বগুড়ায় রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পর্শে দুর্ঘটনায় আহত নতুন ২ জন হাসপাতালে ভর্তি
স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়া শহরের সেউজগাড়ী ইসকন মন্দির থেকে বে’র হওয়া রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পর্শে আহত আরও দুই জনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার দিন ভর্তি হওয়া আহতদের মধ্যে আরও দুই জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ণ এন্ড প্লাষ্টিক সার্জারী ইন্সস্টিটিউশনে রেফার্ড করা হয়েছে। তারা হলেন শিলা সরকার (৪৫) ও সুস্মিতা(১২)।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ(শজিমেক) হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানাগেছে।
নতুন করে ভর্তি হওয়া আহতরা হলো, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ধোড়া গ্রামের সুকোমল এর শিশু কন্যা শুভ্রা (১১) ও শাজাহানপুর উপজেলার মাদলা গ্রামের ধীরেন এর স্ত্রী ডলি রাণী (৩০)। আহত ডলি রাণী জানান, তিনি তার স্বামী ও শিশু পুত্রসহ সেদিন রথযাত্রা উৎসবে যোগ দেন। বিদ্যুৎস্পর্শে তিনি গুরুতর আহত হলেও তার স্বামী এবং শিশু সন্তান তেমন আহত হননি। তবে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও সন্তানের কান্নকাটি দেখে বেডে না থেকে তিনি বাড়িতে চলে যান। পরে তার পুড়ে যাওয়া স্থানগুলোতে ইনফেকশন দেখা দিলে আবারও বুধবার বিকেলে বাধ্য হয়ে তিনি হাসপাতারে ভর্তি হন। আজ বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশু শুভ্রার বাবা সুকোমল ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ঐ দিন তিনি তার স্ত্রী গৌরী রাণী ও মেয়ে শুভ্রাকে নিয়ে রথযাত্রা উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন। রথযাত্রাকালে আকস্মিক বিদ্যুৎস্পর্শে তাদের তিনজনেরই শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে ক্ষত হয়ে যায়। তার স্ত্রী গৌরী রাণী প্রায় ৪০ মিনিট অজ্ঞান অবস্থায় ছিলেন। তাকে শজিমেক হাসপাতালে নিয়ে এলে তার জ্ঞান ফিরে আসে। তবে হাসপাতালে প্রচুর রোগি ও মৃত ব্যক্তিদের দেখে তারা ভয় পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বাড়িতে চলে যান। বাড়িতে গিয়ে তারা টোটকা চিকিৎসা নিলেও মেয়ের পুড়িয়ে যাওয়া পা খারাপ অবস্থার দিকে গেলে তারা আজ বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) হাসপাতালে ভর্তি করে দেন।
ঘটনার দিন রাতেই ঢাকায় স্থানান্তর করা দুইজনের মধ্যে রঞ্জন পালের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে তাকে আইসিইউ থেকে বেডে স্থানান্তর করা হয়। আর চন্দন দেব কে এখনও লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তার ছেলে পরাগ দেব আজ বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যায় জানান, তার বাবার শরীরে ড্রেসিং করা হলেও তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। গতকাল নতুন করে ঢাকায় রেফার্ড করা সুস্মিতার বাবার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার মেয়েকে নিয়ে তিনি ঢাকার পথে রয়েছেন। এদিকে ঘটনার দিন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কৃষ্ণা রাণী সরকার, শিবাণী সাহা, জ্যোৎস্না রাণী পাল, সীমা রাণী বাঁশফোর ও নিপা রাণী এই ৫ জনের স্বজনরা জানায়, তারা ইসকনের সহায়তা পেলেও জেলা প্রশাসনের সহায়তা এখনও পাননি।
অপর দিকে নতুন করে ভর্তি হওয়া ডলি রাণী ও শুভ্রার পরিবারের সদস্যরা জানান, একই ঘটনায় যারা আগে ভর্তি হয়েছে তারা সরকারি ও ইসকনের সহায়তা পেয়েছে। তাদের পরিবারগুলো অস্বচ্ছল হওয়ায় চিকিৎসা খরচ চালিয়ে চালিয়ে যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় তারা চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা কামনা করেছেন।
গত রোববার বিকেলে বগুড়া শহরের সেউজগাড়ী ইসকন মন্দির থেকে রথযাত্রা নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সেউজগাড়ি আমতলায় পৌছালে রথের চূড়ায় থাকা ধাতব দ্রব্যের সাথে বৈদ্যুতিক তার জড়িয়ে বিদ্যুতায়িত হয়। এ ঘটনায় ৫ জন নিহতসহ প্রায় অর্ধশত আহত হন। তাদের মধ্যে বর্তমানে ২৭ জন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ(শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ ছাড়া আহতদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা গুরুতর হলে ওই রাতেই রঞ্জন পাল ও চন্দন দেবকে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ণ এন্ড প্লাষ্টিক সার্জারী ইন্সস্টিটিউশনে স্থানান্তর করা হয়।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. মো: আব্দুল ওয়াদুদ জানান, ওই দুর্ঘটনায় আহত সুস্মিতা নামের এক শিশুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আজ বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইন্সস্টিটিউশনে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন