বগুড়ায় অটিজম ও এনডিডি সেবাদান কেন্দ্রে দেড় বছরে সেবা নিয়েছে ১১ শতাধিক রোগী
স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ার বনানীস্থ অটিজম ও এনডিডি সেবাদান কেন্দ্রে গত দেড় বছরে সাড়ে ১১শ’ অটিজম আক্রান্ত, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পলসি, মানসিক অসুস্থতা জনিত প্রতিবন্ধীতা, বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধীতাসহ প্রতিবন্ধী শিশু ও ব্যক্তি ফ্রি চিকিৎসা গ্রহণ করে অনেকেই স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছেন।
এ ছাড়াও শারিরীক প্রতিবন্ধী, স্ট্রোক, বাক প্রতিবন্ধী এবং অন্যান্য ব্যাথার রোগিরাও চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছেন। গত বছরের জুন মাস থেকে বগুড়া শহরতলীর বনানীতে এ সেবাদান কেন্দ্রটি চালু হলে ওই বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেবা নিতে এ কেন্দ্রে আসেন ৫৩৮ জন আর গত জানুয়ারী থেকে এ পর্যন্ত ৬১০ জন রোগি সেবা নিচ্ছেন।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট পরিচালিত অটিজম ও এনডিডি সেবাদান কেন্দ্র বগুড়ার সহকারি পরিচালক মো: সোহরাব হোসেন এসব তথ্য জানান। বগুড়া সদরের সাবগ্রাম মাস্টারপাড়া এলাকার রোজামনি(৬) সেরিব্রাল পলসি রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা গ্রহণ করে। তার হাঁটার ক্ষমতা এমনকি দাঁড়িয়ে থাকার মত অবস্থায় সে ছিল না। এ ছাড়া পড়া-শুনার বিষয়ে সে একেবারেই অক্ষম ছিল।
গত আড়াই মাস যাবৎ এ কেন্দ্র থেকে সেবা নিয়ে সে বর্তমানে দাঁড়াতে এবং একা একা হাঁটতের পারছে। বর্তমানে তাকে বিভিন্ন বিষয়ে মুখস্ত করার পদ্ধতি শেখানো হচ্ছে বলে জানান সাইকোলজি বিভাগের এসেসমেন্ট টুলস্ আরিলুন নাহার আন্নি। রোজামনি’র মা জানান, তার জন্মের সময় তাকে নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করায় অনেক সময় পেরিয়ে যায়।
জন্মের পর দেড় বছর বয়সে পরিবারের লোকজনের কাছে তার কথা বলতে না পারা, দাঁড়িয়ে থাকতে না পারা এবং হাঁটতে না পারা’র বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর দুই বছর সিআরপি’তে চিকিৎসা নেয়ার পর ওর বয়স যখন সাড়ে ৩ বছর তখন থেকে সে কথা বলতে পারে।
এ কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা সাবগ্রাম উত্তর পাড়ার আরমান সাদাতের(৬) মা জানান, তার ছেলের জন্মের সময় তার হাই প্রেসার ছিল। আর প্রেসার স্বাভাবিক হতে সময় অতিবাহিত হয়েছে। শিশুটির জন্মের ৩ দিন পর তার খিচুনী দেখা দেয়। এরপর শিশুটির বয়স যখন ৭ মাস সে সময় আবারও তার খিচুনী শুরু হয়।
আরও পড়ুনগত চার মাস যাবৎ এ কেন্দ্রে তার ছেলে শিশুটির সেবা নেয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এরআগে শিশুটি হাঁটতে গেলে ব্যালান্স পেতো না, চেয়ে থাকতে পারতো না, হাত দিয়ে শক্ত কিছু ধরতে পারতো না এবং কথা বলতো ইশারায়। বর্তমানে সে একা একা হাঁটতে, হাত দিয়ে কোন কিছু শক্ত ধরতে ধরতে পারছে এবং একটু একটু কথাও বলতে পারছে।
জানা গেছে, অটিজম ও এনডিডি সেবাদান কেন্দ্র বগুড়ায় জনবল হিসেবে রয়েছেন সহকারি পরিচালক পদ মর্যাদার একজন কর্মকর্তার তত্বাবধানে একজন চিকিৎসকসহ ফিজিও থেরাপি , সাইকোলজি ও মেডিসিন কনসালটেন্ট ৩ জন, ফিজিও থেরাপি টেকনিশিয়ান ২ জন, স্পীচ ল্যাঙ্গুয়েজ টেকনিশিয়ান ২ জন, অকুপেশনাল থেরাপি টেকনিশিয়ান ২ জন, সেবিকা ১ জন, অফিস সহকারি ১ জন, অফিস সহায়ক ১ জন, পরিচ্ছন্নতা কর্মি ১ জন , গার্ড ১ জন ও গাড়ি চালক ১ জন। ছুটির দিন ব্যতিত এ কেন্দ্রে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত সেবা প্রদান এবং অতি দরিদ্রদের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রদান করা হয়ে থাকে।
সেবা কেন্দে তত্বাবধায়ক, সহকারি পরিচালক মো: সোহরাব হোসেন বলেন, সরকারি খরচে এ কেন্দ্রে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও অভিজ্ঞ জনবল দ্বারা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার, ডাউন সিনড্রম, সেরিব্রাল পলসি, বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা, মানসিক অসুস্থতা প্রতিবন্ধীতা শিশুদের সেবা প্রদান ছাড়াও শিশুদের দাঁতের সমস্যার পরামর্শ, শিশুদের সাধারণ রোগ বিশেষ করে খিচুনী, সর্দি-কাশি, হঁঅপানী, জ্বর, শরীর ব্যথা, চর্মরোগ, ডায়রিয়াজনিত রোগের চিকিৎসা ও পরামর্শ এবং শিশুদের স্বাভাবিক জীবর ধারণের উদ্দেশ্যে রোগের ধরন বিবেচনা করে উপযুক্ত রিহ্যাবিলেটেশন চিকিৎসকের কাছে প্রেরণ করা হয়।
এ ছাড়াও যানবাহনের মাধ্যমে শিশুদের নিয়ে আসা এবং পৌছে দেয়া, নাস্তা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রদান করা হয়ে থাকে। এ সেবা কেন্দ্র থেকে সেবা নিয়ে সুমাইয়া নামে এক প্রতিবন্ধী নারী সুস্থ হওয়ার পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বর্তমানে স্বামীর সংসার করছেন।
মন্তব্য করুন







