ঠাকুরগাঁওয়ে বিলুপ্তির পথে দেশীয় মাছ

হরিপুর (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি: এক সময়ে গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজার গুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। এখন আর সেসব মাছ খুব একটা দেখা যায় না। জেলেদের জালেও ধরা পড়ে খুব কম। দেশীয় এসব মাছের মধ্যে রয়েছে কৈ, মাগুর, শিং, পুঁটি, পাবদা, টেংরা, মলা, ঢেলা, চপরা, শোল, ডারকা, বেয়াল, খলশি, ফলি, চিংড়ি, চেং, টাকি, পোয়া, বালিয়া, গোচি, ভেবদা, টনা, ইত্যাদি মিঠা পানির সুস্বাদু বিভিন্ন ধরনের দেশীয় মাছ যা গ্রাম বাংলায় আশ্বিন মাস থেকে শুরু করে পৌষ ও মাঘ মাস পর্যন্ত পাওয়া যেত। এ সময় পুকুর, খাল-বিল, ডোবা-নালার পানি কমতে থাকে।
এখন আর এ সময় দেশি এসব মাছ দেখা যায় না। বর্ষাকালে ধানের জমিতে কইমারি জাল, বড়শি, নল, দেহড়, ঘুনি, ঠুসি পেতে মাছ ধরার রীতি হারিয়ে গেছে অনেক এলাকা থেকে। যারা এক সময় পুকুর, খাল-বিল, ডোবা- নালায় মাছ ধরে পরিবারের চাহিদা পূরণ করতো তাদের অনেকেই এখন বাজার থেকে চাষের মাছ কিনে পরিবারের মাছের চাহিদা পূরণ করছে।
জলবাযুর প্রভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কারেন্ট জালের অবৈধ ব্যবহার, ফসলি জমিতে অপরিকল্পিত ভাবে কীটনাশক ব্যবহার, জলাশয় দূষণ, নদ-নদীর নব্যতা হ্র্রাস, খাল-বিলের গভীরতা কমে যাওয়া, ডোবা ও জলাশয় ভরাট করা, মা মাছের আবাস স্থলের অভাব, ডিম ছাড়ার আগেই মা মাছ ধরে ফেলা, ডোবা-নালা, পুকুর-বিল ছেঁকে মাছ ধরা বিদেশি রাক্ষুসে মাছের চাষ ও মাছের প্রজননে ব্যাঘাত ঘটানো এসবের কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে।
আরও পড়ুনকালিগঞ্জ বাজারে মাছ কিনতে আসা মামুন বলেন, দেশি মাছের বদলে এখন বাজারে জায়গা দখল করে নিয়েছে চাষের মাছ। ১০ থেকে ১৫ বছর আগে এ সময় হাট-বাজারে মিঠা পানির সুস্বাদু দেশি মাছ প্রচুর পাওয়া যেত। কিনে খাওয়ার তেমন রেওয়াজ ছিল না। এখন খাল-বিলে মাছ নেই। মানুষ চাষের মাছের ওপর নির্ভরশীল। ফুসি নানে এক মাছ বিক্রেতা বলেন, আমি এই দেশি মাছ গুলি বিলের ডোবায় ধরেছি। খাওয়ার জন্য কিছু মাছ বাড়িতে রেখে বাকি গুলি বাজারে বিক্রি করতে এনেছি দামও ভালো পেলাম। বাজারে দেশি মাছের চাহিদা প্রচুর।
হরিপুর উপজেলা মৎস্য অফিসার রাকিবুল ইসলাম বলেন, হরিপুর উপজেলায় ৩শ’২৪.৮৩ হেক্টর জলাশয়ে মৎস্য চাষ হচ্ছে এর মধ্যে ২টি অভয় আশ্রম ও রয়েছে। বিভিন্ন কারণেই দেশি প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সাথে মানুষের সচেতনতার অভাবও রয়েছে। হারিয়ে যাওয়া দেশি মাছ রক্ষায় ব্যাপক গবেষণা চলছে।
মন্তব্য করুন