যারা অন্ধকারে খোঁজে জীবনের আলো
বগুড়ার সোনাতলায় জেলে পরিবারের সব খরচই যেন যমুনা নদীর দান
বদিউদ-জ্জামান মুকুল, সোনাতলা (বগুড়া) প্রতিনিধি : যমুনার ঢেউ যেন শুধু নদীর জলরাশি নয়, এ নদী বয়ে নিয়ে যায় বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার হাজারো জেলের জীবন ও স্বপ্ন। সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়লেই নদীপাড়ে শুরু হয় এক ভিন্ন ব্যস্ততা। কেউ জাল মেরামত করছে, কেউ নৌকার পাল ঠিক করছে, কেউ আবার স্রোতের দিক দেখে বোঝার চেষ্টা করছে কোথায় মাছ ধরলে ভাগ্য খোলে।
সন্ধ্যা নামতেই জেলেরা ছোট ছোট নৌকা নিয়ে নেমে পড়েন নদীর গভীরে। অন্ধকার, স্রোত আর ঠান্ডা হাওয়ার সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে তাদের। রাতভর চলে সংগ্রাম, কখনো জাল টানার শব্দ, কখনো দূরের নৌকার লন্ঠনের ক্ষীণ আলোয় নদী জীবনের নিঃশব্দ সৌন্দর্য্য ভেসে ওঠে। ভোরের আলো ফুটতেই তারা ফিরে আসেন তীরে। যতটুকু মাছ মেলে, তা বিক্রি হয় সোনাতলার হলিদাবগা বাঙালির হাটের আড়তে; সেই টাকাতেই চলে তাদের সংসার- চাল, ডাল, তেল, নুন, সন্তানের খরচ সবই নদীর দান।
চরপাড়া মাঝিপাড়ার জেলে পরিবারের সদস্য বীরেন চন্দ্র রায় বলেন, ‘বাপ-দাদারা যমুনা, বাঙালি ও সুখদহ নদীতে মাছ ধরেই জীবন চালিয়েছে, আমিও তাই করি। বিকেলেই জাল গুছিয়ে নিই, সন্ধ্যায় নৌকা নামাই। আল্লাহ যেভাবে রিজিক দেন, সেভাবেই চলে।’
আরও পড়ুনযমুনা ও বাঙালিতে এখনো মেলে আইড়, রুই, কাতল, বোয়াল, ইলিশসহ দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ। তবে ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে আয়-রোজগার, কখনো হাজার টাকা, কখনো পাঁচ হাজারও হয়। এ নদীই তাদের আশ্রয়, আবার কখনো শত্রু।
বন্যার সময় ঘরবাড়ি ভেসে যায়, জাল নষ্ট হয়, তবু তারা থেমে থাকে না। যমুনার স্রোতের মতোই তাদের জীবন চলে নিরবচ্ছিন্ন ছন্দে। যখন শহরের মানুষ রাতের বিশ্রামে যায়, তখনই যমুনার বুকে জেগে ওঠে জীবন আর সংগ্রামের নতুন গল্প-একদল জেলের, যারা অন্ধকারেও খোঁজে জীবনের আলো।
মন্তব্য করুন









