ভিডিও মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পাসপোর্ট ও টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ 

একমাসের ভিসা নিয়ে তিন বছর বগুড়ায় অবস্থান বিদেশি নাগরিকের

একমাসের ভিসা নিয়ে তিন বছর বগুড়ায় অবস্থান বিদেশি নাগরিকের

স্টাফ রিপোর্টার: এক মাসের ভিসা নিয়ে এসে বগুড়ায় তিন বছর ধরে অবস্থান করছেন কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের নাগরিক ভিটো বলি বোঙ্গেঙ্গে। পলাশ নামে এক পাখি ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে তিন বছর ধরে আটকা পড়ে আছেন সেখানে। তাকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে সদরের গোকুল মোড় সংলগ্ন ওই বাড়িতে। অভিযোগ উঠেছে, পাখি ব্যবসার কথা বলে তার কাছ থেকে ৭ হাজার ডলার হাতিয়ে নিয়ে তাকে নি:স্ব করে দিয়েছেন পাখি ব্যবসায়ী পলাশ।

সেইসাথে তার পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও কেড়ে নিয়েছেন তিনি। এতে মহাবিপদে পড়েছেন ওই বিদেশি।  বাংলাদেশে এসেছেন তিনি মাত্র এক মাসের টুরিস্ট ভিসা নিয়ে। কিন্তু পলাশ তাকে আটকে দেয়ায় তার ভিসার মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। তিনি এখন অবৈধ অভিবাসী। তাই কোন কুল –কিনারা পাচ্ছেন না তিনি। ফিরে যেতে চান স্ত্রী-সন্তানের কাছে। এই প্রতারণার বিষয়ে তিনি বগুড়া সদর থানায় অভিযোগও করেছেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে তার অভিযোগ।

তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলেন, বিদেশি নাগরিক ভিটোকে জিম্মি করে রাখা হয়নি। জিম্মি করলে তিনি কিভাবে থানায় এসে অভিযোগ করে গেলেন ফিরে। আসলে তার ভিসার মেয়াদ এক মাস শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন তিনি অবৈধ অভিবাসী। পাখি ব্যবসা নিয়ে পলাশের সাথে দ্বন্দ্ব রয়েছে তার। তিনি এখন এই সমস্যা থেকে বের হতে চাইছেন। ফিরতে চান দেশে। তাই কিভাবে এই সমস্যা সমাধান করা যায় সে বিষয়ে পুলিশ খতিয়ে দেখছে।

বিদেশি নাগরিক ভিটো বলেন, কঙ্গোর এভিগামার কিউ/ইলোসুড কালামু কিনসাশা গ্রামে তার বাড়ি। তার পাখির ব্যবসা রয়েছে। বৈধভাবে তিনি এ ব্যবসা করেন। কঙ্গো থেকে বিভিন্ন দেশে পাখি রপ্তানি করে তিনি আয় করেন। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশে পলাশের সাথে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে পলাশ তার কাছ থেকে অনেক বেশি দামে পাখি কিনবে বলে প্রস্তাব দেয় এবং  সেইসাথে তাকে বাংলাদেশে আসতে বলেন।

এরপর এক মাস মেয়াদি টুরিস্ট ভিসা নিয়ে ২০২২ সালের ১ নভেম্বর বাংলাদেশের ঢাকায় পা রাখেন তিনি। ঢাকায় বিমান বন্দরে আগে থেকে তার জন্য অপেক্ষা করা পলাশের সঙ্গে তার দেখা হয়। পলাশ ঢাকা থেকে তাকে বগুড়ায় তার বাড়িতে নিয়ে আসেন।

সেখানেই তিনি কিছুদিন থেকে যান এবং ব্যবসায়িক কাজ করেন। এরপর ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তিনি তার দেশে ফেরার উদ্যোগ নেন। কিন্তু পলাশ তার পাসপোর্ট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে তার বাড়িতে তাকে জিম্মি করে রাখেন এবং ৭ হাজার ডলারও  হাতিয়ে নেয়।

গত বছরের ডিসেম্বর থেকে তার স্ত্রী কঙ্গোতে বাড়ি বিক্রি করে পলাশের কাছে ডলার পাঠান। কিন্তু এসব অর্থ নেওয়ার পরও তাকে জিম্মি করে রাখে পলাশ। ভিটো আরও বলেন, এ অবস্থায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি পলাশের বাড়ি থেকে গোপনে বের হন এবং আরেক পাখি ব্যবসায়ী সোহের রানার কাছে সাহায্য চান। সোহেল তাকে বগুড়া সদর থানায় নিয়ে আসেন। তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্ত  ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

আরও পড়ুন

অপর দিকে অভিযুক্ত অতিকুর রহমান পলাশ দাবি করেছেন, ওই বিদেশি ভিটো পাখি দেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ১৭ হাজার ডলার নিয়েছে। সেই ডলারগুলো তিনি ভিটোর দেশে তার স্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন। অর্থ পেয়ে তার স্ত্রীর পাখির চালান পাঠানোর কথা। কিন্তু পাখির চালান পাঠানো হয়নি। পাখির চালান না দেয়ায় তিনি তাকে তার বাসায় রেখেছেন। তবে তাকে জিম্মি করা হয়নি। তাকে তার দেশে পাঠানোর জন্য চেষ্টা চলছে বলেও উল্লেখ করেন।

এ ব্যাপারে সদর থানার ওসি হাসান বাসির দৈনিক করতোয়া’কে বলেন, ওই বিদেশি নাগরিকের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তিনি স্ব-শরীরে থানায় এসে অভিযোগ দিয়ে গেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে থানার একজন এস আইকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন,তাকে উদ্ধারসহ পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উদ্ধারে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে জটিলতাও দেখা দিয়েছে।

তিনি এখন একজন অবৈধ অভিবাসী। ২০২২ সালের ১ নভেম্বর এক মাসের জন্য তিনি বাংলাদেশে আসেন। এক মাসের ভিসা নিয়ে তিন বছর ধরে তিনি বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন। এ ব্যাপারে ঢাকায় পুলিশের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কুটনৈতিকভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত এলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তফা মুঞ্জুর বলেন, তাকে জিম্মি করে বাড়িতে আটকে রাখার বিষয়টি সঠিক নয়, জিম্মি হয়ে আটক থাকলে তিনি স্ব শরীরে থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দিলেন কিভাবে। তবে তার কাছ থেকে পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজ কেড়ে নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে,ওই ওই বিদেশি নাগরিক একজন পাখি ব্যবসায়ী।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বগুড়ার গোকুল উত্তরপাড়ার (গোকুল মেড় সংলগ্ন) আখতারুজ্জামানের ছেলে পাখি ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান পলাশের সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র তিনি বাংলাদেশে এসে পলাশের সাথে দেখা করেন এবং একসাথে ব্যবসা শুরু করেন। পরে এই ব্যবসার  টাকা নিয়ে  তাদের মধ্যে বিরোধ বাধে।

অভিযুক্ত পলাশ তাকে জিম্মি করে পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আটকিয়ে রেখেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পলাশকে গ্রেফতারে অভিযান চলমান আছে। বিষয়টি ঢাকায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। ঢাকা থেকে সিদ্ধান্ত এলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হরে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ায় র‌্যাব-১২ এর অভিযানে ৫৫ বোতল কেরুসহ আটক ১

বগুড়ার শিবগঞ্জে ১ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক ৪ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ

দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের

চার দিন পর খাগড়াছড়িতে অবরোধ স্থগিতের ঘোষণা

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা হচ্ছে না বুলবুল-ফাহিমের, করতে হবে নির্বাচন