ভিডিও শুক্রবার, ১৫ আগস্ট ২০২৫

শান্তি নাকি অচলাবস্থা! আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক আজ

শান্তি নাকি অচলাবস্থা! আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক আজ

ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বৈঠক হতে যাচ্ছে আলাস্কায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আলাস্কার সবচেয়ে বড় শহর অ্যাঙ্কোরেজে আজ শুক্রবার (১৫ আগস্ট) এই বৈঠকে বসবেন।

ছয় বছর পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প ও পুতিন মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। তাদের এই বৈঠককে সামনে রেখে বড় যে প্রশ্নটা সামনে আসছে তা হলো— এই বৈঠকের মাধ্যমে শান্তি আসবে ইউক্রেনে?

শুক্রবার এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, ট্রাম্প তার অন্যতম প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি — ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান — বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন। নিজেকে বৈশ্বিক শান্তিদূত হিসেবে তুলে ধরা ট্রাম্প আশা করছেন, পুতিনের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে এমন এক অগ্রগতি আনতে পারবেন, যেখানে অন্যরা ব্যর্থ হয়েছেন।

তবে বৈঠকের একদিন আগে বৃহস্পতিবার তিনি স্বীকার করেন, বৈঠক সফল হওয়ার সম্ভাবনা তিনি মাত্র “২৫ শতাংশ” দেখছেন। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকটি সফল হবে না, এমন ২৫ শতাংশ ঝুঁকি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

ফক্স নিউজ রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে তার সাক্ষাৎ ইউক্রেনের সঙ্গে দ্বিতীয় বৈঠকের সূচনা করতে পারে। যেখানে ইউক্রেনীয় নেতা জেলেনস্কির উপস্থিত থাকারও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি।

ইউক্রেন এবং রাশিয়ান অঞ্চল সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে সীমানা নিয়ে “লেনদেনের” বিষয়টি থাকতে হবে। অবশ্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, তার অনুপস্থিতিতে গৃহীত যেকোনো সিদ্ধান্ত অর্থহীন হবে।

বিবিসি বলছে, গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকের আগে আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের তেমন কোনো চিহ্ন নেই, কেবল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের উপস্থিতি ছাড়া। সাংবাদিকরা এ সময়ের পর্যটন মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রের “লোয়ার ৪৮” অঙ্গরাজ্য থেকে আসা ভ্রমণকারীদের সঙ্গে একই হোটেলে ও কফিশপে মিশে যাচ্ছেন।

নিরাপত্তা উদ্বেগ ও সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে শুক্রবারের এই বৈঠকটি হবে নিকটবর্তী এক মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে। পুরো বৈঠক কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা। এই সম্মেলন হচ্ছে ট্রাম্পের রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতির সময়সীমা দেওয়ার ঠিক এক সপ্তাহ পর। এই সময়সীমা শেষে কঠোর নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকিও দেওয়া রয়েছে।

অবশ্য কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে যুদ্ধ শেষ করার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, কারণ ২০২২ সালে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর থেকে উভয়পক্ষ রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়িয়ে আছে। ট্রাম্প আসলেই রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করা দেশগুলোতে নিষেধাজ্ঞা দেবেন কিনা তা নিয়েও সন্দেহ ছিল— কারণ এতে চীনের সঙ্গে তীব্র বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হতো। তবে তিনি রুশ তেল কেনার জন্য ভারতকে দ্বিতীয় দফায় শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের ঘোষণায় কার্যত নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা থেমে গেছে, ফলে উভয় পক্ষের কাছে কৌশল ঠিক করার অতিরিক্ত সময় মিলেছে। সপ্তাহজুড়ে মার্কিন অবস্থান আশাবাদী থেকে সতর্ক, আবার কখনও কঠোর ভঙ্গিতে দোল খেয়েছে। সবচেয়ে কঠোর অবস্থান দেখা গেছে বুধবার ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপের পর, যেখানে ট্রাম্প বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধে পুতিন রাজি না হলে “খুব কঠোর পরিণতি” ভোগ করতে হবে।

অন্যদিকে ট্রাম্পের ‘অঞ্চল বিনিময়’ বিষয়ক মন্তব্য ও হোয়াইট হাউসের ‘(পুতিনের কথা) শোনার বৈঠক’ হিসেবে বিষয়টি উপস্থাপনা কিয়েভকে শঙ্কিত করেছে। রাশিয়া এ বিষয়ে নীরব থেকেছে, দেশটি কেবল পুনরায় তাদের অবস্থান জানিয়ে বলেছে, যুদ্ধ শেষ হবে তখনই যখন তারা দখলকৃত ইউক্রেনীয় অঞ্চল — দোনেৎস্ক, লুহানস্ক (ডনবাস), খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া — সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেবে এবং কিয়েভ অস্ত্রশূন্য হয়ে ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবে।

ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, পুতিনের সঙ্গে তার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক হয়তো সমাধানের পথ খুলে দিতে পারে এবং তাকে বৈশ্বিক শান্তিদূত হিসেবে আরও শক্ত অবস্থানে দাঁড় করাবে। যুক্তরাষ্ট্রে তার সমর্থকরা যুদ্ধ দ্রুত শেষ করে ব্যয়বহুল বৈদেশিক সংঘাত থেকে দেশকে সরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখতে চান।

বৈঠকের আগে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রথম দুই মিনিটেই বুঝে যাবেন চুক্তি সম্ভব কি না। ইউরোপীয় দেশগুলো এই আলোচনায় বাইরে থাকলেও বুধবার ট্রাম্পের সঙ্গে আলাপের পর তারা কিছুটা আশাবাদী হয়েছে যে তিনি তাদের স্বার্থ রক্ষা করবেন।

তবে ইউক্রেন সরাসরি আলোচনায় নেই। ট্রাম্পের ‘অঞ্চল বিনিময়’ মন্তব্যের পর জেলেনস্কি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, “আমরা ডনবাস ছাড়ব না। এই অঞ্চল অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে এবং এটি রাশিয়ার জন্য ভবিষ্যতের আক্রমণের দরজা খুলে দেবে।”

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, কোনো ছাড় দিলে রাশিয়া আবার আক্রমণ চালাবে।

ট্রাম্প যদিও বৈঠকের পরপরই জেলেনস্কিকে আপডেট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং শিগগিরই একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের ইঙ্গিত দিয়েছেন, তবে পুতিন এতে আগ্রহী হবেন কিনা তা অনিশ্চিত। বিশ্লেষক তাতিয়ানা স্তানোভায়ার মতে, পুতিনের মূল লক্ষ্য ইউক্রেনের ‘ভূরাজনৈতিক নিরপেক্ষতা’ নিশ্চিত করা এবং তিনি তা অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

সব মিলিয়ে আলাস্কার এই বৈঠক উভয় নেতাকে একই টেবিলে বসাবে ঠিকই, কিন্তু প্রকৃত সমঝোতা খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন হতে পারে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইপিএলে বদলে যাচ্ছে যে ৬ নিয়ম

ভারতে ট্রাকের পেছনে তীর্থযাত্রীবাহী বাসের ধাক্কা, নিহত ১০

চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনে ঢাকায় তেল, উদ্বোধন শনিবার

জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কোনো সুযোগ নেই: ধর্ম উপদেষ্টা

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার রিকশাচালক আজিজুর

বাংলাদেশে প্রথমবার দ্য আইসক্রিম সেলার্স