বগুড়ায় সাপের বিষ চোরাচালানে আন্তর্জাতিক চক্র : সোমবারের মধ্যে ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে
স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ায় উদ্ধার হওয়া সাপের বিষ আসল না নকল তা আজও অজানা। বিষ উদ্ধারের দেড় মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও তা জানা যায়নি। তবে উদ্ধার হওয়া মহামূল্যবান সাপের এই বিষ আসল না নকল তা জানতে আগামী ২৭ অক্টোবর সোমবারের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এসআই স্বপন মিয়া বলেন, এ ব্যাপারে আদালতের অনুমতি পাওয়া গেছে। এখন এই বিষ ৫টি কাঁচের জারে করে ডিবির মালখানায় রাখা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও বলেন, এই বিষ পাচারের ঘটনায় আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত। তাদের বিশাল নেটওয়ার্ক আছে। বিষসহ বগুড়ায় যে দুজন গ্রেফতার হয়েছে তারা বাহক মাত্র। নেপথ্যে রয়েছে তাদের গডফাদার। পর্দার আড়ালে থেকে সেই গডফাদার কলকাঠি নাড়ে। কিন্তু গড ফাদারের কথা জানা গেলেও সেই গড ফাদার রয়েছে অধরা।
বগুড়ায় বিষসহ গ্রেফতারকৃত দুজন তাদের গড ফাদারের ব্যাপারে মুখ খোলেনি। জেল গেইটে জিজ্ঞাসাবাদ করেও এই দুজনের কাছ থেকে তেমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে গড ফাদারকে ধরতে ডিবি সক্রিয় রয়েছে। তিনি দৈনিক করতোয়া’কে বলেন, আন্তর্জাতিক বিষ চোরাকারবারিদের থাবা বগুড়া পর্যন্ত বিস্তৃত। বগুড়ায় এই চক্র সক্রিয় আচে বলেই ৪২ কোটি টাকা মূল্যের বিষ উদ্ধার হলো। এর আগে দেশের কয়েক স্থানে সাপের বিষ উদ্ধার হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তদন্তে এমন তথ্য পাওয়া গেছে যে ফ্রান্স থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে এই সাপের বিষ বগুড়ায় আনা হয়। এরপর বগুড়া হতে এই বিষ ভারতে পাচারের উদ্যোগ নেয়া হয় । এর মধ্যে বগুড়া থেকে এই চোরাচালানি চক্র কাঁচের এক জার ভর্তি বিষ ভারতে পাচারও করেছে।
পরবর্তীতে আরও বিষ ভারতে পাচারের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু তার আগেই ডিবি পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে অভিযান চালিয়ে ৫টি কাঁচের জারে থাকা ৪২ কোটি টাকা মূল্যের বিষসহ ওই দুজন বাহককে গ্রেফতার করা হয়।
গত ৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে ডিবি পুলিশের একটি টিম শহরের ঠনঠনিয়া শহীদ নগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাপের বিষ কারবারি চক্রের ওই দু’জনকে গ্রেফতার এবং তাদের হেফাজত থেকে একটি বড় কার্টুনভর্তি পাঁচটি কাঁচের জারে রাখা সাপের বিষ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় থানায় ধৃত আসামিদের বিরুদ্ধে সাপের বিষ চোরা চালানের অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় উদ্ধার করা বিষকে সাপের বিষ বলে উল্লেখ এবং সেইসাথে এর দাম ৪২ কোটি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা হলো, বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া মন্ডলপাড়ার আব্দুল মজিদের ছেলে এস.এম.এ ফেরদৌস (৭৪) এবং সূত্রাপুর গোহাইল গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিনের ছেলে রমজান আলী (৫৫)। বর্তমানে তারা জেলা কারাগারে রয়েছে।
ডিবি সূত্র দৈনিক করতোয়া’কে জানায়, ওই দিন গ্রেফতারের পর ডিবি কার্যালয়ে এই দু’জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে যে তারা পরস্পর যোগসাজশে মহামূল্যবান সাপের বিষ চোরাচালান করে আসছিল। তারা দাবি করেছে উদ্ধার হওয়া বিষ আসল। এর দাম ৪২ কোটি টাকা। দেশ ও বিদেশ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে বিষ সংগ্রহ করে দেশে এনে তারা গোপনে ভারতে বিক্রি করতো। তবে তারা বাহক মাত্র। তারা একটি আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে জড়িত।
অভিযুক্ত ফেরদৌস ও রমজান ফ্রান্স থেকে অবৈধভাবে এসব সাপের বিষ দেশে এনে ভারতে চোরাচালানের মাধ্যমে বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তবে কে তাদের গড ফাদার এবং তাদের নেটওর্য়াক আর কতদূর বিস্তৃত সে বিষয়ে তারা মুখ খোলেনি। তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, উদ্ধারকৃত ৫টি কাঁচের জারসহ বিষের ওজন ৬ হাজার ৭শ’গ্রাম।
ওই সব কাঁচের জারের গায়ে লেবেলে লেখা ছিল কোবরা রেড ড্রাগন কোম্পানী, মেড ইন ফ্রান্স। একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সোনার থেকেও দামি হলো সাপের বিষ। কোটি কোটি টাকার সাপের বিষ পাচার হচ্ছে দেশের বাইরেও৷ এ মুহূর্তে এক লিটার সাপের বিষের বাজার দাম প্রায় চারকোটি টাকা বলে জানা গেছে৷
কর্মকর্তারা দৈনিক করতোয়া’কে বলেন, বিষ নিষ্কাশনের জন্য ধরা হয় প্রধানত চার প্রজাতির সাপ – কোবরা বা গোখরো, রাসেল ভাইপার, পিট ভাইপার এবং শাখামুটে৷ বিষ নিষ্কাশনের পর সেই বিষ চালান করা হয় দেশে এবং বিদেশে৷ দেশে চোরা চালানকারীদের সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ক ব্যাপক। কিন্তু সব সময় তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না।
পুলিশ কর্মকর্তারা দৈনিক করতোয়া’কে বলেন, সাপের বিষ দিয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলি তৈরি করে অ্যান্টি-ভেনাম সিরাম৷ এটা সাপে কাটা মানুষের জীবনদায়ী ওষুধ৷ওষুধের পাশাপাশি গবেষণার কাজেও ব্যবহার করা হয় সাপের বিষ।
মন্তব্য করুন