ভিডিও বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

ক্যাম্পাসের নিসর্গকে দিয়েছে এক নতুন মাত্রা

বগুড়া আজিজুল হক কলেজের পেছনের পুকুরে একদল জলময়ূরের স্বাধীন বিচরণ

বগুড়া আজিজুল হক কলেজের পেছনের পুকুরে একদল জলময়ূরের স্বাধীন বিচরণ। ছবি : দৈনিক করতোয়া

স্টাফ রিপোর্টার : সামনে কোলাহলপূর্ণ আজিজুল হক কলেজ, পেছনে আবাসিক এলাকা। সব সময় শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় মানুষের যাতাযাতের সেই কোলাহলের মধ্যেই রাস্তার পাশের পুকুরের কচুরিপানার ওপর আপন মনে তিনটি ছানা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বড় তিনটি জলময়ুর। শিক্ষার্থী শিক্ষক ও স্থানীয়রা যখন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন তাদের চোখে হঠাৎ করেই পড়ছে একদল জলময়ূরের মনোমুগ্ধকর বিচরণ। অনেকেই ক্ষণিক দাঁড়িয়ে দেখছেন তাদের ঘুরে বেড়ানো ও নাচা-নাচি। কেউ দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন,ভিডিও করছেন। কিন্তু ওরা বিচরণ করছেন নির্ভয়ে।

একটু ভালভালে খেয়াল করলেই কলেজ ক্যাম্পাসের পেছনের পুকুরের কচুরিপানার সবুজ গালিচার ওপর দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে একঝাঁক ছোটবড় জলময়ুর। এরমধ্যে তিনটি পূর্ণবয়স্ক জলময়ূর তাদের লম্বা পা ফেলে শৈল্পিক ভঙ্গিমায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর তাদের সাথে ছায়ার মতো লেগে আছে তিনটি ছোট ছানা। মায়ের দেখানো পথে তারাও কচুরিপানার ফাঁক গলে ্এবং পাতার ওপর দিয়ে খাবারের সন্ধান করছে ঘুরে ঘুরে। তাদের এই স্বাধীন বিচরণ ক্যাম্পাসের নিসর্গকে দিয়েছে এক নতুন মাত্রা।

জানা যায়, জলময়ূর একটি জলচর পাখি। বাংলাদেশের একটি দৃষ্টিনন্দন ও দুর্লভ আবাসিক পাখি। প্রজনন মৌসুমে এদের লেজ ময়ূরের মতো দীর্ঘ ও আকর্ষণীয় হয় বলেই এমন নামকরণ। লম্বা পা ও আঙুলের সাহায্যে এরা সহজেই কচুরিপানা,পদ্ম ও শাপলার পাতার ওপর দিয়ে হেঁটে বেড়াতে পারে, যার জন্য এদের 'পদ্মপিঁপী' বা 'নেউপিপি' নামেও ডাকা হয়।

পরিবেশবাদী সংগঠন 'টিম ফর এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ (তীর)' দীর্ঘদিন ধরে পাখি সংরক্ষণ ও পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে আসছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান জানান, জলময়ূর সাধারণত জলজ পোকামাকড়, লার্ভা, ছোট শামুক ও জলজ উদ্ভিদের নরম অংশ খেয়ে বেঁচে থাকে। নিরাপদ পরিবেশ এবং পর্যাপ্ত খাবার পাওয়ায় আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাসকে তারা প্রজননের জন্য বেছে নিয়েছে।

আরও পড়ুন

এটি প্রমাণ করে যে, কলেজের প্রাকৃতিক পরিবেশ পাখিদের বসবাসের জন্য অনেকটায় অনুকূল। তাদের সদস্যদের তদারকির মধ্যেই আছে পাখিগুলো। তিনি আরও বলেন, সরকারি আজিজুল হক কলেজের বিশাল ক্যাম্পাস নানা প্রজাতির গাছপালায় সমৃদ্ধ, যা পাখিদের বসবাসের জন্য একটি আদর্শ পরিবেশ তৈরি করেছে। সেই জন্য ক্যাম্পাসকে 'পাখির অভয়ারণ্য' হিসেবে ঘোষণা করার জন্য তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এতে করেএই ক্যাম্পাসটি পাখিদের জন্য একটি নিরাপদ আবাস নিশ্চিতে সহায়ক হবে।

কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আরিফ হোসেন বলেন, ক্লাসের চাপে যখন হাপিয়ে উঠি, তখন বন্ধুদের সাথে কলেজের ক্যাম্পাসে ও পুকুরপাড়ে এসে বসে থাকা হয়। এসময় হঠাৎ করেই পাখিগুলো চোখে পরে। একটু অন্যরকম হওয়ায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় পাখিগুলোর নাম জলময়ুর। ওদের স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ানো দেখতে খুব ভালো লাগছে। ওরা যখন এস্ইে পড়েছে তখন আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করি যেন এদের কোনো ক্ষতি না হয়।

পাখি প্রেমিদের দাবি কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতেও এই ক্যাম্পাস হয়ে উঠবে আরও অনেক পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সেদিকে নজর রাখা সকলের দায়িত্ব। কারণ এই ছোট ছোট ভালো লাগার মুহূর্তগুলোই যান্ত্রিক জীবনে এনে দেয় অমূল্য প্রশান্তি।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভোলায় বেড়েছে নিউমোনিয়া রোগী, হাসপাতালে বেড-ওষুধ সংকট

গোপালগঞ্জে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার হয়নি : সেনা সদর

মেয়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে হন নিখোঁজ, ২০ বছর পর ফিরলেন নিজ গ্রামে!

অলিম্পিকের নির্বাচন নভেম্বরে

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করল মিয়ানমার জান্তা

চাঁদার জন্য এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা, দুই ভাইয়ের যাবজ্জীবন