বগুড়ায় ছুরিকাঘাতে সাত মাসে ১১ খুন উদ্বিগ্ন পুলিশের রাস্তায় লিফলেট বিতরন

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ায় প্রেমে ব্যর্থ হয়ে এক কলেজ শিক্ষার্থী স্কুল ছাত্রী প্রেমিকার বাড়িতে প্রবেশ করে তার পেটে ছুরিকাঘাত করে। এদৃশ্য দেখে স্কুল ছাত্রীর দাদী এবং ভাবী উদ্ধারে এগিয়ে আসলে তাদেরকেও গলায় ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে ওই কলেজ শিক্ষার্থী। এতে মারা যান দাদী লাইলী বেওয়া (৭৫) ও তার নাত বউ হাবিবা ইয়াসমিন (২১)।পেটে ছুরিকাহত স্কুল ছাত্রী বন্যা এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই জোড়া খুনে ঘটনায় গ্রেফতার কলেজ শিক্ষার্থীকে আদালতের নির্দেশে পাঠানো কিশোর সংশোধনাগারে। গত ১৬ জুলাই রাতে বগুড়া শহরের ইসলামপুর (হরিগাড়ি) পশ্চিমপাড়ায় এঘটনা ঘটে।
আর এভাবেই বগুড়ায় ছুরি-চাকুর অপব্যবহার দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। গত সাত মাসে ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন ১১ জন।আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪২ জন। ছুরি- চাকুর অপব্যবহার বেড়ে যাওয়ার ঘটনা উদ্বিগ্ন বগুড়া জেলা পুলিশ। একারনে জনসচেতনতা বাড়তে রাস্তায় নেমেছেন পুলিশ সুপার নিজেই। তিনি শহরের জনাকীর্ন এলাকা ঘুরে সচেতনামূলক লিফলেট বিতরন করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টা থেকে ঘন্টাব্যাপী পুলিশ সুপার লিফলেট বিতরন করেন।
“ছুরি- চাকু সন্ত্রাস রুখতে হবে এখনই,নিরাপদ বগুড়া,আমাদের হাতেই” এই শ্লোগান সম্বলিত জেলা পুলিশের লিফলেটে ছুরি- চাকু বহন ও অপব্যবহার থেকে দুরে থাকার আহবান জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টার দিকে পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে শহরের প্রানকেন্দ্র সাতমাথা এলাকা থেকে লিফলেট বিতরন শুরু করেন। তিনি পায়ে হেটে সাতমাথা থেকে জিলা স্কুল, শহীদ খোকন পার্ক,সার্কিট হাউজের মোড়,কোর্ট চত্বর,জলেশ্বরীতলা কালিবাড়ি মোড়,জেলাখানার মোড়,পৌরসভার মোড় ডিসি অফিসের মোড় ঘুরে এসপি অফিসের সামনে রাস্তায় লিফলেট বিতরন করেন। এসময় পথচারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেনী- পেশার নারী পুরুষের হাতে লিফলেট তুলে দিয়ে এবং ছুরি- অপব্যবহার প্রসঙ্গে কথা বলেন।
আরও পড়ুনবগুড়া জেলা পুলিশের তথ্য অনুয়ায়ী চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত জেলায় খুন হয়েছেন ২৮ জন।এরমধ্য ১১ জন খুন হয়েছেন ছুরি- চাকুর আঘাতে। আরো ৪২ জন আহত হয়েছেন ছুরি চাকুর আঘাতে। জেলার বিভিন্ন থানায় ছুরি- চাকুর ঘটনায় মামলা হয়েছে ৬১ টি।গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯২ জনকে। ছুরি- চাকুসহ ধারাল অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ১৯৩ টি।
গ্রেপ্তারকৃতদের অধিকাংশ স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী। তুচ্ছ ঘটনায় তারা ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটায়। বগুড়া শহরের বিভিন্ন দোকানে ছুরি- চাকু সহজেই কিনতে পাওয়া যায়।বিশেষ করে অনলাইনে অর্ডার করে কুরিয়ার সার্ভিসের হোম ডেলিভারির মাধ্যমে ছুরি- চাকু পৌছে দেয়া হচ্ছে কিশোর গ্যাং এর সদস্যদের হাতে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন,বগুড়ায় ছুরি- চাকুর অপব্যবহার রীতিমত উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একে অপরকে ছুরি মারার ঘটনা ঘটছে।এসব ঘটনায় প্রানও চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন,আইন প্রয়োগ করে ছুরি- চাকুর অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব না।এজন্য দরকার প্রতিটি পরিবার থেকে সন্তানদেরকে সচেতন করা। আর একারনেই আমরা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে রাস্তায় নেমে লোকজনকে লিফলেট বিতরনের মাধ্যমে সচেতন করছি।
পুলিশ সুপার আরো বলেন,যত্রতত্র ছুরি- চাকু বিক্রি বন্ধে পুলিশের অভিযান চলবে।পাশাপাশি অনলাইনে ছুরি- চাকু বিক্রি বন্ধে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন