ভিডিও সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

নাটোরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা কমোলা নদী এখন দখল-দূষণে মৃতপ্রায়

নাটোরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা কমোলা নদী এখন দখল-দূষণে মৃতপ্রায়। ছবি : দৈনিক করতোয়া

নাটোর সংবাদদাতা : নাটোরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত এক সময়ের খরস্রোতা কমোলা নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে। দখল-দূষণে নদীটি এখন মৃতপ্রায়। এক সময় প্রবাহিত নদীকে ঘিরেই তিন জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছিল হাটবাজার ও ব্যবসাকেন্দ্র। নদীকে কেন্দ্র করেই বহু মানুষ জীবন-জীবিকার পথ খুঁজে পেয়েছিলেন। নদীর পানি দিয়েই কৃষক দুই পাড়ের শত শত হেক্টর জমিতে ধান, গম, পাট, আখসহ নানান ফসল ফলাতেন।

এখন সেটি যেন শুধুই স্মৃতিকথা। সেই খরস্রোতা নদীটি এখন মরা খালে রূপ নিয়েছে। এর তলদেশে চাষ করা হচ্ছে বিভিন্ন ফসল। দখল-দূষণ আর অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলছেন, নদীর বুকে পলি জমে উঁচু হয়ে গেছে। দখল আর দূষণের কারণে দুই পাড় চেপে গেছে। ফলে খরস্রোতা কমোলা নদী আজ পরিণত হয়েছে মরা খালে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই অঞ্চলে ফসল উৎপাদন ও অকাল-বন্যার কবল থেকে রক্ষার জন্য কমোলা নদীর মুলাডুলী, রাজাপুর ও চাটমোহরে ক্রস বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ফলে প্রায় তিন যুগ সময় পদ্মার পলিযুক্ত পানির স্বাভাবিক প্রবাহ কমোলা নদীতে বন্ধ থাকায় নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া দুইপাড়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর নির্মাণ করে নদী দখল করে চলেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

কমোলা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম মিজানুর রহমান বলেন, রাজশাহীর পদ্মা থেকে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত কমোলাসহ প্রায় ১০টি নদী আছে। পদ্মা থেকে বাঘাবাড়ি ২২০ কিলোমিটার নদীপথের মধ্যে দখল করে ৪৬টি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।

নাটোরে ও রাজশাহীর চারঘাট এলাকায় দুটি স্লুইসগেট হয়েছে। এগুলো অপসারণ করা হলেই নদী আবারও প্রাণ ফিরে পাবে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, অচিরেই স্থাপনা ও স্লুইসগেট ভেঙে ফেলা হবে। যদি তা না হয়, তাহলে আন্দোলন গড়ে তুলবো আমরা।

বড়াল নদীর বিভিন্ন স্থানে স্লুইসগেট ও বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান বড়াইগ্রাম উপজেলার আজম আলী  কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মো: আব্দুস সালাম বলেন, ‘বিভিন্ন স্থানে  স্লুইসগেট ও বাঁধ নির্মাণের ফলে ক্রমান্বয়ে বড়াল নদীসহ অন্যান্য নদী শুকিয়ে খালে পরিণত হয়েছে। এখন কমোলা নদীর তলদেশে কৃষি আবাদ হয়। বর্ষায় পানি জমলেও শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়।

আরও পড়ুন

রাজাপুরের কৃষক কামাল আলী বলেন, কমোলা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। এক সময় কমলা নদীর পানি দিয়ে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ জমিতে ফসল ফলাতেন। এখন নদীতে নলকূপ বসিয়ে ধান চাষ করতে হয়।

প্রতিদিনের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এখনই সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে পুনঃখনন না করলে কমোলা নদী তার ঐতিহ্য হারিয়ে বিলীন হয়ে যেতে পারে।’ কয়েন গ্রামের কৃষক রেজাউল বলেন, ‘ কমোলা নদীতে বর্তমানে পানি নেই। ‘আমার বাবাও ব্যবসায়ী ছিলেন। এই নদী দিয়ে আগে নৌকাবোঝায় করে মালামাল আনা নেওয়া হতো।

পলি জমে নাব্যতা সংকটের কারণে বছরের অধিকাংশ সময় নদীটি ধু ধু বালুচরে রূপ নিয়েছে। এতে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছে কৃষকরা। নদীর বিভিন্ন  স্থানে বাঁধ নির্মাণের ফলে শুকিয়ে খালে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন নদীর পাশে বসবাসকারী কাজল  হোসেন।

নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রিফাত করিম বলেন, বড়াল পুনঃখননের জন্য ইতোমধ্যে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি শেষে ৫২৮ কোটি টাকার একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে প্রথম ফেইজে বড়ালের ৪৮ কিলোমিটার, নারদ নদের ৪৩ কিলোমিটার, মুসাখান নদীর ছয় কিলোমিটার পুনঃখনন করা হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য নদিগুলোও খনন করা হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া পৌরসভার ৪৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

বগুড়ার শিবগঞ্জের রজীব এন্ড ব্রাদার্স অটো রাইস মিলকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফতার চার : দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার

সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ

পাবনা মানসিক হাসপাতালে ৯ দালাল আটক, কারাদন্ড

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১০টি চোরাই মোটরসাইকেলসহ আন্ত:জেলা চোরচক্রের মূলহোতা গ্রেফতার