কিছুতেই যেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না দেশের বায়ুদূষণ পরিস্থিতি। বায়ুদূষণের শিকার শহরগুলোর তালিকায় ঘুরেফিরে শীর্ষে আসে রাজধানী ঢাকা। স্বাভাবিকভাবেই এটা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, যখন বিশেষজ্ঞরা বলছে-মূলত চার কারণে এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন রাজধানীবাসী-তখন তা আমলে নেওয়া অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়।
প্রথমত, পুরনো যানবাহনের আধিক্য। দ্বিতীয়ত, অপরিকল্পিতভাবে শহরের যেখানে সেখানে রাস্তা খোঁড়াখুড়ি ও উন্নয়ন কাজ। তৃতীয়ত, শহরের ভেতরে যে ময়লা-আবর্জনা জমে সেগুলো পোড়ানোর ধোঁয়া-এই কারণগুলোই আলোচনায় এসেছে। এছাড়া বিগত আওয়ামী সরকার এ নিয়ে কোনো কর্ণপাতই করেনি ফলে এই পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
স্মর্তব্য, ২০২২ সালে দূষিত বায়ুর দেশের এক তালিকায় প্রথমেই উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। বায়ুদূষণ এবং পরিশোষণ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা সুইস সংস্থা আইকিউ এয়ারের তখনকার প্রকাশিত একটি রিপোর্টে এ তথ্য জানা গিয়েছিল। বাতাসের মধ্যে পিএমএম-২.৫ নামে পরিচিত এক ধরনের পার্টিকল বা সুক্ষ্ম কণার উপস্থিতি হিসাব করে এ রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছিল।
এতে বলা হয়েছিল, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার বাতাসের মান বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ এবং সবচেয়ে দূষিত ৫০টি শহরের মধ্যে ৪৬টিই এই অঞ্চলে। ২০২১ সালে বাংলাদেশের প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে পিএম-২.৫ এর গড় মাত্রা ছিল ৬৭.৯ মাইক্রোগ্রাম।
বায়ুদূষণ কমাতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়টি সামনে এলে তা আশাব্যঞ্জক। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, আগামী শীত মৌসুম শুরুর আগেই সরকার ঢাকায় বায়ুদূষণ কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে উল্লেখ করে পরিবেশ ও পানি উপদেষ্টা সৈয়দা
রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে ঢাকার চারপাশের অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করাসহ বায়ুদূষণ রোধের ব্যবস্থা না করে নতুন ভবন নির্মাণের লাইসেন্স দেওয়া হবে না। খোলা ট্রাকে বালু বা ইট বহন করা যাবে না।
প্রসঙ্গত বলা দরকার, বায়ুদূষণ সূচক (একিউআই) তৈরি করেছে মার্কিন পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা। ছয়টি ক্যাটাগরিতে ভাল করা হয় একিউআইকে।
বাতাসে দৃশ্যমান ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতির বিবেচনায় এসব ক্যাটাগরি নির্ধারিত হয়। একিউআইয়ের মান ৩০০-এর ওপরে উঠলে তা বিপজ্জনক বলে ধরা হয় আর ৫০-এর নিচে থাকলে তা স্বাস্থ্যকর বলে ধরা হয়। যথাসময়ে বাতাসের মান পর্যবেক্ষণ করে তালিকা প্রকাশ করে থাকে মার্কিন এই সংস্থাটি। আমরা মনে করি, দূষিত শহর হিসেবে যে চিত্র সামনে এসেছে তা উদ্বেগজনক।
ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর। নোংরা শহর, ব্যাপক যানজটে জনজীবন বিপর্যস্ত, দূষণ, অনিরাপদ, বসবাসের অযোগ্য শহর-এ ধরনের নেতিবাচক অভিধা প্রায় প্রতিবছরই কপালে জুটছে জনবহুল এই মেগাসিটির। ফলে এ থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হবে।
বলাই বাহুল্য, একটি দেশের রাজধানী যদি দূষিত শহরের তালিকায় সামনের দিকে থাকে তবে তা কোনোভাবেই সহজ করে দেখা যাবে না। দূষণের কবল থেকে রাজধানীকে রক্ষা করতে সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
যেখানে পরিবেশদূষণ সমস্যা নিয়ে আজ সারাবিশ্বই চিন্তিত। সভ্যতার অস্তিত্বই আজ এ সংকটের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যে যে কোনো মূল্যে পরিবেশ দূষণ রোধ করার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ কাজ, তীব্র যানজট, মেয়াদোত্তীর্ণ মোটরযান ও শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত ভারী ধাতু ধুলার সঙ্গে যোগ হচ্ছে।
এর ফলে রাস্তঘাট বা খোলা স্থান ছাড়াও বাড়িঘর, অফিস-আদালত, হাসপাতাল, শ্রেণিকক্ষ ও খেলার মাঠেও বাতাসে ক্ষতিকর অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণার উপস্থিতি দেখা দিয়েছে। যতদিন পর্যন্ত আমরা সু-শৃঙ্খল না হব, ততদিন আমাদের দেশ পরিচ্ছন্ন হবে না।
আমাদের পরিকল্পনাবিদরা পরিবেশ উন্নয়নের দিকে আরও কিছুটা মনোযোগী হবেন এবং ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর বাতাস বিষমুক্ত করতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করার পরিকল্পনা নেবেন। তবেই যদি দূষণ কমে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।