বিচারের অপেক্ষায় সিলেটের ৭ শহীদ পরিবার

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের এক বছর পূর্তি আজ। অভ্যূত্থানে সিলেটের শহীদদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোলাপগঞ্জ উপজেলায়।
সেখানে ৪ আগস্টেই প্রাণ হারান ছয়জন। আর সরকার পতনের দিনও অর্থাৎ ৫ আগস্টেও পুলিশের গুলিতে একজন শহীদ হন।
নির্মম হত্যাযজ্ঞের বছর পেরিয়ে গেলেও স্বজন হারানোর বেদনা এখনো ভুলতে পারেনি তাদের পরিবার। ন্যায় বিচার পাওয়ার শঙ্কা আর আক্ষেপ নিয়েই কাটছে শহীদ পরিবারগুলোর দিন।
জুলাই অভ্যূত্থানে গোলাপগঞ্জের নিহত সাতজন হলেন, ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের নিশ্চিন্ত গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম (২৪), একই ইউনিয়নের দক্ষিণ রায়গড় গ্রামের মৃত ছুরাই মিয়ার ছেলে জয় আহমদ (১৮), পশ্চিম আমুড়া শিলঘাট গ্রামের কয়ছর আহমদের ছেলে সানি আহমদ (২২), ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের বারকোট গ্রামের মৃত মকবুল আলীর ছেলে তাজ উদ্দিন (৩৯), একই ইউনিয়নের দত্তরাইল গ্রামের আলা উদ্দিনের ছেলে মিনহাজ আহমদ (২৩), পৌর এলাকার উত্তর ঘোষগাঁও গ্রামের মোবারক আলীর ছেলে গৌছ উদ্দিন (৩৫) ও কানিশাইল গ্রামের মো.পাবেল আহমদ কামরুল (২৩)।
তাদের মধ্যে ৫ আগস্ট সিলেট নগরীর কীন ব্রিজ এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন পাবেল। বাকি ছয়জন শহীদ হন ৪ আগস্ট।
ছানি আহমদের বাবা কয়ছর আহমদ বলেন, ‘আমাদের পরিবারের অবস্থা ভালো নয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলো সানি। সে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতো। তাকে হারিয়ে পরিবারে হতাশা বিরাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর মামলা নিয়ে অনেক নাটকীয়তা হয়েছে। বর্তমানে দুটি মামলা রয়েছে। একবছর পার হলেও কোনো মামলারই অগ্রগতি হয়নি।
আরও পড়ুনশহীদ গৌছ উদ্দিনের বড় ভাই আবুল কালাম বলেন, ‘ছাত্রদের উপর নির্মম নির্যাতন দেখে আমার ভাই বাড়ি থেকে বের হয়েছে। সে কোনো রাজনৈতি দলের কর্মী নয়। মানবিকতার টানে সে শহীদ হয়েছে। কিন্তু একবছর পরও ভাইয়ের হত্যার বিচার শুরু হয়নি। কবে শুরু হবে, তাও জানা নেই।
তিনি বলেন, আমার ভাইকে তো আর আমরা ফিরে পাবো না। আমার ভাইসহ যারা মারা গেছেন, অন্তত তাদের হত্যাকারীদের বিচারটা যেন সঠিক ও দ্রুত হয়।
শহিদ পাভেলের বাবা রফিক উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে খুবই ভালো ছিল। একজন কোরআনের হাফেজ। ২৮ পারা মুখস্থ করেছে। ছেলে হত্যার পর মামলা করেছি। কিন্তু এখনও বিচার পাইনি। আমরা প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচার দাবি করছি।
নির্মম হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় হত্যা মামলাসহ একাধিক হত্যা চেষ্টা মামলা হয়েছে। মামলার অনেক আসামি প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছেন। আবার অনেকে দিয়েছেন গাঁ ডাকা। তবে কয়েকজন গ্রেফতার হলেও বর্তমানে অনেকে জামিনে রয়েছেন।
গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মোল্যা বলেন, ‘আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যহত রয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ পুলিশ ছাড়াও মামলা সিআইডি ও পিবিআইতে রয়েছে। আশা করা যায় দ্রুত মামলার চার্জশীট দেওয়া হবে।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিলটন চন্দ্র পাল বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন সব সময় শহীদ পরিবারের পাশে আছে। তাদের আত্মত্যাগ কখনো ভোলার নয়। তাদের যে কোনো প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন সব সময় পাশে থাকবে।
মন্তব্য করুন