আলু নিয়ে দুশ্চিন্তায় হিমাগার মালিকরা মূলধন হারাতে বসেছে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি : প্রতিদিন আলুর দাম কমছে। ফলে মুলধন গায়েবের পথে। হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলু নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন জয়পুরহাটের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। গত বছর এ সময়ে হিমাগার থেকে মজুতের অর্ধেক আলু বিক্রি হলেও বর্তমানে মজুতের ৮ শতাংশেরও কম আলু বিক্রি হয়েছে বলে জানান হিমাগার কর্তৃপক্ষ। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের লোকসানের পাশাপাশি হিমাগারের মজুদ আলু নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হিমাগার মালিকরাও।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ৪৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৬৩ হাজার মেট্রিক টন। এ জেলায় আলুর চাহিদা ৫০ হাজার মেট্রিক টন। ২১টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ হয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার মেট্রিক টন। আলুর উৎপাদন বেশি হওয়ায় মৌসুমের শুরু থেকেই জেলার বিভিন্ন বাজারে এবার আলুর আশানুরুপ দাম পায়নি কৃষকরা। গত বছর আলু চাষ করে কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়েছেন।
যার জন্য এবার হিমাগারে কৃষকদের পাশাপাশি অধিকাংশ আলু মজুদ করেছে ব্যবসায়ীরা। হিমাগারে মজুদের সময় ৬৫ কেজির এক বস্তা আলুতে খরচ হয়েছে এক হাজার থেকে এগারো’শ টাকা। এর সাথে হিমাগার ভাড়া চার’শ টাকা যোগ করলে প্রতি বস্তায় ব্যবসায়ীদের খরচ পড়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। সংরক্ষণের চার মাস পর সেই আলু জাত ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬২০ থেকে ৬৩০ টাকা বস্তা।
এতে ব্যবসায়ীদের লোকশান গুণতে হচ্ছে বস্তাপ্রতি ৮৮০ থেকে ৯০০ টাকা। আর কৃষক পাচ্ছন হিমাগার ভাড়া বাদে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বলছেন, হিমাগার থেকে আলু কিনে তাদেরও লোকসান হচ্ছে। চাহিদা কম থাকায় পাইকারি বাজারে দিন দিন দাম কমছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আলু বিক্রি করে কৃষকরা হয়তো হিমাগার ভাড়াও দিতে পারবেন না। দাম কম জেনে কৃষকরা আলু বিক্রি করতেও আসছেন না। মজুত বেশী থাকায় আলু নিয়ে দুশ্চিন্তাই পড়েছেন হিমাগার মালিকরা।
আরও পড়ুনকালাই কাজীপাড়ার কৃষক হাসান আলী বলেন,‘শিমুলতলী আর.বি স্পেশালাইজড স্টোরেজে ৫০ বস্তা আলু রেখেছি। দাম কম তাই এখনও বিক্রি করিনি। এই আলু মৌসুমেই বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। চার মাস পর হিমাগারে রাখা ৬৫ কেজির এক বস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে ৬২০ থেকে ৬৩০ টাকা পর্যন্ত। পুনট বাজারের আলু ব্যবসায়ী মিঠু ফকির বলেন, ‘আলুর দাম বেশি হলে সরকারের বিভিন্ন এজেন্সির লোকজন দাম কমানোর চাপ দিয়ে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের বিভিন্নভাবে হেনস্থা করেন। অথচ এবার আলুর দাম বাড়ানো নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই।’
পুনট হিমাগারের ব্যবস্থাপক বিপ্লব কুমার বলেন,‘ এবার আলু ক্রয়-বিক্রয়ের চিত্র উল্টো। দাম না থাকায় কৃষকরা হিমাগারে আলু নিতে আসছেন না। ব্যবসায়ীরা বেকার সময় কাটাচ্ছেন। জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাহেলা পারভিন বলেন,‘জেলায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন আলুর চাহিদার বিপরীতে এবার উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৬৩ হাজার মেট্রিক টন। যার মধ্যে ২১টি হিমাগারে ২ লাখ ৬ হাজার মেট্রিক টন আলু মজুদ আছে। এ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৩ হাজার মেট্রিক টন। দাম না থাকায় হিমাগার থেকে আলু বিক্রি কম হচ্ছে।’
মন্তব্য করুন