ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মামলার রায়, অপেক্ষায় দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীরা
জুলাই গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আজ রায় ঘোষণা করা হবে। ঐতিহাসিক এ মামলার খবর সংগ্রহের জন্য ভোর থেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ভিড় জমিয়েছেন বাংলাদেশের সব গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা।
রয়টার্স, এপি, এএফপি, আল জাজিরা, বিবিসি ওয়াল্ডসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহের জন্য ভিড় করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মাসউদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে। এ কারণেই বিশ্বের সব গণমাধ্যমের চোখ আজ ট্রাইব্যুনালের দিকে। আন্তর্জাতিক সব গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা ট্রাইব্যুনালে সংবাদ সংগ্রহ করতে এসেছেন। এদিকে রয়টার্সে সরাসরি এই বিচারকাজ সম্প্রচার করা হবে বলে জানা গেছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা উপলক্ষে ট্রাইব্যুনাল এলাকা কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।
শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় বাড়ানো হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। পুলিশ-র্যাব, এপিবিএন-বিজিবির পাশাপাশি নিয়োজিত রয়েছে সেনাবাহিনী। তৎপর গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও। নিরাপত্তার স্বার্থে রোববার সন্ধ্যার পর থেকেই দোয়েল চত্ত্বর হয়ে শিক্ষাভবনমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সীমিত করা হয়েছে জনসাধারণের চলাচলও।
গত ১৩ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন নির্ধারণ করেন। ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন— বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আরও পড়ুন
শেখ হাসিনার এ মামলায় মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য-জেরা শেষ হয়। আর ৯ কার্যদিনে চলে প্রসিকিউশন-স্টেট ডিফেন্সের যুক্তিতর্ক পাল্টা যুক্তিখণ্ডন। ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রের প্রধান আইনকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের সমাপনী বক্তব্য এবং চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেনের যুক্তিখণ্ডন শেষে রায়ের তারিখ নির্ধারণে সময় দেওয়া হয়।
যুক্তিতর্কে শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছে প্রসিকিউশন। তবে রাজসাক্ষী হওয়ায় মামলার অন্যতম আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও তার খালাস চেয়েছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ। হাসিনা-কামালও খালাস পাবেন বলে দৃঢ় বিশ্বাস রাষ্ট্রনিযুক্ত আমির হোসেনের।
এ মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। এর মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা ও আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮৪ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
মন্তব্য করুন

নিউজ ডেস্ক








