জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে বড় বোনের অপরাধে দুই বছর গৃহবন্দী ছোট বোন

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি : আক্কেলপুরে লিজা নামে এক তরুণীকে দুই বছর গৃহবন্দী করে রেখেছিলেন তার বাবা। গত রোববার প্রতিবেশিদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের সহযোগিতায় মুক্তি পেয়েছেন ওই তরুণী।
অভিযোগ রয়েছে, লিজার বড় বোন বাবার অমতে পালিয়ে বিয়ে করার পর ক্ষিপ্ত হয়ে তার বাবা তাকে গৃহবন্দী করে রেখেছিলেন। শুধু তাই নয়, লিজাকে মাঝে মাঝে চেতনানাশক ইনজেকশন প্রয়োগ করে দিনের পর দিন অজ্ঞান করে রাখা হতো। গত রোববার আক্কেলপুর পৌর সদরের ওই তরুণীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সকল জানালা দরজা বন্ধ, ওই তরুণী যে ঘরে বন্দী ছিলেন সেই ঘরের দরজা জানালায় লোহা ফুটিয়ে টিন ও কাঠ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছিলো। লিজার ঘরে একটি ছোট চার্জার ফ্যান আর একটি বাতি ছাড়া আর কিছু ছিলো না। এছাড়াও বাড়ির ভিতরে নেই কোন তেমন বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা।
প্রতিবেশিরা অভিযোগ করেন, এসএসসি পরীক্ষার পর লিজাকে গৃহবন্দী করে রাখেন তার বাবা ডা. এনামুল হক। মেয়ে যেন কারো সাথে কথা না বলে এজন্য মেয়েকে গৃহবন্দী করার পাশাপাশি মাঝে মাঝে চেতনানাশক ইনজেকশনসহ বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করা হতো।
তারা বলেন, এনামুলের প্রথম স্ত্রী কয়েক বছর আগে আত্মহত্যা করেন। এরপর তার বড় মেয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন। ছোট মেয়ে লিজা যেন এমন ঘটনা না ঘটাতে পারে সেজন্য তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। মেয়েটি গৃহবন্দী থাকতে থাকতে বর্তমানে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে বসেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আক্কেলপুর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের মন্ডলপাড়া মহল্লার এনামুল হক আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি প্রজেক্টে মাস্টার রোলে চাকরি করতেন। চাকরি শেষে তার বাড়িতে ডিসপেনসারি খুলেন। কয়েক বছর আগে তার প্রথম স্ত্রী আত্মহত্যার পর এনামুল দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এরপর বড় মেয়ে তার অমতে বাড়ি থেকে পালিয়ে তার প্রেমিককে বিয়ে করেন।
আরও পড়ুনএরপরই সে ক্ষিপ্ত হয়ে ছোট মেয়ে লিজাকে একটি ঘরে তালাবন্ধ করে রেখে প্রতিদিন তার নিজ গ্রামে যেতেন জমি দেখাশোনা করতে। মেয়ে যাতে কারো সাথে কথা না বলতে পারে সে জন্য দরজা জানালা দরজা বন্ধসহ দরজা জানালায় টিনশেডের কাঠ দিয়ে ঘিরে রাখেন। মাঝে মধ্যে চেতনানাশক ইনজেকশন দিতেন। এমনকি মেয়ের মাথার চুল কেটে দিয়েছেন।
রিভা আক্তার নামে তাদের এক প্রতিবেশি জানান, তার মেয়ে রিয়া ও এনামুলের মেয়ে লিজা এক সঙ্গে পড়াশোনা করত। লিজা মেধাবী ছাত্রী ছিল। লিজাকে গৃহবন্দী করে নির্যাতন করতেন কারো সাথে কথা বলা তো দূরের কথা দেখা করতে দিতেন না। সে জন্য বাড়িতে তালা দিয়ে নির্যাতন ও ঘুমের ওষুধসহ ইনজেকশন দিতেন। এমনকি মেয়ের চুল কেটে নেড়া করেও রেখেছিলেন। এনামুল হক জানান, তিনি সকালে নাস্তা করে কাজের জন্য বাড়িতে তালা দিয়ে চলে যান। পর্দার জন্যই তিনি এমনটি করেন।
আক্কেলপুর থানার ওসি তদন্ত মমিনুল হক জানান, অভিযোগ পেয়ে এসআই গনেশ চন্দ্রকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। দিনের পর দিন বাবার অমানবিক আচরণের কারণে মেয়েটি প্রায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে বসেছে। বসবাসের সামাজিক পরিবেশ এবং মেয়েকে দ্রুত চিকিৎসার সুব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
মন্তব্য করুন