মহাসড়ক অবরোধ : আহত ৩
বগুড়া শাজাহানপুরে গোহাইল ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে দিনভর হট্টগোল অধ্যক্ষের মটরসাইকেলে আগুন

শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার শাজাহানপুরে গোহাইল ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যক্ষের পুনর্বহালকে কেন্দ্র করে গতকাল মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠান চত্বরে সারাদিন হট্টগোল, বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ ও মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন শিক্ষার্থীসহ তিনজন আহত হয়েছেন। অধ্যক্ষের পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আগুনে ভষ্ম করে দিয়েছে অধ্যক্ষের মটরসাইকেল।
স্থানীয়রা জানান, গোহাইল ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেন মুকুলের বিরুদ্ধে বেশকিছ ুদিন যাবত অর্থ আত্মসাতসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে দুর্নীতির অভিযোগে অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলসহ মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। আন্দোলনের মুখে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেন মুকুল। এমতাবস্থায় একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে গত বছরের ২৭ আগস্ট প্রভাষক শহিদুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয় উপজেলা প্রশাসন। অপরদিকে অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেন মুকুলের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়।
এক পর্যায়ে অধ্যক্ষ মোতাহার আলী মুকুল স্বপদে দায়িত্ব পালন করতে মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কয়েকজন বহিরাগতকে সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠানে ঢোকেন। প্রতিষ্ঠান চত্বরে অধ্যক্ষর উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে শিক্ষার্থীরা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে অধ্যক্ষের পক্ষে-বিপক্ষে স্লোগানসহ বিক্ষোভ করতে থাকেন। একপর্যায়ে মারপিট শুরু হয়। এতে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রিয়াদের মাথা কেটে গিয়ে রক্ত ঝড়তে থাকে এবং মিজানুর রহমান মতিন নামের এক অভিভাবক মারপিটের শিকার হন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে অধ্যক্ষ মুকুল তার কক্ষে ঢুকে দরজা আটকে দিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা বগুড়া-নাটোর মহাসড়ক অবরোধের লক্ষ্যে দুপুর ১টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বেড়িয়ে পড়ে এবং বেলা সোয়া ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে অধ্যক্ষ মুকুলের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এসময় মেহেদী হাসান (২৩) নামের এক ব্যক্তি বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর মারপিটের শিকার হন। অবরোধের কবলে পড়ে সড়কের দু’পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে।
উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশ সকাল থেকেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। বেলা পৌনে ৩টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঘটনাস্থলে পৌঁছেন এবং শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নিবেন বলে তিনি শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করেন। এর কিছু পরেই কলেজের হট্টগোলের জের ধরে শালিখা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে ভ্যানচালক নাসেরকে (২৮) ছুরিকাঘাত করতে তেড়ে আসেন প্রতিবেশি ছমস উদ্দিনের ছেলে এনামুল (৫৩)। সাথে সাথে স্থানীয় লোকজন এনামুলের হাত থেকে ছুরি কেড়ে নেয় এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে সংবাদ দিলে গ্রাম পুলিশ আব্দুল হামিদ উক্ত ছুরি নিজ হেফাজতে নিয়ে ইউপি কার্যালয়ে পৌঁছে দেন।
মারপিটে আহত দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রিয়াদ জানান, দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ মুকুল বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে কলেজে ঢুকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। অপসারণ করাসহ তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় দাবি আদায়ে ক্লাস বর্জন করে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নামবে।অপরদিকে অধ্যক্ষ মোতাহার আলী মুকুল জানান, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রকৃত সত্য বেড়িয়ে আসবে।
আরও পড়ুনশাজাহানপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, গোহাইল স্কুল এন্ড কলেজে অধ্যক্ষ পুনর্বহালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন সংবাদেরভিত্তিতে সকাল থেকেই সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এখন পর্যন্ত মারপিট কিংবা মটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কোন পক্ষ অভিযোগ করেনি।
শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তাইফুর রহমান জানান, উদ্বুধ পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন