স্পোর্টস ডেস্কঃ আর্জেন্টিনার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) দীর্ঘদিনের ম্যানেজার এবং লিওনেল মেসিকে আকাশী-সাদা জার্সিতে নিয়ে আসার অন্যতম নেপথ্য নায়ক ওমর সৌতো আর নেই।
গত রোববার (২৩ নভেম্বর) ৭৩ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি। ইন্টার মায়ামির হয়ে সিনসিনাটির বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পরপরই এই শোক সংবাদ পান মেসি। প্রিয় মানুষের বিদায়ে সোমবার ইনস্টাগ্রামে এক আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।
মেসির আবেগঘন বার্তা ওমর সৌতোর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মেসি লিখেছেন, ‘আপনি সবসময় পাশে ছিলেন এবং আপনিই সেই ব্যক্তি যিনি এএফএ-কে আমার দিকে তাকাতে বাধ্য করেছিলেন। একজন অসাধারণ মানুষ; জাতীয় দলের হয়ে খেলার সৌভাগ্য আমাদের যাদের হয়েছে, তাদের পক্ষে আপনাকে ভুলে যাওয়া অসম্ভব। আপনার স্মৃতি চিরজাগরূক থাকবে। আমরা আপনাকে কখনই ভুলব না, ওমর। শান্তিতে ঘুমান।’
মেসিকে খুঁজে বের করার গল্প স্পেন না আর্জেন্টিনা—মেসি কোন দেশের হয়ে খেলবেন, তা নিয়ে একসময় ছিল ধোঁয়াশা। তৎকালীন এএফএ সভাপতি জুলিও গ্রান্দোনাকে হুগো তোকালি বলেছিলেন, ‘স্পেনে এক বিস্ময়কর প্রতিভা আছে। তাকে টিকিট কেটে এখানে এনে খেলাতে হবে।’
এরপর তোকালি দায়িত্ব দেন ওমর সৌতোকে। সৌতো সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তিনি মন্তে গ্রান্দোর এক ফোন বুথে গিয়ে রোজারিও’র ফোন গাইড ঘাঁটতে শুরু করেন। তিনি ভেবেছিলেন মেসির নাম ‘লিওনার্দো’। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে প্রথমে মেসির দাদি, তারপর চাচা এবং সবশেষে মেসির বাবা হোর্হে মেসির নম্বর জোগাড় করেন। সৌতো বলেন, “মেসির বাবাকে ফোন করতেই তিনি বলেছিলেন, ‘অবশেষে আপনারা ডাকলেন! আমার ছেলে তো আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়েই খেলতে চায়।”
সেই ঐতিহাসিক ম্যাচ মেসিকে স্পেন অনূর্ধ্ব-১৭ দলে যাওয়া থেকে আটকাতে তড়িঘড়ি করে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচ আয়োজন করেন সৌতো ও তোকালি। আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের মাঠে সেই ম্যাচে ৮-০ গোলের বিশাল জয় পায় আর্জেন্টিনা। বদলি হিসেবে নেমে দুর্দান্ত এক গোল করে নিজের আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন মেসি, যা ছিল আর্জেন্টিনার জার্সিতে তার গোলের সূচনা।
শেষ শ্রদ্ধা মৃত্যুর কয়েকমাস আগে, গত অক্টোবরে এএফএ-এর সাধারণ সভায় ওমর সৌতোকে বিশেষ সম্মাননা জানানো হয়। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, স্পেনের হাজারো প্রস্তাব সত্ত্বেও মেসি সবসময় আর্জেন্টিনার হয়েই খেলতে চেয়েছেন।’
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এএফএ-কে সেবা দেওয়া এই সংগঠকের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ আর্জেন্টিনার ফুটবল অঙ্গন।