বগুড়ায় তিন বছরে মাছের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ২শ’ মেট্রিক টন

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলায় গত তিন বছরে মাছের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ২শ’ মেট্রিক টন। এরমধ্যে প্রতি বছর এ জেলার জনসংখ্যা অনুপাতে মাছের চাহিদা রয়েছে ৮৪ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন। ফলে জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত প্রায় ১৯ হাজার মেট্রিক টন থেকে ২০ হাজার মেট্রিক টন পর্যন্ত মাছ অন্যান্য জেলায় প্রেরণ করা হয়ে থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলায় মাছ চাষযোগ্য সরকারি ও বেসরকারি মিলে ৬০ হাজার ১৬০টি পুকুর ও দিঘী রয়েছে। নদ-নদী ১৫টি ও বিল রয়েছে ৮১টি। তা ছাড়াও সরকারি মৎস্যবীজ উৎপাদনের জন্য ২টি খামার , বেসরকারি ১২৪টি হ্যাচারী এবং ৩৬১টি বেসরকারি নার্সারী থেকে উৎপাদিত পোনা মাছ চাষে যোগান দিয়ে থাকে। গত ২০২২ সালের আদমশুমারী অনুসারে জেলার মোট জনসংখ্যা ৩৭ লাখ ৩৪ হাজার জন।
এ জেলার মানুষের প্রতিদিন জনপ্রতি ৬২ গ্রাম হিসেবে বার্ষিক মাছের চাহিদা ৮৪ হাজার ৫০৫ মেট্রিক টন। এদিকে গত ২০২২- ২৩ অর্থ বছরে মাছের উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ১৫৯ মেট্রিক টন, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে মোট মাছের উৎপাদন হয় ১ লাখ ৪ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন আর চলতি বছর উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার ৩৫১ মেট্রিক টন মাছ। ফলে গত তিন বছরে এ জেলার চাহিদার তুলনায় গড়ে প্রতি বছর প্রায় ১৯ হাজার মেট্রিক টন মাছ উদ্বৃত্ত থাকে। এই উদ্বৃত্ত মাছ জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায় প্রেরণ করা হয়ে থাকে।
বগুড়ার বৃহৎ মৎস্য খামার জেলার আদমদিঘীতে অবস্থিত মেসার্স জিএম মৎস্য খামারের সত্বাধিকারি অব্দুল মহিত তালুকদার বলেন, গত ২০ বছরে মাছ উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্ট যেমন খৈল, চুন, রাইস পালিশ এমন কি বিদ্যুতের দামও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেলেও মাছের দাম বাড়েনি।
বিশেষ করে আগে পাঙ্গাস মাছ যে দামে আমরা বিক্রি করেছি এখনো সেই দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। তা ছাড়াও মাছে খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণ না থাকায় উৎপাদনে ধ্বস নামার কারণে অনেক মৎস্য চাষীই এ ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। অনেক মৎস্য চাষী লোকসান গুনতে গুনতে ব্যাংক লোনে জর্জরিত হয়েছেন।
এ ভাবে চলতে থাকলে আগামিতে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সারাদেশে বগুড়া, যশোর ও ময়মনসিংহ জেলায় সবচেয়ে বেশি মাছের উৎপাদন হলেও যশোর এবং মংমনসিংহ জেলার চাষীরা খাদ্যের ভেজাল পরীক্ষার সুবিধা পেলেও বগুড়ার মাছ চাষীরা ল্যাব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে।
আরও পড়ুনএ অবস্থায় বগুড়ার মৎস্য চাষীদের সহযোগিতা করতে খুব শীঘ্র বগুড়ায় একটি পরীক্ষাগার নির্মাণ জরুরী। কারণ এসব ফিস ফিড পরীক্ষার জন্য বগুড়ার ব্যবসায়ীদের ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত ল্যাবের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়।
আর এ কারণে বগুড়ায় একটি ল্যাব তৈরি করলে আমরা তাৎক্ষনিক পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে কোন ফিড ব্যবহার করবো তা দ্রুত সিন্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে বগুড়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়েও ল্যাবটি চালু করা হলে মৎস্যচাষীরা ফি দিয়েও পরীক্ষা করতে রাজি আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বগুড়ার সরদার মৎস্য খামার লিমিটেডের সত্বাধিকারি মো: বেলাল হোসেন বলেন, করোনাকালীন তার ম্যৎস্য চাষে যে ক্ষতি হয়েছে এখনো তিনি সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেন নি। ঐ সময়ে ক্ষতির কারণে তিনি ব্যাংকের বড় রকমের লোন পরিশোধ করতে না পারায় ব্যাংক থেকে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব কারণে তিনি কোনমতে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন।
বগুড়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালি পদ রায় বলেন, বগুড়ায় প্রতি বছর মাছের উৎপাদন বাড়ার পেছনে মৎস্য চাষীদের প্রযুক্তি ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা বড় ভূমিকা রেখেছে। জেলা ও উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তারা মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সব সময় মৎস্যচাষীদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। আর এ কারণে বগুড়ায় মৎস্য চাষ ভাল অবস্থানে রয়েছে। আগামিতে মাছের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মন্তব্য করুন