অন্তর্বর্তী সরকারের বন্দর বা এলডিসি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার নেই : তারেক রহমান
অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের বন্দর বা এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের মতো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি লিখেছেন, দেশের ভবিষ্যৎ এমন সরকারের হাতে বন্দি থাকা উচিত নয়, যাকে এই জাতি নির্বাচিত করেনি। এই সরকার এমন দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যা দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে দশকের পর দশক প্রভাবিত করবে।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাতে নিজের ফেসবুক পোস্টে তারেক রহমান স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উত্তরণ বা বন্দরগুলোর সংস্কারের সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকার নেবে মন্তব্য করে তারেক রহমান লিখেছেন, একটা বিষয় স্পষ্ট করে বলি-এটা কোনো ব্যক্তিকে আক্রমণ নয়। এটি প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করা এবং এই নীতিকে রক্ষা করা। দেশের ভবিষ্যৎকে দশকের পর দশক প্রভাবিত করতে পারে; এমন সিদ্ধান্ত নেবে সেই সরকার যার জনগণের কাছে জবাবদিহি রয়েছে। তিনি লিখেছেন, কেউ বলছে না যে, আমাদের এলডিসি থেকে উত্তীর্ণ হওয়া উচিত নয় বা বন্দর সংস্কার করা উচিত নয়। যুক্তিটা খুবই সহজ ও মৌলিক-একটি দেশের ভবিষ্যৎ এমন সরকারের হাতে বন্দি থাকা উচিত নয়, যাকে এই জাতি নির্বাচিত করেনি। বাংলাদেশের এলডিসি উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে যে বিতর্ক তা সরকারি বিবৃতির চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান।
তিনি লিখেছেন, বিএনপি আগে থেকেই বলে আসছে, ২০২৬ সালে উত্তীর্ণ হওয়ার সময় ঠিক রেখে স্থগিতের বিকল্প খোলা না রাখার মতো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক একটি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার কোনো নির্বাচনী ম্যান্ডেট নেই। তারপরও এই সরকার এমন দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যা দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে দশকের পর দশক প্রভাবিত করবে। তারেক রহমান লিখেছেন, অ্যাঙ্গোলা ও সামোয়ার মতো দেশ তাদের উত্তীর্ণ হওয়ার সময় সংশোধন করেছে। জাতিসংঘের নিয়মই বলে, কোনো দেশ অর্থনৈতিক ধাক্কায় পড়লে এই সময় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। দেশের ভবিষ্যৎ বদলে দেবে এমন সিদ্ধান্তে সময় চাওয়াটাই একটি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীল পদক্ষেপ হওয়া উচিত।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লিখেছেন, আমরা কেন ভান ধরছি যে আমাদের কোনো বিকল্প নেই? কেন আমরা নিজেরাই নিজেদের ভবিষ্যৎ সীমাবদ্ধ করছি? স্থগিতের বিকল্প প্রকাশ্যে বন্ধ করে দিয়ে আমরা নিজেরাই আলোচনা করার ক্ষমতা দুর্বল করছি। আন্তর্জাতিক আলোচনায় আমরা প্রভাব খাটানোর সুযোগ হাতছাড়া করে আগেই দুর্বল অবস্থান থেকে টেবিলে বসছি। তিনি লিখেছেন, সরকারের নথিতেই স্বীকার করা হয়েছে যে, ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই ব্যাংকখাতে চাপ, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, ঋণঝুঁকি বৃদ্ধি ও রপ্তানি মন্থর হয়ে যাওয়ার প্রভাব অনুভব করছেন। এটা এলডিসি উত্তরণে বিরোধিতা নয়। বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার অধিকার অর্জন করেছে। কিন্তু ‘অধিকার’ থাকা আর ‘প্রস্তুত’ থাকা এক বিষয় নয়। তারেক রহমান লিখেছেন, আমার মনে হয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো সন্দেহ না থাকা মানেই সেটা প্রকৃত জাতীয় শক্তি নয়। প্রকৃত জাতীয় শক্তি হলো, অপরিবর্তনীয় কিছু হয়ে ওঠার আগেই কঠিন প্রশ্নগুলো করার সুযোগ থাকা। তিনি লিখেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে তাকান। এটা বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবেশদ্বার। সেখানে যা হয় তার প্রভাব লাখো মানুষের জীবনে অনেক গভীর প্রভাব ফেলে। বন্দরকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তগুলো কোনোভাবেই রুটিন কাজ নয়। এগুলো জাতীয় সম্পদ নিয়ে কৌশলগত অঙ্গীকার-যা একটি অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বেঁধে দেওয়ার মতো করে এগিয়ে নিচ্ছে।
তারেক রহমান লিখেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে যা দেখা যাচ্ছে, তা এলডিসি উত্তীর্ণ হওয়ার প্রক্রিয়ারই প্রতিচ্ছবি। কৌশলগত বিকল্পগুলো বন্ধ। জনআলোচনাকে ঝামেলা মনে করা হচ্ছে। যুক্তিসঙ্গত উদ্বেগকে ‘অনিবার্যতা’র কথা বলে পাশ কাটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ কখনোই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিষ্ক্রিয় ছিল না। তারা সম্মান, মত প্রকাশের অধিকার ও পছন্দের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে-এ কারণে তারা অনেক কষ্ট সহ্য করেছে ও ত্যাগ করেছে। তাদের দাবি খুবই সাধারণ-তাদের কথা শুনতে হবে, তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, তাদের সম্মান দিতে হবে।
তারেক রহমান লিখেছেন, আমাদের অনেকেই ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছি, যা বাংলাদেশের জনগণের জন্য কথা বলার, নির্বাচন করার এবং একটি সহজ সত্যকে পুনর্ব্যক্ত করার সুযোগ। এই দেশের ভবিষ্যৎ তাদের দ্বারাই গড়ে তোলা উচিত যারা এখানে বাস করে এবং ‘সবার আগে বাংলাদেশ’-এ বিশ্বাস করে।
মন্তব্য করুন

নিউজ ডেস্ক








