২৩ বছরের কারাভোগ শেষে রঙিন জীবনের পথে নওগাঁর ইসমাইল

নবির উদ্দিন, নওগাঁ: নওগাঁর সাপাহার উপজেলার কলমুডাঙ্গা গ্রামের মৃত সাইদুর রহমানের ছেলে ইসমাইল হোসেন। ইসমাইলের বাবা ছিলেন একজন গ্রাম পুলিশ। গরীব পরিবারের সন্তান ইসমাইল হোসেন কলমুডাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশ্যপ্রহরী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তবে জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে তার শরিকানরা নারী ও শিশু নির্যাতন বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করে ইসমাইলের বিরুদ্ধে। সেই মামলার আসামি হিসেবে ২০০০ সালে তাকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।
অর্থের অভাবে একজন উকিল নিযুক্ত করতে পারেনি তার পরিবার। ফলে ২০০৩ সালে আদালত ইসমাইলের যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করে। এরপর দীর্ঘ ২৩ বছর ৩ মাস ৭ দিন পর গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর কারামুক্ত হয় ইসমাইল। এরই মাঝে বাবাসহ পরিবারের অনেককেই হারিয়ে ফেলেন তিনি।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের জেলখানা পরিদর্শন পাল্টে দেয় ইসমাইলের জীবন। সেখানে জেলা প্রশাসকের দেওয়া প্রতিশ্রুতি নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখায় তাকে। মুক্তির দিনে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে পুর্নবাসনের উপহার হিসেবে পাওয়া একটি ভ্যান পাল্টে দেয় ইসমাইলের জীবন। বর্তমানে নতুন সঙ্গীকে নিয়ে জীবন সাজাতে ব্যস্ত তিনি। সব হারানো অসহায় ইসমাইল সুস্থ জীবনে ফিরতে সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সম্প্রতি নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসমাইলের সাথে তোলা একটি ছবিসহ নিজের আবেগঘন অনুভূতির কথা লেখেন। যেখানে তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর জেলখানা পরিদর্শনের সময় ইসমাইলের সাথে তার সাক্ষাৎ ও প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করেন। কারামুক্তির পর আবারো বিয়ে করেছেন ইসমাইল।
আরও পড়ুনপরে সস্ত্রীক জেলা প্রশাসনের সাথে নববধূকে পরিচয় করিয়ে আনলে তাদের ফুল দিয়ে বরণ ও মিষ্টিমুখ করানোর কথাও লেখেন তিনি। একইসাথে তাদের নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা জানিয়ে সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন জেলা প্রশাসক। স্ট্যাটাসে ইসমাইলের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা পোষণ করেন তিনি।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ইসমাইল হোসেন জানান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের দেখানো স্বপ্নের কারণে জেলমুক্ত হওয়ার পর একটি সুস্থ সুন্দর জীবনের আশায় পথ চলছেন তিনি। সাপাহার উপজেলার নিশ্চিন্তপুর মোড়ে তাকে ৬ শতক জমি দিয়েছেন ডিসি।
তবে সামর্থ না থাকায় সেখানে এখনও ঘর নির্মাণ করতে পারেননি ইসমাইল। বর্তমানে সাপাহার উপজেলার নিশ্চিন্তপুর ভেলাকুড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। এসময় আগামী জীবনকে আরেকটু সাজিয়ে নিতে জেলা প্রশাসকসহ সমাজের সকল মানুষের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন ইসমাইল।
মন্তব্য করুন