ভিডিও বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২

প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর, ২০২৫, ১০:৫২ রাত

শতবর্ষ পেরিয়ে তিস্তার ভাঙনে ছয়বার স্থান বদল সংকটে বিএসএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

শতবর্ষ পেরিয়ে তিস্তার ভাঙনে ছয়বার স্থান বদল সংকটে বিএসএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

মোঃ শাহজাহান মিঞা, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) : শত বছরেরও বেশি সময়ের সাক্ষী বিদ্যালয়টি। ব্রিটিশ শাসনামলে পথচলা শুরু, তবে আজও স্থায়ী হওয়া হলো না প্রতিষ্ঠানটির। তিস্তা নদীর প্রলয়ংকরী ভাঙনের শিকার হয়ে এ পর্যন্ত ছয়বার স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর বিএসএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯১৪ সালে স্থাপিত এই শিক্ষালয়টি বর্তমানে টিকে আছে হরিপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলে নানা সমস্যাকে সঙ্গী করে।

তিস্তা নদীর ভাঙন হরিপুর ইউনিয়নের মানুষের জীবনে এক নিত্যনৈমিত্তিক অভিশাপ। আর এর চরম মূল্য দিতে হচ্ছে এই প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকেও। স্থানীয় প্রবীণদের স্মৃতিচারণ অনুযায়ী, তিস্তার গ্রাসে একে একে বিলীন হয়েছে স্কুলের পাঁচটি ঠিকানা। প্রতি বারই নতুন করে শুরু করতে হয়েছে অস্থায়ী বা আধা-পাকা কাঠামোয়। এই স্থানান্তরের ফলে একদিকে যেমন কমেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তেমনই ব্যাহত হয়েছে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ।

বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম মোঃ জুলফিকার আলী ভূঁইয়া জানান, এটি শুধু একটি বিদ্যালয় নয়, এটি এলাকার ইতিহাস। বারবার স্থান পরিবর্তনের কারণে শিক্ষা উপকরণের অভাব, জরাজীর্ণ ভবন আর বর্ষার সময় যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতাÑএসব এখন আমাদের রোজকার সঙ্গী। তিস্তার ভাঙন মানেই আবার নতুন করে স্থান খোঁজা, নতুন করে স্বপ্ন বোনা।

বছরখানেক আগে ১৬ শতক জমিতে হরিপুর ইউনিয়নের চর মাদারীপাড়া গ্রামের চরাঞ্চলের অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে ঠাঁই পেয়েছে বিদ্যালয়টি। চরের এই প্রত্যন্ত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। বর্ষার সময় সড়কপথ ডুবে গেলে শিক্ষার্থীরা নৌকা কিংবা হাঁটু পানি মাড়িয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে আসে। অন্যদিকে ভাঙনের ভয়ে স্থায়ী ও মজবুত অবকাঠামো নির্মাণেও থাকে সংশয়।

আরও পড়ুন

ভবন না থাকায় জরাজীর্ণ একটি টিনের চালাঘরে চলছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। দেখলে বোঝা যায়, কতটা প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে টিকে আছে এটি। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের অভাব, ভালো বেঞ্চ বা চেয়ার নেই, না আছে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা, এমনকি বিশুদ্ধ পানীয় জলের সমস্যাও প্রকট। এসব সমস্যা সত্ত্বেও এলাকার ১১৯ জন কোমলমতি শিক্ষার্থীকে অক্ষরজ্ঞান দিতে শিক্ষকরা চালিয়ে যাচ্ছেন নিরলস প্রচেষ্টা।

নদীর ভাঙন থেকে এই শতবর্ষী প্রতিষ্ঠানটিকে রক্ষা করা এখন হরিপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। এলাকার সচেতন মহল মনে করেন, শিক্ষা ও ঐতিহ্যের প্রতীক এই বিদ্যালয়কে বাঁচাতে হলে নদী শাসনের স্থায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেনÑযেন নদীর স্থায়ী প্রতিরক্ষা এবং বিদ্যালয়ের জন্য একটি মজবুত ও স্থায়ী ঠিকানা নিশ্চিত করা হয়। ছয় বার স্থানান্তরিত হওয়া এই বিদ্যালয়টি যেন এবার তার কাক্সিক্ষত গন্তব্য খুঁজে পায়, যেখানে আর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ তার অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে না পারে। বিদ্যালয়টি আজ শুধু একটি শিক্ষালয় নয়, এটি তিস্তার চরের মানুষের লড়াই এবং শতবর্ষের সহনশীলতার প্রতীক।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ার সোনাতলায় ১৩৫ হেক্টর জমির ধান রক্ষায় কৃষকের প্রাণপণ চেষ্টা

মুক্ত আকাশে ডানা মেললো ছয়টি বালিহাঁস

ওএসডি হলেন নাচোলের সেই ইউএনও কামাল

গাইবান্ধার ফুলছড়িতে গরু ব্যবসায়ী খুন, আটক ১

বগুড়ায় ট্রাফিক সপ্তাহের উদ্বোধন

রিজিক বৃদ্ধির দোয়া