ভিডিও সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

 তারেক রহমান

‘এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ’

ছবি : সংগৃহীত,‘এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর কোনো গণমাধ্যমে মুখোমুখি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া দীর্ঘ এই সাক্ষাৎকারে লন্ডন থেকে তার দেশে ফেরা, আগামী নির্বাচনে দলের কৌশল, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও তাদের নেতাকর্মীদের বিচার, বাংলাদেশের নির্বাচনকেন্দ্রীক রাজনীতিসহ সমসাময়িক নানা বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরেছেন তিনি। গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের ‘মাস্টারমাইন্ড’ কে তা নিয়েও নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন তারেক রহমান।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আপনার (তারেক রহমান) ভূমিকা নিয়ে অনেক আলোচনা আছে। এটি মোটামুটি সব পক্ষই স্বীকার করেও যে সেই সময়ে আপনার একটা সক্রিয় ভূমিকা ছিলো। আবার আপনার দলের কোনো কোনো নেতা বা সমর্থক তারা এই অভ্যুত্থানে আপনাকে ‘একমাত্র মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। আপনি কি নিজেকে এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখেন?-বিবিসি বাংলার করা এমন প্রশ্নের উত্তরে তারেক রহমান বলেন, ‘না। আমি অবশ্যই এই জুলাই আন্দোলনে আমাকে আমি কখনোই মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখি না। এই যে ৫ আগস্ট যেই আন্দোলন, জুলাই আন্দোলন বলে যেটি বিখ্যাত বা যেটি সকলের কাছে গৃহীত এই আন্দোলনটি সফল হয়েছে জুলাই মাসে। কিন্তু এই আন্দোলনটির প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছে কিন্তু বহু বছর আগে থেকে।’

‘এই আন্দোলনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা, সেটি বিএনপি হোক বা অন্য রাজনৈতিক দলগুলো হোক, যারা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছে। বিভিন্নভাবে তাদের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হয়েছে। আমি মনে করি জুলাই-অগাস্ট মাসে এসে জনগণ সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছে। শুধু কী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাই সেদিন ছিল মাঠে? অবশ্যই নয়।’ যোগ করেন তারেক রহমান।

একই প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি সেদিন মাদ্রাসার ছাত্ররা তারা ছিলেন এই আন্দোলনের মাঠে। আমরা দেখেছি গৃহিণীরা পর্যন্ত রাস্তায় নেমে এসেছেন সন্তানের পেছনে। আমরা দেখেছি কৃষক, শ্রমিক, সিএনজি চালক, ছোট দোকান কর্মচারী বা দোকান মালিক থেকে আরম্ভ করে গার্মেন্টস কর্মী-তারা নেমে এসেছিলেন। আমরা দেখেছিলাম সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নেমে এসেছিলেন এই আন্দোলনে। এমন অনেক সাংবাদিক যারা স্বৈরাচারের অত্যাচারে নির্যাতিত হয়ে দেশ থেকে বাইরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, তারা সম্পৃক্ত হয়েছিলেন এই আন্দোলনে। কাজেই কারো ভূমিকাকে আমরা ছোট করে দেখতে চাই, না খাটো করে দেখতে চাই না। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি দল-মত নির্বিশেষে সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের অবদান আছে।’

তারেক রহমান বলেন, এই আন্দোলন ছিলো বাংলাদেশের জনগণের আন্দোলন, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন তারা এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড। কোনো দল কোনো ব্যক্তি নয়, এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ।

আরও পড়ুন

যখন আন্দোলনটা চলছিলো, তখন আন্দোলনে যে ছাত্রনেতৃত্ব ছিলো তাদের সঙ্গে আপনার কতটা যোগাযোগ ছিলো? আপনার দলের সঙ্গে তো নিশ্চয়ই যোগাযোগ ছিলো, অন্যদের সঙ্গে আপনাদের, আপনার কতটা যোগাযোগ ছিলো?-এমন প্রশ্নের উত্তরে তারেক রহমান বলেন, স্বাভাবিকভাবে আমি যেহেতু বাইরে থেকে কাজ করছি আমাকে যোগাযোগটা অনলাইনের মাধ্যমে রাখতে হয়েছে এবং সেই দিনগুলোতে আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে টেলিফোন সিস্টেম বা অনলাইন সিস্টেমের কি অবস্থা করেছিলো স্বৈরাচার। আপনি যোগাযোগের যেটি কথা বলেছেন এই যোগাযোগটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বিভিন্নভাবে আমাদের করতে হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে করতে হয়েছে। যোগাযোগটা যে খুব স্মুথ সবসময় থেকেছে তা নয়। প্রত্যেকে সহযোগিতা করেছি আমরা।

ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান সেটির পরে এটার কৃতিত্ব কার সেটা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ দাবি করেছে, তাতে কি আপনার মনে হয় যে এর ফলে বিভিন্ন পক্ষের যে সংকীর্ণ স্বার্থ পূরণের চেষ্টা সেটাই একটু বেশি প্রকট হয়েছে এবং এখানে বিএনপির আসলে কোনো দায় আছে কিনা?-বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেখুন ব্যাপারটা আমরা যদি একটু অন্যভাবে দেখি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এটি একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। এই আন্দোলন, মানুষের এই আত্মত্যাগ সাধারণত কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে বা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শিশু হত্যা হয় না, শিশু শহীদ হয় না, শিশু মৃত্যুবরণ করে না। বাট আমরা দেখেছি এই আন্দোলনে, স্বৈরাচারের এই আন্দোলনে যতটুকু আমার মনে আছে প্রায় ৬৩ জন শিশু শহীদ হয়েছে, মারা গিয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, আমি আগেই বলেছি আপনার আগের প্রশ্নের উত্তরে বলেছি যে, এই আন্দোলনের ক্রেডিট দল-মত নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনগণের, কোনো একটি রাজনৈতিক দলের নয়। অনেকে হয়তো অনেক কিছু বলে থাকতে পারেন, ডিমান্ড করতে পারেন, সেটি তাদের অবস্থান।

এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করে তারেক রহমান বলেন, আমি বা আমার দলের অবস্থান হচ্ছে-আন্দোলন হয়ে গিয়েছে, আন্দোলনের জনগণ সফলতা লাভ করেছেন। আন্দোলনে স্বাভাবিকভাবেই দুটো পক্ষ আছে। একটি পক্ষ হচ্ছে মানুষ শহীদ হয়েছে। ২০০০ এর মতো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে আন্দোলনে। আবার আরেকটি পক্ষ হচ্ছে প্রায় ত্রিশ হাজারের মতন মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, অন্ধ হয়ে গিয়েছেন। আমার মনে হয়, আমাদের উচিত হবে, এখন আমাদের সবার উচিত হবে রাষ্ট্রসহ সরকারসহ রাজনৈতিক দলগুলোর যার যতটুকু সম্ভব, সেই পরিবারগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। যতটুকু সহযোগিতা তাদের করা যায়, যতটুকু সম্ভব তাদের পাশে দাঁড়ানো। তাদের এই আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানানো।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এবার ভেনেজুয়েলায় স্থল হামলার হুমকি দিলেন ট্রাম্প

আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ছয় ইউনিট 

হংকং ম্যাচ সামনে রেখে ঢাকায় হামজা, আসছেন শমিতও

এনসিপি আগামী নির্বাচনে শাপলা প্রতীক নিয়েই অংশ নেবে : সারজিস আলম

বগুড়ার শেরপুরে শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে বন্ধ করতোয়া গেটলক সার্ভিস

ম্যানসিটি’র জয়ের রাতে রেকর্ড গার্দিওলার