ভিডিও বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভারতের পেট্রাপোলে বাংলাদেশি আমদানিকারকের ১৫ কোটি টাকার পণ্য জব্দ

ভারতের পেট্রাপোলে বাংলাদেশি আমদানিকারকের ১৫ কোটি টাকার পণ্য জব্দ

ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দরে বাংলাদেশে রপ্তানির ৫ ট্রাক পণ্য আটক হয়েছে।

গতকাল সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশে রপ্তানির সময় ভারতীয় ৫টি ট্রাক জব্দ করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও কাস্টমস যৌথভাবে আটক করে। ৫টি ট্রাকে প্রায় ১৫ কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য রয়েছে বলে জানা গেছে। আটকের পর ট্রাক খুলে ভারত সরকারের অর্থনৈতিক গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) ও কাস্টম যৌথভাবে মালামাল ইনভেন্টরি করছেন।

পেট্রাপোল ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, এই পণ্যের বাংলাদেশের মালিক বেনাপোলের কথিত আমদানিকারক বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত হাসানুজ্জামান। দীর্ঘদিন যাবৎ বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত হাসানুজ্জামানের মালিকানাধীন কথিত আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স জামান ট্রেডার্স’ এবং যার ভারতীয় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মণ্ডল গ্রুপ নামের একটি চক্র অবৈধ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। পণ্যের ভারতীয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বাপি। বাংলাদেশে বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ওমর অ্যান্ড সন্সসহ চিহ্নিত কয়েকজন অবৈধ ব্যবসায়ী।

আরও পড়ুন

সূত্র জানায়, মণ্ডল গ্রুপের মূল মালিক কুতুব উদ্দীন মণ্ডল। আলোচিত এই ব্যক্তির ৫টি রপ্তানির লাইসেন্স রয়েছে, যার মধ্যে ৪টি ভুয়া রপ্তানির লাইসেন্স বলে জানা গেছে। মাত্র একটি লাইসেন্স বৈধ বলে জানা যায়। কুতুব উদ্দীনের যেসব ভুয়া প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলো হলো: মেসার্স রুহানী এন্টারপ্রাইজ, সোহানী এন্টারপ্রাইজ, তানিশা এন্টারপ্রাইজ, তাহানি এন্টারপ্রাইজ ইত্যাদি। এসব ভুয়া লাইসেন্সে রপ্তানি করে আসছে। কুতুব উদ্দীনের পক্ষে তার বৈধ ও অবৈধ রপ্তানি ব্যবসা তদারকি করেন সাব্বির মণ্ডল। দীর্ঘদিন ধরে পণ্য রপ্তানির নামে এই চক্র পণ্য আমদানির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছে।

সোমবার ৫ ট্রাক পণ্য জব্দ করে ভারত সরকারের অর্থনৈতিক গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর তথ্যে বিএসএফ ও ভারতীয় কাস্টমস গোপন তথ্য ফাঁস করে দেয়। বেনাপোল বন্দরের ব্যবসায়ী ও সীমান্ত সূত্র জানায়, বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষারত জব্দকৃত ভারতীয় ৫টি ট্রাকে মটরসাইকেল পার্টসের নামে মিথ্যা ঘোষণায় বাংলাদেশে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছিল। ভারত সরকারের অর্থনৈতিক গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাস্টমস ও বিএসএফ ৫টি ট্রাক আটক করে।

আটককৃত গাড়িতে পণ্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ঔষধ, জিলেট ব্লেড, ট্রিমার, শাড়ি কাপড়, ফেব্রিক্স, ইমিটেশন জুয়েলারি, মূর্তি, হাতঘড়ি, চাদর, তালা, এয়ারবার্ড, থালা বাসন, থ্রিপিস, জুতাসহ বিভিন্ন ধরনের সেলুন আইটেম সামগ্রী। জব্দকৃত পণ্যের আনুমানিক মূল্য ১৫ কোটি টাকা বলে জানা গেছে।

সূত্র আরও জানায়, ভুয়া রপ্তানির লাইসেন্সে বাংলাদেশে রপ্তানির সময় এসব পণ্যের কোনো বৈধ কাগজপত্র পায়নি ভারতীয় কাস্টমস। ১৬টি চালানে এসব পণ্য মটরসাইকেল পার্টস বলে রপ্তানি করা হচ্ছিল। এসব পণ্যের বস্তার গায়ে লেখা ছিল: এসআর ইন্টারন্যাশনাল বনগাঁ, এসআর/পারভেজ, এসআর ইন্টারন্যাশনাল, রাজন সেন, জে জে সোহেল, শাকিল এইসপি, আজিম, সিধু, আবু সাইদ ইত্যাদি ট্রান্সপোর্ট চালানের নাম।

এ বিষয়ে কথিত মেসার্স জামান ট্রেডার্স-এর মালিক বেনাপোলের বহুল আলোচিত এবং বিতর্কিত হাসানুজ্জামান ওরফে হাসানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। হাসানুজ্জামান হাসান বেনাপোলের বিত্তিআঁচড়ার আলী আকবরের পুত্র। বর্তমানে হাসান কাগজপুকুর এলাকায় বসবাস করেন।

এ বিষয়ে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ওমর অ্যান্ড সন্স-এর মালিক ঢাকা উত্তরার ইউনুস মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তার নামে লাইসেন্স হলেও এটি তার এক নিকট আত্মীয় জাহিদ হোসেন দেখাশোনা করে। এ বিষয়ে জাহিদ হাসানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বেনাপোলের নিরা এন্টারপ্রাইজের পাশে তার অফিস। তার এই লাইসেন্সটি আজিম উদ্দীন নামে একজন ব্যবসায়ী ব্যবহার করেন। নিজে লাইসেন্স না থাকায় আজিম উদ্দীন ওমর অ্যান্ড সন্স-এর লাইসেন্সে ব্যবসা করেন।

এ বিষয়ে আজিম উদ্দীন বলেন, ‘আমি ওমর অ্যান্ড সন্স নামের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্সে কাজ করি- এটা সঠিক। আমি হাসানুজ্জামানের আমদানিকৃত পণ্য চালান ছাড় করাই- এটাও ঠিক। তবে ভারতে আটক হাসানুজ্জামানের এই পণ্য চালানটি আমার ছাড় করানোর কথা ছিল না। আরও অনেকে হাসানুজ্জামানের পণ্য সিঅ্যান্ডএফ করে, তাদের কারও এই চালানটি ছাড় করানোর দায়িত্ব থাকতে পারে। কার ছাড় করানোর দায়িত্ব ছিল সেটি আমি জানি না।

বাংলাদেশ এবং ভারতীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, ‘বেনাপোল বন্দরের শেড ইনচার্জ, আইআরএম টিম এবং শুল্ক গোয়েন্দাদের যোগসাজশে পূর্ব চুক্তি মোতাবেক শুল্ক ফাঁকি দিতে ভারত থেকে এমন পণ্য চালান আমদানি করা হয়। এটি তারই অংশ। বাংলাদেশে এসব পণ্যের শুল্কায়ন গ্রুপ ও পরীক্ষণ গ্রুপ (আইআরএম) টিম নামমাত্র পরীক্ষণে মোটা টাকার বিনিময়ে খালাস করে দেয়।

স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘদিন যাবৎ বেনাপোলের একটি চক্র সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিতে ভারত থেকে বৈধ পণ্যের সঙ্গে অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে আমদানি নিষিদ্ধ ও অবৈধ পণ্য আমদানি করে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে। আর এসব শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অসাধু আমদানিকারক ও কথিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই ভাড়াকৃত লাইসেন্স ব্যবহার করে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমসের আইআরএম-এর রাজস্ব কর্মকর্তা মনিউর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘শুনেছি ভারতে পণ্য চালান আটক হয়েছে। কার কী পণ্য, বিস্তারিত জানি না।

এ বিষয়ে আইআরএম-এর ডিসি, কাস্টমস হাউজের রাফেজা খাতুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুনেছি ভারতে বড় একটি পণ্য চালান আটক হয়েছে। এখনও এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারিনি। বিষয়টি জানার পর আমাদের কিছু করণীয় থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার শরিফুল হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার নলেজে নেই।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি হতে ৬০০ কোটিতে উন্নীত

এনসিসি ব্যাংক এবং মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মধ্যে কৌশলগত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকার স্টার্টআপ তহবিলে যুক্ত হলো মার্কেন্টাইল ব্যাংক

কিশোরগঞ্জে রাস্তার পাশে থেকে নবজাতকের লাশ উদ্ধার

জয়পুরহাট-২ আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী, অপর দিকে জামায়াতের রয়েছে একক প্রার্থী

বাংলাওয়াশের লক্ষ্যে ডাচদের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ