অভয়নগরে ব্যবসায়ীকে মাটিতে পুতে চাঁদা আদায়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১

যশোরের অভয়নগরে ব্যবসায়ীকে মাটিতে পুতে চার কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগে থানায় ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
এই মামলায় গত শনিবার (২ আগস্ট) কামরুজ্জামান মিঠু নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল রোববার (৩ আগস্ট) আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে প্রেরণ করেছে পুলিশ। মিঠু অভয়নগরের গুয়াখোলার জামাল উদ্দিনের ছেলে।
অপরদিকে, ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান জনিকে শনিবার রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হেফাজতে নিয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়া একই ঘটনায় জড়িত থাকায় অভয়নগর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এই মামলার পলাতক অন্য আসামিরা হলেন, গুয়াখোলা সুপারিপট্টির কামরুজ্জামান মজুমদারের ছেলে ও পদ স্থগিত বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান মিঠু, খোকা মাস্টারের ছেলে সম্রাট, ধোপাদী গ্রামের দপ্তরিপাড়ার আক্কেল আলীর ছেলে ও অভয়নগর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান মফিজ এবং নওয়াপাড়া গরুহাটখোলা এলাকার আজাদ শেখের ছেলে সৈকত হোসেন হিরা।
মামলার বাদী ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী চলিশিয়া গ্রামের বাসিন্দা এবং নওয়াপাড়ার সনামধন্য ব্যবসায়ী মেসার্স জাফ্রিদি এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী শাহনেওয়াজ কবীর টিপুর স্ত্রী আসমা খাতুন।
বাদী মামলায় বলেছেন, তার স্বামী শাহনেওয়াজ কবীর টিপুর নওয়াপাড়া বাজারে মেসার্স জাফ্রিদি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। প্রধান আসামি আসাদুজ্জামান জনি তার সহকর্মী সৈকত হোসেন হিরাকে দিয়ে টিপুকে ধরে নিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। এরপর টিপুর স্ত্রী সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনির নিজ প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ২ কোটি টাকা রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট করেন। টাকা পেয়ে ওইদিন ব্যবসায়ী টিপুকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, এরপর গত ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে ব্যবসায়ী টিপু গ্রামের বাড়ি চলিশিয়া থেকে মোটরসাইকেলে বাজারে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গেট পার হলে সৈকত হোসেন হিরা তার গতিরোধ করেন। এরপর কিকেল ৩টা পর্যন্ত টিপুর মোবাইল ফোনটা বন্ধ পাওয়া যায়। পরে জানতে পারেন টিপুকে আসাদুজ্জামান জনির মালিকানাধীন কনা ইকো পার্কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এরপর টিপুর স্ত্রী সেখানে গেলে আসাদুজ্জামান জনি, সম্রাট হোসেন, নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে টিপুকে মারধর করে। এরপর বুক পর্যন্ত গর্ত খুঁড়ে বালু চাপা দিয়ে আরও ২ কোটি টাকা দাবি করে।
আরও পড়ুনএ সময় ব্যবসায়ী টিপু বাধ্য হয়ে তার ম্যানেজারকে ফোন করে টাকা দিতে বলেন। এরপর ম্যানেজার সাংবাদিক মফিজের অ্যাকাউন্টে পূবালী ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ ও সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে ৩২ লাখ টাকা রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট করে। এ সময় মফিজ আরও ১ কোটি টাকার চেক আদায় করে। পাশাপাশি জনির নামে ক্রয়কৃত ৩টি ও দিলিপ শাহার নামে ক্রয়কৃত ৩টি ১০০ টাকার ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। এরপর কাউকে কিছু বললে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেয়। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী টিপুর স্ত্রীর গত শনিবার রাতে অভয়নগর থানায় মামলা করেন। পুলিশ ওইদিন রাতেই আসামি কামরুজ্জামান মিঠুকে আটকের পরদিন আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করে।
এদিকে এই ঘটনার মামলার প্রধান আসামি আসাদুজ্জামান জনি এবং সম্রাটকে শনিবার রাতেই যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি।
এছাড়া এই ঘটনায় অভিযুক্ত অভয়নগর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান মফিজকে রোববার সংগঠন থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এদিন এক জরুরি সভা ডেকে মফিজুর রহমানের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অপসারণ করা হয়। সভায় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান দপ্তরির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে থানায় মামলা দায়েরের ঘটনায় তাকে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করা হয়। একই সঙ্গে সাধারণ সদস্য পদ থেকে কেন বরখাস্ত করা হবে না আগামী ৪ দিনের জন্য জবাব প্রদানের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আলিম জানান, ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চার কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগে থানায় ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ মামলায় এক আসামিকে গ্রেপ্তারের পর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
মন্তব্য করুন