ভিডিও রবিবার, ১১ মে ২০২৫

মাহে রমজানের রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত

মাহে রমজানের রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত

”মাহে রমজান এলো বছর ঘুরে, মু‘মিন মুসলমানের দ্বারে দ্বারে। রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের পয়গাম নিয়ে।” মাহে রমজানের রোজা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি ¯তম্ভ, মুসলিম সমাজের ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধির স্মারক, গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত।

আল্লাহর নৈকট্য লাভের উত্তম উপায়। ইসলামী জীবন দর্শনে সিয়াম এক অনন্য মর্যাদার অধিকারী। ইহা মানুষকে ত্যাগী, সংযমী ও আত্মসংবরণের প্রতি অনুপ্রাণিত করে। রোজার ফরযিয়্যাত কুরআন, হাদীস ও ইজমা দ্বারা সুপ্রতিষ্ঠিত। উম্মতে মোহাম্মদীর উপর রমযানের রোযা ফরজ হয় দ্বিতীয় হিজরিতে।

সাওম বা রোজার সংজ্ঞা : সাওম ও রমজান শব্দ দুটি আরবী। এর ফার্সি শব্দ রোজা। আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এর অর্থ হচ্ছে, যে কোন বিষয় ও কাজ থেকে বিরত থাকা, সংযত হওয়া, উপবাস করা, কঠোর সাধনা, অবিরাম চেষ্টা প্রভৃতি। ইসলামী শরীআতের পরিভাষায়, সাওম বা রোজা বলা হয়, আল্লাহর নির্দেশ পালন ও তাঁর সন্তুষ্টি লাভের নিয়তে সুবহি সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার ও ইন্দ্রীয় কামনা বাসনা হতে বিরত থাকার নাম সাওম বা রোজা।

রোজার গুরুত্ব : রমজানের পূর্ণমাস একজন বালেগ, সুস্থ ও বিবেকবান মুসলমানের ওপর সাওম পালন ফরজ। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন , “হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর।

যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।” (সূরা বাকারা ২ ঃ ১৮৩) হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে : আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন , ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে পাঁচটি। যথা- সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর রাসুল, সালাত কায়েম করা, জাকাত আদায় করা, বাইতুল্লায় হজ্জ করা এবং রমজানের সিয়াম পালন করা। (বুখারী, মুসলিম- ঈমান অধ্যায়)

 
রোজার উদ্দেশ্য : পূর্বে বর্ণিত (সূরা বাকারার ১৮৩নং) আয়াতে আমরা সিয়ামের উদ্দেশ্য পেয়েছি। আর তা হলো, সিয়ামের মাধ্যমে তাকওয়া ভিত্তিক জীবন গড়ে তোলা । কারণ তাকওয়া অর্জন করতে পারলে একজন মানুষ খাঁটি মুমিন হতে পারে। যাবতীয় পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে। আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করল অথচ মিথ্যা কথা ও খারাপ কাজ পরিহার করতে পারল না, তার পানাহার ত্যাগ করা আল্লাহর প্রয়োজন নেই। (বুখারী, সিয়াম অধ্যায়) ।

আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম নয়, বরং অনর্থক ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম। যদি কেহ তোমার সাথে ঝগড়া-বিবাদ করে অথবা মূর্খতাপূর্ণ আচরণ করে তাহলে তুমি তাকে বলবে যে, আমি একজন সায়েম (রোজাদার)।”। (সহীহ্ ইবনে খুযাইমা- সিয়াম অধ্যায়) পৃঃ ০১  রোজা ফরজ হওয়ার শর্তাবলী : নিম্নে বর্ণিত শর্ত সাপেক্ষে সাওম পালন করা ফরজ।

যথাঃ (১) মুসলমান হওয়া। ( ২) প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া। (৩) বুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া। সুতরাং কোন অমুসলিম, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও পাগলের উপর সাওম পালন ফরজ নয়। তাছাড়া অসুস্থ ও মুসাফির ব্যক্তির জন্য রমজান মাসে সাওম পালন কষ্টকর হলে ইসলামি শরিয়তে পরবর্তীতে তা আদায় করার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

রমজান মাস ও রোজার ফজিলত : সিয়ামের ফজিলত সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসুল (স:) বলেছেন, জান্নাতের মধ্যে “রাইয়্যান” নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কেবলমাত্র রোজাদার বান্দারাই প্রবেশ করতে পারবে। (মিশকাত-১৭৩) রাসুল (স:) বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ, এক) ইফতারের মুহূর্ত। দুই) তাঁর প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের সময়।

রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশকের সুঘ্রাণের চেয়ে প্রিয়।’ আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে করীম (সাঃ) ঘোষণা করেছেন, যে লোক রমযান মাসের সাওম পালন করবে ঈমান ও চেতনা সহকারে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করা হবে। (বুখারী, মুসলিম- সাওম অধ্যায়) রামাজানুল মুবারক মাসের ফজিলত অনেক। এ মাসটি কুরআন নাযিলের মাস। অন্যান্য আসমানী গ্রন্থও এ মাসে অবতীর্ণ হয়। এ মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করা হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয় এবং শয়তানকে শৃংখলিত রাখা হয়।

এ সম্পর্কে আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যখন রমজান মাস আসে তখন জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে আবদ্ধ করা হয়। (বুখারী ও মুসলিম, সিয়াম অধ্যায়) রোজাদারের জন্য এর চেয়ে উত্তম পাওয়ার কিছুই হতে পারে না যে, রমজান মাসে রোজাদারের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে এবং তাঁর জন্য সকল প্রকার ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণের দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হবে।

এ মাসের বিশেষ একটি ইবাদত হল, সালাতুত তারাবীহ। এ সম্পর্কে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রমজান মাসে রাত্রিকালে জেগে থেকে দীর্ঘ সময় সালাত আদায় করে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হয়।’’ (বুখারী ২য় খন্ড, ১৭৬৬ হাঃ) কুরআন নাযিলের এই মাসে আমাদের বেশি করে কুরআন অধ্যায়ন ও দান-সাদকা করা উচিত।

কারণ, হাদিস শরিফে রয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল (স:) দানশীলতায় সবচেয়ে বেশী অগ্রগামী ছিলেন। আর অন্য সময়ের চেয়ে রমজান মাসে তাঁর দানশীলতা অধিক হতো। সকল মুসলমান বিশ্ববাসীর উচিত হবে, পবিত্র মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষার মাধ্যমে সিয়াম সাধনায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করা। মহান আল্লাহ আমাদেরকে মাহে রমজানের প্রতিটি রোযা পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

 
লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
সিনিয়র শিক্ষক, বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ

mdjaher@gmail.com

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ

যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে, মুজিববাদী বামদের মাফ নাই: উপদেষ্টা মাহফুজ

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় দস্যুতা ও প্রতারণা মামলার আসামিসহ গ্রেফতার চার

বগুড়ার গাবতলীর পদ্মপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন দেশ সেরা

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় ছাত্রলীগ সমর্থক সজিবের বিরুদ্ধে নাশকতা মামলা, জুলাই গেজেটে নাম প্রকাশ

নিষিদ্ধ হলো আওয়ামী লীগের কার্যক্রম