শিক্ষার্থীরা স্কুলে এলেও হচ্ছে না পাঠদান
বগুড়ায় শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে অচলাবস্থা এমপিওভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে

স্টাফ রিপোর্টার : গত দুইদিন থেকে বগুড়া ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কোন ঘন্টাই পড়েনি। অথচ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাধারণ কর্মচারী সবাই যথাসময়ে স্কুলে হাজির হলেও ক্লাস শুরু বা শেষ হওয়ার কোন ঘন্টাই বাজানো হয়নি।
পাঠদান বন্ধ রেখে শিক্ষকরা কখনও প্রতিষ্ঠান প্রধানের কক্ষে মিটিং করছেন তো কখনও স্টাফরুমে অলস আড্ডায় মেতে উঠছেন। শিক্ষকরা ক্লাস না নেওয়ায় শিক্ষার্থীরাও শ্রেণিকক্ষে বসে গল্প এবং খেলাধুলায় সময় পার করে বাড়ি ফিরছে। এটা শধু বগুড়া শহরের ওই স্কুলেরই চিত্র নয়। গত দুইদিন ধরে একই চিত্র দেশের প্রতিটি এমপিওভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।
২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ও বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিন ছিলো আজ মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর)। দশদিন পূজার ছুটি শেষে গত ৮ অক্টোবর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও দুইদিন ক্লাস শেষে ১২ অক্টোবর টাইফয়েডের টিকাদান উপলক্ষে স্কুলগুলোতে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়। ১৩ অক্টোবর থেকে পাঠদান বন্ধ রেখে শুরু হয়েছে শিক্ষকদের ধর্মঘট কর্মসূচি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার এমপিওভূক্ত অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাসরুমগুলো ফাঁকা। ব্ল্যাকবোর্ডে চারদিন আগের লেখা মোছেনি কেউ। শিক্ষকরা স্কুলে এসেছেন ঠিকই, কিন্তু শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করছেন না। বগুড়া ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফিয়া রুবাইয়া গতকাল সোমবার স্কুলে না গেলেও আজ মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) যথাসময়ে স্কুলে যায়।
রাফিয়া জানায়, বেশ কিছু সময় পার হলেও লক্ষ্য করলাম ক্লাস শুরু বা শেষের কোনো ঘন্টাই বাজছে না এবং কোনো শিক্ষকও পাঠদান করাতে আসছেন না। তখন আমরা সহপাঠীরা কেউ গল্প কেউবা ইনডোর গেমস খেলে ক্লাসে সময় পার করে যে সময় ছুটি হয় ওই সময় বাড়ি ফিরি।
বগুড়া শহরের অনতিদূর কৈচড় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলম জানান, শিক্ষকরা সবাই স্কুলে এলেও কেউই ক্লাসে গিয়ে পাঠদান করাচ্ছেন না। কর্মবিরতির প্রথমদিন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৮০ শতাংশ হলেও পরের দিন আজ মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে ৫০ শতাংশে নেমেছে।
বগুড়া ফয়েজুল্বা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক এবং সচেতন শিক্ষক সমাজ বগুড়ার সদস্য সচিব সাজেদুর রহমান সবুজ জানান, দু’দিনের কর্মসূচির প্রথম দিনে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি থাকলেও পরের দিন তা কমে ১০ শতাংশে এসেছে।
আরও পড়ুনতিনি আরও বলেন, সরকারের ঘোষিত ভাতা বৃদ্ধি অবাস্তব ও অপর্যাপ্ত। আমরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ও ১ হাজার ৫০০ টাকা মেডিক্যাল ভাতা বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছি। বগুড়া প্রি-ক্যাডেট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. জহুরুল ইসলাম জানান, কর্ম-বিরতির কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৫০ শতাংশ কমে গেছে। আমরা বাধ্য হয়ে কর্মবিরতি করছি। কেননা আমাদের দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে সরকার শুধুমাত্র বাড়ি ভাড়া ৫০০ টাকা বাড়িয়েছে যা সত্যিই আমাদের জন্য অবমাননাকর।
বগুড়া ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ফেরদৌস আলম বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। তবে আমাদের প্রাথমিকের পাঠদান অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার আমাদের বিদ্যালয়ে ১৭টি এমপিওভূক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা আলোচনা সভায় মিলিত হয়েছিলেন। আগামীকাল বুধবার আমরা মানববন্ধন কর্মসূচি করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করবো।
তার অনুমতি সাপেক্ষে বুধবার অথবা বৃহস্পতিবার শহরের সাতমাথায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। মৌসুমি আক্তার নামে এক অভিভাবক জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই অচলাবস্থা যত দ্রুত শেষ হবে, তত ভালো। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে আসুক এবং সরকার শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি মেনে নিক এ প্রত্যাশা আমাদের।
বগুড়া জেলা শিক্ষা অফিসার রমজান আলী আকন্দ জানান, বগুড়া সদরে মাধ্যমিক পর্যায়ের ১২৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯২টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্ত। এমপিও নয় এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৮টি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ৮টি। যেহেতু এমপিওভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই বেশি তাই মাধ্যমিকে একটি বড় অংশের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটছে।
এদিকে আগামী মাস থেকে শুরু হবে সকল প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই এসএসসি’র নির্বাচনীসহ সকল পরীক্ষা শেষ করতে হবে। তাই আশা করছি শিক্ষকদের সমস্যার যত দ্রুত সমাধান হবে সবার জন্য মঙ্গল হবে।
মন্তব্য করুন