রংপুরের অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে

রংপুর প্রতিনিধি : সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থাকার পরও রংপুর জেলার আট উপজেলার অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। শহরে তুলনায় গ্রামাঞ্চলে এই হার অনেক বেশি। তবে শিক্ষার্থী বাড়ছে, বেসরকারি স্কুলগুলোতে।
রংপুর বিভাগের ৯ হাজার ৫৪৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাগজে কলমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ লাখ ৫৫ হাজার ৭৮৮ জন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, একই এলাকায় একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুলের দীর্ঘ সময় ও স্কুল ফিডিং কার্যক্রম বন্ধের কারণে এর প্রভাব পড়ছে বিদ্যালয়গুলোতে। ফলে দিন দিন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমছে। শিক্ষাবিদরা জানান, গতানুগতিক পাঠ্যক্রম থেকে বেরিয়ে আসার পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শক্ত নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি।
রংপুর নগরীর শালবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাগজে কলমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা একশর উপরে। প্রতিদিন গড় উপস্থিতির হার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ বলে জানান স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে গ্রামের স্কুল গুলোতে এই হার ৫০ শতাংশের নিচে। বিভিন্ন স্কুল ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
শিক্ষকরা জানান, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই একই ক্যাচমেন্টে একাধিক কিন্ডারগার্টেন ও এনজিও স্কুল গড়ে ওঠার পাশাপাশি সরকারি স্কুলের দীর্ঘ সময় এবং স্কুল ফিডিং কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় প্রভাব পড়েছে শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে।
শিক্ষক তামান্না আফরিন জানান, অধিকাংশ প্রাইভেট স্কুলেই অপ্রতুল অবকাঠামো ও খরচ অনেক বেশি হওয়ার পরও সেখানে বাড়ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। সরকারি প্রাথমিকের তুলনায় মানে এগিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেক বেসরকারি স্কুলে শিক্ষার মান ভালো। তাই অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের হাতে খড়ি হিসেবে বেসরকারি স্কুলগুলোকে বেছে নিচ্ছেন।
আরও পড়ুনশিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে নানা উদ্যোগ হাতে নেয়ার কথা জানিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, আমরা সরকারের কাছে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছি। এটি বাস্তবায়িত হলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান বাড়বে।
শিক্ষাবিদ তহমিনা বেগম জানান, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে বেরিয়ে আসতে হবে। শিক্ষকদের বেশি করে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাদের জন্য আলাদা শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে।
তিনি জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার কারণ একই ক্যাচমেন্টে একাধিক কিন্ডারগার্টেন ও এনজিও স্কুল গড়ে ওঠা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দীর্ঘ সময়, স্কুল ফিডিং কার্যক্রম বন্ধ, গ্রামাঞ্চলের অভিভাবকদের বড় অংশ মাদ্রাসামুখী, প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, অধিকাংশ অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব।
মন্তব্য করুন