বাড়িতে শোকের মাতম
স্বপ্ন পূরণ হলো না বগুড়ার বনান্ত’র, নিকলি হাওড় কেড়ে নিল প্রাণ

স্টাফ রিপোর্টার : একাউন্টিং এ অনার্স পড়ার স্বপ্ন পূরণ হলো না পরিবারের সবার প্রিয় বনান্ত’র। কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওরের পানি কেড়ে নিল এই টগবগে এই তরুণের উচ্ছাসমাখা প্রাণ। গতকাল শনিবার বগুড়া থেকে কিশোরগঞ্জের নিকলি হাওরে পরিবার ও বন্ধুদের সাথে বেড়াতে গিয়ে স্পিডবোট থেকে পানিতে পড়ে গিয়ে তার করুণ মৃৃত্যু হয়।
পুরো নাম মো: আশিকুল ইসলাম বনান্ত। বাবা বগুড়া শহরের খান্দার বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কারমাইকেল রোডে অবস্থিত জামেয়া আরাবিয়া এতিমখানা ও মাদরাসার সাধারণ সম্পাদক মো: আশরাফুল ইসলাম (গুদু)।
বাড়ি বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া শহিদনগর এলাকায়। গত শুক্রবার বনান্তর পরিবারসহ বন্ধুবান্ধব, মাদরাসার শিক্ষক মিলে ৪৬ জন কিশোরগঞ্জের নিকলি হাওরে বেড়াতে যায়। গত শুক্রবার সবাই পাগলা মসজিদে রাত যাপন করে। পরের দিন শনিবার পরিবারের সবাইকে সেখানে রেখে বেলা ১১টার দিকে বনান্ত ও তার কয়েকজন বন্ধু মিলে হাওড়ে স্পিডবোটে ঘুরতে বের হয়।
স্পিডবোটে উঠলেও তারা লাইফ জ্যাকেট পড়েনি। এর এক পর্যায়ে যখন বোটটি টার্ন নিতে যায় ঠিক সেই সময় বনান্ত ও তার দুই বন্ধু পানিতে পড়ে যায়। সাথে সাথে অপর বন্ধুরা তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে গেলেও ঘূর্ণাবর্তে পানিতে সে ডুবে যায়। পরে আরও অনেকে এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। এর কিছুক্ষন পর সে মারা যায়। তার অপর দুই জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয়।
আরও পড়ুনবনান্তরের বাবা আশরাফুল ইসলাম বলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিকলী হ্ওারে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটবে তা জানিনা। তিন ছেলে-মেয়র মধ্যে বনান্ত ছিল ছোট। ছোটবেলা থেকেই ও অনেক ভদ্র ও শান্ত। সবার কাছে সেজন্য ও অনেক প্রিয় ছিল। তিনি বলেন অচেনা জায়গায় এমন দুর্ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাদের অনেক সাহায্য করেছেন। তিনি সব সন্তানদের উদ্দেশ্যে বলেন ‘বাবারা সাঁতার না জানলে এমন দু:সাহসি অভিযানে যেও না। এতে করে বাবা-মায়ের বুকটা খালি হয়ে যায়’।
এদিকে শনিবার রাতেই পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় বনান্ত এর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে নিকলী হাওড়ের স্থানীয় প্রশাসন। পরে সেখান থেকে এ্যাম্বুলেন্সে গত শনিবার রাতে বগুড়ায় বনান্তের মরদেহ নিয়ে আসা হয়।
এ সময় বাড়িতে আহাজারি শুরু হয়। মা–বাবা ও আত্মীয়–স্বজনের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। মায়ের আহাজারি দেখে এসময় উপস্থিত কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। চলে শোকের মাতম। এরপর আজ রোববার (১০ আগস্ট) বাদ যোহর বগুড়া আবহাওয়া অফিস সংলগ্ন বাইতুস সালাম জামে মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে দক্ষিণ বগুড়া গোরস্তানে তাকে দাফন করা হয়।
মন্তব্য করুন