শুল্ক কমেছে ১০ শতাংশ
বগুড়ায় পাইকারিতে খেজুরের দাম কমলেও প্রভাব নেই খুচরা বিক্রিতে

স্টাফ রিপোর্টার : বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি কেজি খেজুরের দাম বছরের ব্যবধানে কমেছে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ। এবার ১০ শতাংশ শুল্কহার কমানোয় খেজুরের দাম কমেছে। এদিকে খুচরা দোকানে দাম কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তারা বিক্রি করছেন সেই আগের দামেই। পাইকারি এবং খুচরা বাজারে দামের তারতম্যে রমজানে খাদ্য তালিকায় সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ খেজুর নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন ক্রেতারা।
রমজানে ইফতারে খেজুর না থাকলে ইফতার পরিপূর্ণ হতে চায় না। আর তাই রমজান মাসে এর কদরও বেশি। গত দুই বছরের ব্যবধানে এবছর পণ্যটির দাম কমেছে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ। দাম কমার কারণ হিসেবে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্ককর কমানোর জন্য গত বছরের তুলনায় এবছর খেজুরের দাম কমেছে। সংশ্লিস্টরা জানান, পবিত্র রমজান মাসেই খেজুরের মূল চাহিদা থাকে।
দেশে খেজুরের চাহিদা সারাবছর থাকে প্রায় ৯০ হাজার টনের মতো। বাজারে ১৫ থেকে ২০ রকমের খেজুর পাওয়া যায়। আবার একই খেজুরের ভিন্ন ভিন্ন দাম রয়েছে। বেশিরভাগ খেজুর আমদানি করা হয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। এদিকে উত্তরাঞ্চলের মধ্যে খেজুরের সবচেয়ে বড় বাজার বগুড়ায়।
উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে ব্যবসায়ীরা এখানকার মোকাম থেকে খেজুর নিয়ে যান। বাজারে বিভিন্ন মান ও দামের খেজুর থাকলেও ইরাক থেকে আসা জাহিদী খেজুর (স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ইরাকি বস্তা খেজুর হিসেবে পরিচিত) ও দুবাই থেকে প্যাকেট খেজুরের (১০ কেজির কার্টন) চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-দাবাস, লুলু, রিজিস ও নাগাল। এছাড়া ৫ থেকে ৯ কেজির প্যাকেটে আসা বিভিন্ন খেজুর রয়েছে। এগুলো হলো মদিনা খেজুর, মরিয়ম ও তিউনিশিয়া খেজুরসহ বিভিন্ন নামের খেজুর।
ব্যবসায়ীরা জানান, কার্টন খেজুরের (প্রতি কার্টনে ১০ কেজি) দাম ও মান মাঝারি হওয়ায় এ খেজুরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। এরপরে চাহিদা রয়েছে ইরাকি বস্তা খেজুরের। গত বছর বস্তা খেজুর ১২০ টাকা কেজি দরে মোকাম থেকে বিক্রি হলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা তা বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ১৪৫ টাকা। দামি খেজুর হিসেবে পরিচিত আজওয়া, মেডজুল, মরিয়ম, আম্বর সাফাভি, খেজুরের দামও কমেছে। পাঁচ কেজি আজওয়া পাঁচ হাজার টাকা। সাফাভী বিক্রি হচ্ছে ২৫শ’ থেকে ৩৫শ’ টাকা।
আরও পড়ুনমেডজুল পাঁচ কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৩৬শ’ টাকা। মাসরু বিক্রি হচ্ছে ৩১শ’, মাবরুম বিক্রি হচ্ছে সাড়ে চার হাজার টাকা। ইরানি মরিয়ম পাঁচ কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। আর দুবাই থেকে আমদানি করা দাবাস ১০ কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৩৮শ’ টাকা। লুলু বিক্রি হচ্ছে চার হাজার টাকায়। নাগাল বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’ টাকায়। এরকম বিভিন্ন নামের বিভিন্ন দামের খেজুর পাইকারি মোকাম থেকে কিনে খুচরা বিক্রেতারা এই দামের সাথে আরও ৫০ থেকে ১শ’ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন।
বগুড়ার শহরের বিভিন্ন ফলের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বহুজাতের খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে ইরাকি জায়েদি খেজুরের। এছাড়া নিম্নবিত্তের জন্য আছে নরম বরই খেজুর। এ বছর নরম বরই খেজুর ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, জায়েদি খেজুর ৩৭০ থেকে ৩৮০, দাবাস ৪২০, আজোয়া খেজুর ৯০০ থেকে ১২শ’, মেডজল খেজুর ৯০০ থেকে ১২শ’ এবং মাবরুম খেজুর ১২শ’, সাদা খুরমা ৩৫০, লুলু ৪৬০, মাসরুখ ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে বহুল চাহিদা থাকা জায়েদি খেজুর পাইকারিতে ১০ কেজি কার্টনের দাম ১৯শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বস্তার খেজুর ১৪০ টাকা থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জায়েদি খেজুরের দাম আরও কমে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বগুড়া শহরের স্টেশন রোডের নাহিদ ফল ভান্ডারের শাওন জানান, বর্তমানে প্রতি কেজি খেজুরের দাম বছরের ব্যবধানে কমেছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। এবার ১০ শতাংশ শুল্কহার কমানোয় খেজুরের দাম কমেছে, আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। দাম নিয়ে সবাই শুধু ব্যবসায়ীদের দোষ দেন। কিন্তু এবার সরকার যেভাবে মনিটরিংয়ে রেখেছে তাতে দাম বাড়ার কোনো সুযোগ নেই।
বগুড়া ফল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা জানান, আমদানিকারকদের সিন্ডিকেটের জন্য এখনও সেইভাবে খেজুরের দাম কমেনি। তবে আশা করছি, ভোক্তারা গত বছরের চেয়ে এবছর কম দামে পণ্যটি রোজায় তাদের পাতে রাখতে পারবেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ হোসেন জানান, অচিরেই খেজুরের খুচরা বাজার তদারকির জন্য ভ্রম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
মন্তব্য করুন