দিনাজপুরের দশ মাইলে বৃহৎ কলারহাট জমে উঠেছে বেচাকেনা

দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি: দিনাজপুরের দশমাইলে বৃহৎ কলারহাটে জমে উঠেছে বেচাকেনা। এই হাট থেকে কলা ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে। এই হাটে প্রতিদিন কোটি টাকারও বেশি বেচাকেনা হয়ে থাকে এবং সরকার এই হাট থেকে প্রচুর রাজস্ব পেলেও হাটের ইজারাদার বলছেন, দূর দূরান্ত থেকে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য এই হাটে নেই তেমন সুযোগ-সুবিধা। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দূর থেকে আসা কলা ব্যবসায়ীরা। এদিকে হাটে প্রথম অবস্থায় ভালো দাম পেয়ে কলাচাষীরা বেশ খুশি হলেও সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা কমে আসায় খানিকটা আশাহত হয়েছেন কলাচাষীরা।
দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার দশমাইল এলাকায় দিনাজপুর-পঞ্চগড় মহাসড়কের পাশেই গড়ে উঠেছে এই কলারহাট। দিনে দিনে এই হাটটি উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ কলারহাটে পরিণত হয়েছে। এই হাটে দিনাজপুর ছাড়াও ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন জেলার কলাচাষিরা কলা বিক্রি করতে আসেন। সাগর. চাঁপা, সবরিসহ বিভিন্ন জাতের কলা বেচাকেনা হয়ে থাকে বৃহৎ এই হাটে।
দশমাইল কলার হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি মিজানুর রহমান জানান, উত্তরবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বড় কলারহাট এটি। কারণ এই হাটে জুলাই মাস থেকে শুরু করে অক্টোবর মাস পর্যন্ত প্রতিদিনই কলা বেচাকেনা হয়। প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক কলা এই হাট থেকে পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিন বেচাকেনা হয় কোটি টাকারও বেশি।
তিনি বলেন, এই হাটটি এবার ৫৩ লাখ টাকায় ইজারা নেয়া হয়েছে। সরকার প্রচুর রাজস্ব পাচ্ছে এই হাট থেকে। কিন্তু সেই তুলনায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য সুযোগ সুবিধার তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এলেও থাকার তো দূরের কথা সামান্য টয়লেট-এর ব্যবস্থাটুকুও নেই। সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করলে দূর-দূরান্ত থেকে আরও বেশি ব্যবসায়ী আসতেন এই হাটে। এ জন্য সরকারের প্রতি নজর দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা থেকে আসা কলা ব্যবসায়ী মোঃ নুর আমিন জানান, এই হাটের আশপাশে থাকার ব্যবস্থা নেই। থাকতে হয় এখান থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে দিনাজপুর শহরে। খুব সকালে হাটে কলা বেচাকেনা শুরু হয়। তাই খুব ভোরে টাকা নিয়ে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এই হাটে আসতে হয়। আশপাশে থাকার ব্যবস্থা থাকলে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে এই হাটে আসতে পারতো।
আরও পড়ুনগতকাল মঙ্গলবার এই হাটে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এই হা্েট এসেছেন কলা কিনতে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও এই হাটে কলা কিনে পাঠাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন এলাকায়। কলা ব্যবসায়ী হারুনর রশিদ জুয়েল বলেন, তিনি কলা কিনে পাঠাচ্ছেন সাভার, হেমায়েতপুর, আমিনবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায়। তিনি বলেন, অন্যান্য বারের তুলনায় এবার দাম বেশি।
তাই পূঁজি খাটাতে হচ্ছে বেশি। তবে সাম্প্রতিক উচ্চ তাপমাত্রার জন্য কলার সরবরাহ বেড়েছে এবং কলার মানও কিছুটা খারাপ হয়েছে। এ জন্য গত কয়েকদিনের তুলনায় দাম কিছুটা কমেছে। তিনি বলেন, প্রথম অবস্থায় প্রতি কাঁদি (কাইন) কলা ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৬শ’ থেকে ৮শ’ টাকায়। এরপরও কৃষকরা লাভবান হচ্ছে বলে জানান তিনি।
হাটে কলা বিক্রি করতে আসা কাহারোল উপজেলার পরমেশপুর গ্রামের কৃষক ভরত চন্দ্র রায় বলেন, তিনি এবার একবিঘা জমিতে কলার আবাদ করেছেন। একবিঘা জমিতে ৬শ’ গাছের চারা রোপণ করলেও কলার কাঁদি পেয়েছেন ৪শ’টি। প্রতি কাঁদি ৬শ’ টাকা দরে বিক্রি করে দাম পেয়েছেন ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে এক বিঘা জমিতেই কলার আবাদ করে তার লাভ টিকবে প্রায় দেড় লাখ টাকা। তিনি বলেন, প্রথম অবস্থায় বিক্রি করতে পারলে তিনি লাভ পেতেন ২ লাখ টাকারও বেশি। এতে কিছুটা আশাহত হয়েছেন তিনি।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, লাভজনক হওয়ায় দিনাজপুরে এবার কলার আবাদ বেড়েছে। কৃষকরা এবার ভালো দামও পাচ্ছেন। এ বছর এই জেলায় ১ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী এবার ১৮০ থেকে প্রায় ২শ’ কোটি টাকার কলা বিক্রি করবে এই জেলার চাষিরা।
মন্তব্য করুন