বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের পদচারণায় মুখরিত নদীর পাড়
নতুন রূপে ফিরেছে করতোয়া

স্টাফ রিপোর্টার : দখল ও দূষণে স্বাভাবিক প্রবাহ ও রূপ হারিয়ে ফেলা করতোয়া নদী এখন বগুড়াবাসীর সামনে নতুন রূপ নিয়ে ফিরে এসেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী খনন করে পানি প্রবাহ ধরে রাখার পাশাপাশি নদীর হারানো যৌবন ফিরে এনেছে। নদীর হারানো নাব্যতা ও গভীরতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি নদীর পাড়ও হয়ে উঠছে আকর্ষণীয় ও পরিবেশবান্ধব।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নে শাজাহানপুর উপজেলার মাদলা থেকে সদর উপজেলার মাটিডালি পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার করতোয়া নদী পুনঃখননের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেই সাথে সাড়ে ১৯ কিলেঅমিটার অটো খাল ও সুবিল খাল খনন করা হয়েছে। পুরো প্রকল্পে মোট বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ৪৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৯ কোটি টাকা সাশ্রয় হওয়ায় নতুন করে মাটিডালি থেকে নওদাপাড়া পর্যন্ত আরও ১১ কিলোমিটার নদী খননের কাজ করা হয়।
নদীর সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বগুড়া শহরের এসপি ব্রিজের কিছুটা দক্ষিণ প্রান্ত হয়ে উত্তর দিকে সব মিলিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পর্যন্ত ৭৩০ মিটার নদীতীর উন্নয়ন কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। নদীর পশ্চিম পাড়ে নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াকওয়ে, বসানো হচ্ছে ঝলমলে সৌরবিদ্যুৎ চালিত লাইট, রঙিন টাইলস, তিন ফুট ড্রেন, ১৪টি রঙিন ছাতা, ২০টি বেঞ্চ। এছাড়াও ওয়াকওয়ে নির্মাণের পাশাপাশি স্ল্যাবিংয়ের মাধ্যমে তীর সংরক্ষণের কাজও করা হয়েছে। নদীর দিকে নেমে গেছে পাঁচটি সিঁড়ি।
সন্ধ্যায় করতোয়া নদীর তীরে বেড়াতে আসা বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়ার নাজমা রহমান দৈনিক করতোয়া’কে জানান, এই নিয়ে তিনি দুই দিন মেয়েকে নিয়ে করতোয়া নদীর পাড়ে এসেছেন। খুব ভালো লাগছে। তিনি বলেন, নদী পাড়ে অনেক রাত পর্যন্ত থাকতে মন চায়, কিন্তু নিরাপত্তার কথা ভেবে আগেই চলে যেতে হয়। ওয়াক ওয়েতে পুলিশের টহল বা আনসার রাখলে ভালো হতো।
একইভাবে মিজানুর নামের এক ব্যক্তি পরিবার-পরিজন নিয়ে নদীর পাড়ে বেড়াতে এসেছেন এই প্রথম। তিনি বলেন, অনেকের মুখে শুনেছি, কিন্তু কখনো আসতে পারিনি। এসে ভালো লাগছে। তবে যারা আসছেন তারা পানির বোতল, পলিথিন করে খাবার নিয়ে এসে তা ফেলে রেখে যাচ্ছেন যেটা আবার নদীতে যাচ্ছে। কিছু দূর পর পর ডাস্টবিন রাখা দরকার যাতে পলিথিন বা অন্য কিছু সেখানে ফেলা যায়, না হলে পরিবেশটা নষ্ট হয়ে যাবে।
আরও পড়ুনউল্লেখ্য, করতোয়া নদীর উজানে গাইবান্ধার কাটাখালীতে ১৯৮৮ সালে বাঁধ নির্মাণের কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়, যার কারণে করতোয়া নদী ভাটির দিকে মরা খালে পরিণত হয়। বাঁধ অপসারণে উচ্চ আদালতের আদেশ থাকলেও তা কার্যকর হয়নি। ফলে বর্ষার পরও করতোয়ায় পানি নাই।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বগুড়ার এসডি মো. আছাদুজ্জামান দৈনিক করতোয়া’কে জানান, ওয়াকওয়েতে প্রবেশের জন্য বেশ কয়েকটি মুখ রয়েছে। এর কাজ প্রায় শেষ ইতোমধ্যে বগুড়ার মানুষ এটির সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে নদীর পাড়ে আসছেন। মানুষ মুগ্ধ হয়েছে এটি দেখে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ফেন্সিং দেওয়ায় সৌন্দর্য্য আরও বেড়েছে।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা দৈনিক করতোয়া’কে জানান, করতোয়া শুধু একটি নদী নয়, এটি বগুড়ার ইতিহাস ও সংস্কৃতির অংশ। করতোয়ার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করা হচ্ছে। নদীর পশ্চিম তীরে ওয়াকওয়ে করায় বগুড়ার মানুষ সুস্থ একটি বিনোদন কেন্দ্র পেয়েছেন। তিনি বলেন, অবৈধ দখল উচ্ছেদ এবং নদী সংরক্ষণের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে। দখল ও দূষণমুক্ত করতোয়া গড়তে জেলা প্রশাসন সকল সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে।
মন্তব্য করুন