নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর, ২০২৫, ০৫:১২ বিকাল
ক্রিকেটে নতুন ফরম্যাট টেস্ট-টোয়েন্টি, খেলা হবে যেভাবে

ক্রিকেটে নতুন ফরম্যাট টেস্ট-টোয়েন্টি, খেলা হবে যেভাবে
বিশ্ব ক্রিকেটের বহুল পরিচিত তিন ফরম্যাট — টেস্ট, ওয়ানডে ও টি‑টোয়েন্টির পাশাপাশি এবার যোগ হচ্ছে এক নতুন সংস্করণ‘টেস্ট‑টোয়েন্টি’। ক্রিকেটের দুই ঐতিহ্যবাহী ধারার মিশ্রণে তৈরি এই ফরম্যাট মূলত তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য। ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের লক্ষ্য করেই গঠিত হয়েছে এই নতুন ধরনের খেলার নকশা।
সম্প্রতি একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফরম্যাটের ঘোষণা দিয়েছেন ক্রীড়া উদ্যোক্তা ও ‘ওয়ান ওয়ান সিক্স নেটওয়ার্ক’-এর কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান গৌরব বাহিরওয়ানি। যুক্ত ছিলেন ম্যাথু হেইডেন, হরভজন সিং, ক্লাইভ লয়েড ও এবি ডি ভিলিয়ার্সের মতো সাবেক কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা।
ক্রিকেটের নতুন এই ফরম্যাট নিয়ে বেশ আগ্রহী ভক্তরা। তবে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে প্রশ্ন জেগেছে, কীভাবে খেলা হবে এ ফরম্যাটে? কেনই বা এর নাম টেস্ট-টোয়েন্টি?
খেলার নিয়ম
টেস্ট-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ম্যাচে মোট ৮০ ওভার থাকবে। প্রতিটি দল খেলবে দুটি ইনিংসে ২০ ওভার করে, এবং টেস্ট ম্যাচের মতোই প্রতিটি ইনিংসের স্কোর যোগ হয়ে নির্ধারিত হবে ম্যাচের ফলাফল। অর্থাৎ, ম্যাচ শেষ হতে পারে জয়, পরাজয়, টাই কিংবা ড্র — সবভাবেই। ড্র ঘোষণা করা হবে তখনই, যখন শেষ ইনিংসে ব্যাট করা দল অন্তত পাঁচটি উইকেট হাতে রেখে ম্যাচের শেষ বল পর্যন্ত খেলতে পারবে। তবে ম্যাচ ড্র হলেও অনুষ্ঠিত হবে একটি সুপার ওভার। খেলাটি একদিনেই অনুষ্ঠিত হবে।
এই ফরম্যাটে প্রতিটি দল একবার করে ‘পাওয়ার প্লে’ নেওয়ার সুযোগ পাবে, যা চার ওভারের হবে। অধিনায়ক চাইলে এটি প্রথম ইনিংসেই নিতে পারেন, কিংবা রেখে দিতে পারেন দ্বিতীয় ইনিংসের জন্য। এই সময়ে ৩০ গজের বৃত্তের বাইরে মাত্র দুইজন ফিল্ডার রাখা যাবে। আয়োজকদের মতে, কখন পাওয়ার প্লে নেওয়া হবে—এই সিদ্ধান্তটাই বাড়াবে কৌশল, শৃঙ্খলা এবং ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা।
এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হলো ‘ফলো-অন’। টেস্টের মতোই প্রতিপক্ষ দল পিছিয়ে থাকলে এটি প্রয়োগ করা যাবে, তবে ব্যবধান হবে মাত্র ৭৫ রান (টেস্টে যেখানে ২০০)। এছাড়া রয়েছে নতুনত্ব — ‘আর্লি কলাপ্স ক্লজ’। কোনো দল যদি প্রথম ইনিংসে প্রতিপক্ষকে ১০ ওভারের কম সময়ে অলআউট করে ফেলতে পারে, তাহলে তারা তাদের নিজস্ব ইনিংসে তিন ওভার অতিরিক্ত ব্যাট করতে পারবে।
প্রতিটি ম্যাচে সর্বোচ্চ পাঁচজন বোলার ব্যবহার করা যাবে। একজন বোলার সর্বোচ্চ ৮ ওভার করতে পারবেন, তবে তা দুই ইনিংসে ভাগ করে নিতে হবে — যেমন প্রথম ইনিংসে ৩ ওভার, দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ ওভার করে।
কোথায় হবে এই টুর্নামেন্ট?
২০২৬ সালের জানুয়ারিতে শুরু হবে এই টুর্নামেন্টের প্রথম মৌসুম, যার নাম রাখা হয়েছে জুনিয়র টেস্ট-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ। এটি ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী ক্রিকেটারদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে এবং আয়োজক থাকবে ভারত। দ্বিতীয় মৌসুম থেকে নারী ক্রিকেটাররাও অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। প্রথম মৌসুমে অংশ নেবে ছয়টি ফ্র্যাঞ্চাইজি দল —দুবাই, লন্ডন, যুক্তরাষ্ট্রের একটি শহর (যেটি এখনও নির্ধারিত হয়নি) এবং ভারতের তিনটি শহর থেকে। খেলোয়াড় নিবন্ধন শুরু হবে ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা (বাংলাদেশ সময়) থেকে।
খেলোয়াড় নির্বাচনের জন্য থাকছে এক অভিনব ব্যবস্থা —‘এআই ডিসকভারি ইঞ্জিন’। এর মাধ্যমে ১০০০ জনের একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হবে। সেখান থেকে ৩০০ জনের নাম যাবে ‘গ্লোবাল অকশন পুল’-এ, যেখান থেকে প্রতিটি দল গঠন করবে ১৬ সদস্যের স্কোয়াড — ৮ জন ভারতীয় এবং ৮ জন বিদেশি খেলোয়াড়। এই ফরম্যাটে ব্যবহৃত হবে আধুনিক প্রযুক্তি, যেমন — এআই–নির্ভর স্কাউটিং ও ব্যাট-বল সেন্সর, যা তরুণদের দক্ষতা অনুশীলন ও উন্নয়নে সহায়তা করবে। তরুণ ক্রিকেটারদের কথা মাথায় রেখে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির সংমিশ্রণে আনা হয়েছে নতুন এই ফরম্যাট, যেখানে প্রতিটা ম্যাচ চলবে একদিন, কিন্তু তাতে থাকবে টেস্টের গভীরতা আর টি-টোয়েন্টির তীব্রতা।
এই উদ্যোগের পেছনে আছেন যারা
এই ক্রিকেট সংস্করণ উদ্ভাবন করেছেন ওয়ান-ওয়ান সিক্স নেটওয়ার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ক্রীড়া উদ্যোক্তা গৌরব বাহিরভানি। তার লক্ষ্য, আগামী প্রজন্মের প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের খুঁজে বের করা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে তিনি বলেন, ‘এটি কেবল একটি নতুন লিগ নয়। ক্রিকেটের ঐতিহ্যকে ধরে রেখে ভবিষ্যৎ গড়ার একটি প্রচেষ্টা এটা। আমরা চাই এ সংস্করণের মাধ্যমে প্রজন্মের ক্রিকেটারদের প্রতিভা সঠিকভাবে উদঘাটন ও উদযাপন করা হোক।’
এই ফরম্যাটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্স। তিনি মনে করেন, ক্রিকেটের এই চতুর্থ ফরম্যাট খেলাটিকে এক নতুন মাত্রা দেবে। তাঁর মতে, টেস্ট-টোয়েন্টি টেস্ট ক্রিকেটকে প্রতিস্থাপন নয়, বরং তা পুনরায় কল্পনার একটি প্রচেষ্টা—পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। এটি একসঙ্গে পুরস্কৃত করবে স্থিতি ও সৃজনশীলতাকে, ধৈর্য ও শক্তিকে— দুই জগতের সেরা মেলবন্ধন। এছাড়াও পরামর্শক বোর্ডে আছেন আরও তিন কিংবদন্তি — স্যার ক্লাইভ লয়েড, ম্যাথিউ হেইডেন এবং হরভজন সিং। লয়েড বলেন, ‘আমি ক্রিকেটের প্রতিটি যুগ দেখেছি। খেলা সবসময় পরিবর্তন করেছে নিজেকে, কিন্তু এতটা ভাবনাসম্পন্নভাবে আগে কখনো নয়। টেস্ট-টোয়েন্টি ফিরিয়ে আনছে ক্রিকেটের শিল্প ও ছন্দ, আর সঙ্গে রাখছে আধুনিক যুগের তেজ।’
মন্তব্য করুন