কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণ হলে খুলবে উন্নয়নের দ্বার

কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : একটি সেতুর অভাবে মেলবন্ধন হচ্ছে না দেশের রংপুর, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ঢাকা বিভাগসহ প্রায় ২০টি জেলার। দেশের অর্থনীতিতে অপার সম্ভাবনার দুয়ার খোলার পাশাপাশি আঞ্চলিক ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অগ্রণী ভূমিকা রাখবে এ সেতুটি। ফলে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধি করতে কুড়িগ্রামের চিলমারী-রৌমারী উপজেলা ঘেঁষা ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর একটি সেতুর নির্মাণে দাবি সর্বস্তরের মানুষের।
জেলা শহরের সাথে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন রৌমারী-রাজিবপুর উপজেলা মানুষের দু:খ কষ্ট দীর্ঘদিনের। কয়েক লাখ মানুষের পারাপারে নৌকাই একমাত্র ভরসা। অফিস-আদালতে আসতে পোহাতে হয় হাজারও বিড়াম্বনা। সময়-অর্থ দু’টো নষ্ট হচ্ছে এই জনপদের মানুষের। বারবার দাবি উঠেছে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণের। চিলমারী-রৌমীরী পর্যন্ত সেতুর দাবিতে হয়েছে একাধিকবার আন্দোলনও।
এছাড়াও ব্রহ্মপুত্র সেতু নির্মাণ হলে কুড়িগ্রাম শহর থেকে রৌমারী হয়ে ঢাকার সাথে ১শ’ কিলোমিটার পথ কমে আসবে। ব্রহ্মপুত্র সেতু নির্মাণ হলে বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ জেলার কানেক্টিক সেতু হিসেবে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট যাতায়াত সহজ হয়ে আসবে।
ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সেতুটি তৈরি হলে দেশের অর্থনীতির হার্ট হিসেবে পরিচিতি পাবে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে সেতুটি। দেশের সবচেয়ে দরিদ্রতম কুড়িগ্রাম জেলারও পরিবর্তন ঘটবে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘদিন ধরে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সেতুর নির্মাণের দাবি করে আসছেন এ জনপদের মানুষ।
কয়েক বছর পূর্বে পরিদর্শন করা হয় সেতু নির্মাণের সম্ভাবনা স্থান। এরপর থেকে মুখ থুবড়ে রয়েছে, নেই ব্রহ্মপুত্র সেতুর কোন অগ্রগতি। ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সেতু নির্মাণ হলে উত্তরাঞ্চলে ঘটবে শিল্পকারখানা, কৃষি পণ্য সংরক্ষণাগার, শিল্পের কাঁচামাল তৈরির কারখানা এবং ইপিজেড গড়ে উঠবে।
আরও পড়ুনএতে করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, নেপাল ও ভুটানের সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। বাংলাদেশের সোনাহাট, বুড়িমারী, বাংলাবান্ধা, রৌমারী, হিলিস্থলবন্দরসহ চিলমারী নৌবন্দরের পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সহজেই পরিবহন করা যাবে।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সেতু হলে দেশের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আসবে। পাশাপাশি এই সেতু শুধু দেশের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে গুরুত্ব অপরিসীম।
কুড়িগ্রাম মোটর-বাস মালিক সমিতির সভাপতি লুৎফর রহমান বকসী বলেন, ব্র্রহ্মপুত্র সেতু হলে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা ১শ’ কিলোমিটার কমবে। এর ফলে বড় গাড়িগুলোর ৬৫/৭০ লিটার তেল সাশ্রয় হবে। এতে করে দেশে আমদানি নির্ভর জ¦ালানির ওপর চাপ কমার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
কুড়িগ্রাম চেম্বারস অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি সভাপতি আব্দুল আজিজ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত সেতুর দাবি জানানো হচ্ছে। এই সেতু হলে আন্ত:দেশীয় ও আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি বাড়বে এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসা, বাণিজ্য এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে সম্প্রসারণ ঘটবে। এতে করে কুড়িগ্রামে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
মন্তব্য করুন