ভিডিও বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫

পাবনার বেড়ায় পেঁয়াজ সংরক্ষণে উন্নত পদ্ধতির ঘর

পাবনার বেড়ায় পেঁয়াজ সংরক্ষণে উন্নত পদ্ধতির ঘর। ছবি : দৈনিক করতোয়া

বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি : পাবনার বেড়া উপজেলায় প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ভালো ফলন হওয়ায় এ উপজেলায়  পেঁয়াজের আবাদও দিনদিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু সনাতন পদ্ধতিতে সংরক্ষণের কারণে প্রতি বছর প্রায় ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়।

এতে কৃষকেরা চরমভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়ছেন। এমনকি পেঁয়াজ সংরক্ষণের পদ্ধতি ভালো না হওয়ায় অনেক সময় কৃষকদেরকে বাধ্য হয়ে কম দামেও পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়। কৃষকদের এই সমস্যা দূর করতে বেড়ায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পল্লীকর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় প্রোগ্রামস ফর পিপলস ডেভেলপমেন্ট (পিপিডি) সংস্থার কৃষি ইউনিট (কৃষিখাত) এগিয়ে এসেছে।

তাদের উদ্যোগে উন্নত পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ ঘর স্থাপন করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের ফলে কৃষক যেমন লাভবান হচ্ছেন তেমনি আমদানি নির্ভরতাও কমছে। উপাজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশে পাবনা জেলার অবস্থান প্রথম। এর মধ্যে এ জেলার বেড়া, সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলা পেঁয়াজের ভান্ডার বলে পরিচিত।

সরেজমিন বেড়া উপজেলার বড়শিলা গ্রামের কৃষক মোন্নাফ আলীর বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তিনি বাড়ির পাশে তার জমিতে এই ঘর নির্মাণ করেছেন। এই ঘরের দৈর্ঘ্য ১৬ ফুট, প্রস্থ ১০ ফুট ও উচ্চতা ১২ ফুট। ঘর নির্মাণে সিমেন্টের বড় ১৪ টি খুঁটি ও মাটি থেকে উপরে ৫ ফুট সিমেন্টের ১০টি খুঁটি এবং বাঁশের বাতা ও কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘরের মেঝে থেকে ৩ ফুট উচুতে ২ টি চাতাল বা মাচা তৈরি করা হয়েছে।

ঘরের নিচে আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। পেছনে ও সামনে রাখা হয়েছে ৪ টি এক্সাস্ট ফ্যান। এই ফ্যান ঘরের গরম বাতাস বের করে দেয়। ঝড়-বৃষ্টি থেকে পেঁয়াজ রক্ষা করতে চারপাশে রাখা হয়েছে ত্রিপল বা পলিথিন পেপার। এছাড়াও তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা পরিমাপের জন্য ১ টি থার্মোমিটারও রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন

বড়শিলা গ্রামের কৃষক মোন্নাফ আলী বলেন, ‘আমাদের এলাকায় প্রচুর পেঁয়াজ উৎপাদন হওয়ার পরেও আধুনিক সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে প্রতি বছর প্রায় ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যেত। এ জন্য আমরা অনেকেই মৌসুমের শুরুতে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে দিতাম। এ কারণে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য পিকেএসএফ সংস্থা পেঁয়াজ সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে।

তারা আধুনিক অথচ দেশীয় প্রযুক্তিতে আমাকে ঘর নির্মাণে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করেছে। এটি নির্মাণ করতে আমার বাঁশ, কাঠ, ঢেউটিন, সিমেন্টের পিলার, ত্রিপল, শ্রমিক খরচ লেগেছে। বর্তমানে আমি এই ঘরে দেশী তাহেরপুরী জাতের ১৫০ মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেছি। এই ঘরে ৬ থেকে ৯ মাস পেঁয়াজ ভালো থাকবে বলে আমি আশা করছি। এই ঘর নির্মাণে আমার সর্বসাকুল্যে খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে আমি উপকৃত ও লাভবান হয়েছি।’

সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে জানা যায়, এর আগে কৃষকেরা বাড়ির ঘরের চালার নিচে মাচায় পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে রাখতেন। কিন্তু চলতি বছর থেকে আধুনিক পদ্ধতির সংরক্ষণ ঘরে পেঁয়াজ মজুদ করে রাখতে শুরু করেছেন। তারা আশা করছেন এ পদ্ধতিতে আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে।


পিপিডি বেড়া শাখার কৃষি কর্মকর্তা অনুপ কুমার ঘোষ বলেন, ‘পেঁয়াজ সংরক্ষণের এই পদ্ধতিতে অল্প খরচে নিজ বাড়িতেই পেঁয়াজ রাখা যায়। এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজে ছত্রাকের উপদ্র্রব কম হয় এবং পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করায় ৬ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত পেঁয়াজের গুণাগুন ভালো থাকে। এ ছাড়া সহজেই প্রতিনিয়ত পেঁয়াজ দেখাশোনা বা নাড়াচাড়া করে পচনের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। ফলে কৃষক পরবর্তী সময়ে ভালো দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারেন।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৩২ বছর পর মধ্যরাতে জাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা

নয়াপল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশের প্রস্তুতি চূড়ান্ত

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে দুদক’র অভিযান

পাবনার বেড়ায় পেঁয়াজ সংরক্ষণে উন্নত পদ্ধতির ঘর

সিরাজগঞ্জে র‌্যাব-১২ এর অভিযানে ৫৮৭ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার ১

দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডর এসএসসি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ৫ জনকে বহিষ্কার