়ভীতি ছিল তা কেটে গেছে।
এর ফলে বাংলাদেশি পণ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে। পাশাপাশি এও বলেছেন, বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে। শুল্ক হার কমানোর ফলে বাংলাদেশের ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এ জন্য এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যেন বৈচিত্র্যময়, প্রতিযোগিতামূলক ও সহনশীল বাণিজ্য কৌশল প্রতিষ্ঠা করা যায়। বিশ্ব বাজারে ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ কাজে লাগাতে সরকারের কাছে আরও নীতিসহায়তার দাবি জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা।
আরও পড়ুনএমন একটি সফল দরকষাকষির জন্য সরকারকে অভিনন্দন। বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্কের পরিমাণ ২০ শতাংশ নির্ধারিত হয়েছে। এটি আমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক। কারণ আমাদের যেসব প্রতিযোগি দেশ আছে তাদের মধ্যে ভারতের পাল্টা শুল্ক ২৫ শতাংশ। ফলে তাদের তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে থাকবে। আর অন্য প্রধান প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ। ফলে ক্রেতাদের বাংলাদেশ ছেড়ে অন্য কোনো দেশে যাওয়ার তেমন সুযোগ থাকবে না। কারণ ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করলে বাংলাদেশ থেকে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে না। তা ছাড়া পোশাক শিল্পে ভিয়েতনামের সক্ষমতাও সংকুচিত হয়ে আসছে। আর ভারতের শুল্ক আমাদের তুলনায় বেশি হওয়ায় সেখানে ক্রেতারা যাবে না। এতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি উইন-উইন অবস্থান সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্ক হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামানোকে ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। তারা মনে করছেন, এতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নিয়ে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা কেটেছে। কমানোর পর যে শুল্ক হার হয়েছে, তা মূল প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই সমতা তৈরি হওয়ায় রপ্তানির ক্ষেত্রে যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল তা এখন সামাল দেওয়া যাবে।
তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, বাংলাদেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক হার স্বস্তিকর। ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, চীন, ভারতসহ আমাদের প্রতিযোগীদের তুলনায় শুল্ক বেশি নয়। এটাই আমাদের রপ্তানির জন্য বড় সুবিধা। যেহেতু শুল্ক হার প্রতিযোগীদের প্রায় সমান, তাই, শুল্কের কারণে রপ্তানিতে তেমন প্রভাব পড়বে না।
আমরা আশা করি বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশ পোশাক খাতে তার প্রতিযোগী দেশগুলোকে মোকাবেলা করতে আর সংকটে পড়তে হবে না। আমাদের পোশাক খাত বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠুক যাতে বিশ্ব বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আরো অগ্রসর হতে পারে। এ জন্য নিজেদের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। পোশাক শিল্পকে আন্তর্জাতিক মানদন্ডে আধুনিকায়নের পথে যেতে হবে। এ খাতে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি ও জীবনমানের উন্নতি বিধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে খাত সংশ্লিষ্টদের।
মন্তব্য করুন