রংপুরের তারাগঞ্জে চোর সন্দেহে জামাই শ্বশুরকে পিটিয়ে হত্যা, হত্যা মামলা দায়ের

তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি : রংপুরের তারাগঞ্জে আশীর্বাদের খরচ করতে গিয়ে ভ্যান চোর সন্দেহে ভাগ্নি জামাই ও শ্বশুরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত ১০দিকে উপজেলার কুশিয়া ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলী এলাকায় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন-উপজেলার কুশিয়া ইউনিয়নের ঘনিরামপুর মেডিকেল এলাকার রূপলাল দাস (৪১) এবং রংপুর মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া ভাটা গ্রামের প্রদীপ দাস (৩৫)। তারা সম্পর্কে নাতনি জামাই ও শ্বশুর।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি রূপলাল দাসের মেয়ের বিয়ে ঠিক হয় রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শ্যামপুরের লালচাদ দাসের সঙ্গে। আজ রোববার (১০ আগস্ট) ১০ আগস্ট রূপলাল দাসের মেয়েকে আশীর্বাদ করার জন্য জামাইয়ের পক্ষের লোকজন আসার কথা ছিল। এজন্য তিনি তার ভাগ্নি জামাই প্রদীপ দাসকে নিয়ে ভ্যানে চড়ে বুড়িরহাট বাজারে কেনাকাটার জন্য যান।
বাজার শেষে নাতনী জামাই প্রদীপের ভ্যানে করে তারাগঞ্জ-হাজিরহাট হয়ে বাড়িতে ফেয়ার সময় বুড়িরহাট বাজার এলাকার বটতলী নামক স্থানে পৌঁছলে স্থানীয় কয়েকজন তাদের ভ্যান চোর সন্দেহে আটক করেন। সেখানে আরো কিছু লোকজন জড়ো হন। ভ্যানে থাকা রূপলাল দাসের ব্যাগে কয়েকটি প্লাস্টিকের বোতলে তরল কিছু দেখে এলাকার ভ্যানচালক মেহেদী হাসান ঘ্রাণ নিয়ে তিনি বমি করতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে অজ্ঞান হযে পড়েন।
এসময় জামাই ও শ্বশুরকে ভ্যান চোর সন্দেহ করে মারধর করতে করতে বুড়িরহাট বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। দু’জনেই ভ্যান চোর এমন কথা বলায় বাজারের জনসাধারণ উত্তেজিত হয়ে দুইজনকেই গণপিটুনি দিতে থাকেন। গণপিটুনির এক পর্যায়ে তারা দুজনে গুরুতর আহত হলে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় তারাগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক রূপলাল দাসকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুনএসময় গুরুতর আহত প্রদীপ দাসকে চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তার করা হয়। রূপলাল দাসের ভাই খোকন দাস গতকাল সকালে জানান, তাদের নাতী জামাই হাসপাতালে ভোরে মারা গেছে।
তারাগঞ্জ থানার অফিসে ইনচার্জ (ওসি) এমএ ফারুক জানান, চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে শনিবার রাতেই রূপলালের মৃত্যু হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রদীপ মারা যান। ময়নাতদন্তের পর স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় নিহত রূপলালের স্ত্রী মালতি দাস থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে রূপলাল ও প্রদীপের হত্যার বিচার চেয়ে আজ রোববার (১০ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন নিহতদের স্বজন ও এলাকাবাসী। তাদের অবরোধে মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হলে তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবেল রানা, থানার ওসি এমএ ফারুক ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পাপন দত্তের আশ্বাসে তারা অবরোধ তুলে নেন।
মন্তব্য করুন