অবিলম্বে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশ ট্রাম্পের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনকে অবিলম্বে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মাধ্যমে ৩৩ বছর পর আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরছে দেশটি। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের কয়েক মিনিট আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামরিক বাহিনীকে এই পরীক্ষা অবিলম্বে শুরু করার নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরকে (পেন্টাগন) নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে অন্যান্য পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মতোই যুক্তরাষ্ট্রও সমানভাবে অস্ত্র পরীক্ষা শুরু করে। ট্রাম্প লিখেছেন, ‘অন্য দেশগুলো পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালাচ্ছে এবং আমি যুদ্ধ দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছি যাতে আমরাও সমান ভিত্তিতে পরীক্ষা শুরু করি। এই প্রক্রিয়া এখনই শুরু হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়া দ্বিতীয় স্থানে আছে, আর চীন অনেক পেছনে-তবে পাঁচ বছরের মধ্যেই তারা কাছাকাছি চলে আসবে।’
এ বিষয়ে তিনি আর বিস্তারিত কিছু জানাননি এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নেরও জবাব দেননি। অবশ্য ট্রাম্পের ঘোষণায় এটা স্পষ্ট নয় যে-তিনি কী পারমাণবিক বিস্ফোরণ পরীক্ষার কথা বলেছেন, নাকি পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের ফ্লাইট টেস্টের কথা বোঝাতে চেয়েছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন দ্রুত তার পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার বাড়িয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’ (সিএসআইএস)-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে ৩০০ পারমাণবিক অস্ত্র থাকা চীনের ভাণ্ডারে ২০২৫ সালে অস্ত্রের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০০টিতে। মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের ধারণা, ২০৩০ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার এক হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
এর মধ্যেই রাশিয়া সম্প্রতি পারমাণবিক শক্তিচালিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও টর্পেডোর সফল পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প এ নিয়ে মন্তব্য করে বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উচিত ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার দিকে মন দেওয়া, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নয়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বুধবার ঘোষণা দেন, তাদের ‘পোসাইডন’ নামে একটি পারমাণবিক টর্পেডোর সফল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এটি উপকূলীয় অঞ্চলে ভয়াবহ তেজস্ক্রিয় সুনামি সৃষ্টি করতে সক্ষম বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
আরও পড়ুনএছাড়া অক্টোবরের ২১ তারিখে রাশিয়া নতুন ‘বুরেভেস্তনিক’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় এবং বরে পরদিন ২২ অক্টোবর পারমাণবিক হামলার মহড়া পরিচালনা করে। এর আগে গত আগস্টে ট্রাম্প জানান, তিনি পুতিনের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে আলোচনা করেছেন এবং এতে চীনকেও যুক্ত করতে চান। তবে বেইজিং বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সঙ্গে তাদের অস্ত্রভাণ্ডার তুলনামূলক ছোট হওয়ায় এই আলোচনায় যোগ দেওয়ার দাবি ‘অবাস্তব ও অযৌক্তিক’।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালায় ১৯৯২ সালে। মূলত এ ধরনের পরীক্ষা শুধু নতুন অস্ত্রের কার্যকারিতা যাচাই নয়, পুরোনো অস্ত্রগুলো এখনও কার্যকর কি না তাও নিশ্চিত করে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন পরীক্ষা চালানো হলে তা হবে রাশিয়া ও চীনের সামনে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত শক্তি প্রদর্শনেরই ইঙ্গিত। বিশ্বে পারমাণবিক যুগের সূচনা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরেই। ১৯৪৫ সালের জুলাইয়ে নিউ মেক্সিকোর আলামোগোর্দোতে ২০ কিলোটন শক্তির পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ব পারমাণবিক যুগে পা রেখেছিল। একই বছর আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা দিয়ে হামলা চালায় এবং এর মাধ্যমেই কার্যত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে।
মন্তব্য করুন








