প্রমত্তা করতোয়া এখন মরা খাল!

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : বড় বড় নদী গুলোই ছোট হতে হতে এখন খালে পরিনত হচ্ছে। আবার কোন কোন নদী মরেও গিয়েছে। তেমনি বগুড়ার অন্যতম নদী করতোয়া এখন মৃতপ্রায়। বর্তমানে করতোয়া নদী হয়েছে সরু খাল। নদীর ভিতর বর্জ্য ফেলে পানি দুষিত করার পাশাপাশি ভরাট করা হয়েছে।
এক সময় এই নদীর ওপর দিয়ে চলত মহাজনী বড় বড় নৌকা ও বড় বজরা নৌকা। নদী কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে ওঠে এই অঞ্চলে। সেই করতোয়ায় বর্ষা মৌসুমে ৩-৪ মাস কিছুটা পানি প্রবাহ থাকলেও সারাবছর করতোয়া আর নদীরূপে থাকে না। নদী তার সব রূপ-লাবণ্য হারিয়ে মরা খালে পরিণত হচ্ছে। পানিশূন্য হয়ে শুকিয়ে গেছে নদী।
এলাকার সাধারণ মানুষ নদী পারাপার হচ্ছেন পায়ে হেঁটেই। নদীর বুক জুড়ে চাষ করা হয়েছে ধান ও সরিষাসহ নানা রকম ফসল। নদীর এমন করুন দুর্দশার প্রভাব পড়েছে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর কৃষকসহ জেলে পরিবারগুলোর জীবনেও। বোরো মৌসুমে এই নদীর পানির মাধ্যমে সেচ দিয়ে এলাকার কৃষকরা তাদের জমি চাষাবাদ করতেন। কিন্তু নদীতে পানি না থাকায় কৃষকরা তাদের বোরো চাষ করতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
অপরদিকে এই করতোয়া নদীই ছিল নদী তীরবর্তী জেলে পরিবারগুলোর জীবিকা নির্বাহের অন্যতম উপায়।
জানা গেছে, শেরপুরের বারোদুয়ারি হাটের সঙ্গে বিরাট নৌ-বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে আজকের এই শেরপুর শহর। তখন নদীটি ছিল প্রশস্ত ও প্রমত্তা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দখল-দুষণে করতোয়া এখন আর সেই অবস্থানে নেই, এখন পরিণত হয়েছে মরা খালে। কৃষকরা শুকিয়ে যাওয়া নদীর তলদেশে ধান, ভুট্টা, গম, তিলসহ নানা ধরণের ফসল চাষ করেছেন।
১৯৮২ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়ে করতোয়া নদীকে খননের মাধ্যমে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহকে ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়, এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ১৯৯০ সালে পুনরায় নদীটি খনন করা হলেও পরবর্তিতে এই কার্যক্রম অব্যাহত না থাকায় বর্তমানে নদীটি মরা খালে পরিনত হয়েছে। করতোয়া নদীটি কল্যানিতে বাঙ্গালী নদীর সাথে মেশার আগ পর্যন্ত এখন নি¯প্রান রেখা।দখলবাজরা একের পর এক এলাকা দখল করে মাটি কেটে ভরাট করায় নদীর অধিকাংশ এলাকা মনে হয় এটি একটি খাল।
আরও পড়ুনশেরপুর শহরের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি গ্রামের বিভিন্ন এলাকায়ও এ দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। কোথাও কোথাও নদী ভরাট করে ফেলায় তা খালের চেয়ে সরু হয়ে গেছে। এভাবে দখল অব্যাহত থাকলে একসময় করতোয়া নদী চিরতরে হারিয়ে যাবে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন। তাই দ্রুত দখলবাজদের হাত থেকে নদীটি উদ্ধার করে স্বাভাবিক গতিপথ ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
কাশিয়াবালার রফিকুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, করতোয়া নদী যেভাবে দখল হচ্ছে তাতে বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই সব কিছু তলিয়ে যায়। কেননা নদীটি ভরাট করে ফেলার কারণে অল্প পানিতেই পাড় উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। শেরুয়া গ্রামের কৃষক হবিবর রহমান জানান, করতোয়া নদীর বিভিন্ন এলাকা অবৈধ দখলদারদের দখলে চলে যাওয়ায় নদীটি আরও ক্ষীণ হয়ে গেছে। তাছাড়া নদীর বিভিন্ন এলাকায় হোটেলের বর্জ্য ও ক্ষতিকর পদার্থ ফেলা হচ্ছে। শেরপুরবাসী নদীটি খননের দাবি জানালেও আজও পুন:খনন করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিক খান বলেন, করতোয়া নদীকে রক্ষার জন্য সরকার সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। ইতিমধ্যেই বগুড়ার অংশে খননসহ তীর রক্ষার কাজ চলছে, খুব দ্রুতই শেরপুর অংশের খননসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
মন্তব্য করুন