আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী জহির রায়হানের ৯০তম জন্মবার্ষিকী

বিনোদনডেস্ক: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রযোদ্ধা, সাহিত্যিক, শহীদ বুদ্ধিজীবী জহির রায়হানের ৯০তম জন্মবার্ষিকী আজ ১৯ আগষ্ট ২০২৫। ১৯৩৫ সালের এই দিনে তৎকালীন নোয়াখালী জেলার ফেনী মহকুমার অর্ন্তগত মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৫৩ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হলেও পরের বছর বাংলায় ভর্তি হন। ১৯৫৮ সালে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন সেখান থেকে।
১৯৫০ সালে ‘যুগের আলো’ পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন জহির রায়হান। পরবর্তীতে প্রবাহ, এক্সপ্রেস, খাপছাড়া, যাত্রিক, সিনেমা, সমকাল, চিত্রালী, সচিত্র সন্ধানীসহ বিভিন্ন পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জাগো হুয়া সাবেরা’র সহকারী পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্রে যুক্ত হন তিনি। ছবিটির পরিচালক ছিলেন এ জে কারদার। এরপর পরিচালক সালাউদ্দীন ও এহতেশামের সঙ্গেও কাজ করেন। ১৯৬১ সালে ‘কখনো আসেনি’র মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন জহির রায়হান। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ‘সঙ্গম’ নির্মাণ করেন তিনি। পরের বছরই মুক্তি দেন প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র ‘বাহানা’। তার নির্মিত অন্যান্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘বেহুলা’, ‘জীবন থেকে নেয়া’ প্রভৃতি। এর মধ্যে সবচেয়ে স্মরণ করা হয় ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটিকে। বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা অসাধারণভাবে সিনেমাটিতে ফুটে উঠেছে। যা এখনও অনবদ্য নির্মাণ হিসেবে বিবেচিত সর্বমহলে।
জহির রায়হান সিনেমা নির্মাণ ও সাংবাদিকতার পাশাপাশি ভাষা আন্দোলনেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন তিনি। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে সরাসরি অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কলকাতায় চলে যান। সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। কলকাতায় ‘জীবন থেকে নেয়া’র বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী করেন তখন। চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিত রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা, ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ভূয়সী প্রশংসা করেন তখন। চরম অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও প্রদর্শনী হতে পাগল্পকার-ঔপন্যাসিক হিসেবেও জহির রায়হান শতভাগ সফল। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো ‘হাজার বছর ধরে’, ‘আরেক ফাল্গুল’, ‘বরফ গলা নদী’, ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ প্রভৃতি। ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর কলকাতা থেকে ঢাকায় ফেরেন জহির রায়হান। নিখোঁজ বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি মিরপুরে যান। এরপর আর তিনি ফিরে আসেননি। কোনও খোঁজও পাওয়া যায়নি এখনও।
চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার জহির রায়হানকে ১৯৭৭ সালে মরণোত্তর বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯২ সালে মরণোত্তর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। চলচ্চিত্রে তার সামগ্রিক অবদানের জন্য ১৯৭৫ সালে ১ম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে মরণোত্তর বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
এ উপলক্ষ্যে জহির রায়হান ফিল্ম ইনস্টিটিউট আয়োজন করেছে ‘বাঙালীর স্বাধিকার আন্দোলনে চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের দর্শন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক প্রবন্ধ উত্থাপন, আবৃত্তি সংগীত আলোচনা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। আয়োজনে প্রবন্ধ উত্থাপন করবেন জাতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি আন্দোলনের সদস্য সচিব রুস্তম আলী খোকন। আলোচনা করবেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র সমালোচক বিধান রিবেরু, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদ সেলিম এবং জহির রায়হান পূত্র অনল রায়হান।
মন্তব্য করুন