প্ল্যানচেটের মাধ্যমে আত্মার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব?

শুরুতেই একটি জিনিস পরিষ্কার করে নেয়া দরকার। প্ল্যানচ্যাট আর প্রেতসাধনাকে অনেকে একসাথে গুলিয়ে ফেলেন এবং দুটোকে একই পদ্ধতি বলে মনে করেন। এ দুটি মূলত ভিন্ন দুটি চর্চা। প্ল্যানচ্যাটে শুধুমাত্র মৃতদের আত্মাকে আহ্বান করা হয়ে থাকে বা তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। অপরদিকে, প্রেতসাধনা করে মূলত শয়তানের অনুসারীরা। তারা অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে এবং শয়তানের উপাসনা করে। প্রেতসাধকরা মূলত শয়তানের উপাসনার মাধ্যমে নিজেরা শয়তানের ন্যায় শক্তিশালী হতে পারবে- এ ধরনের বিশ্বাস থেকে চর্চা করে থাকে। অপরদিকে, প্ল্যানচ্যাটে কোনো ভিন্ন শক্তির উপাসনা হয় না। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মৃতদের আত্মার সাথে যোগাযোগ স্থাপনের একটি চেষ্টামাত্র।
প্ল্যানচ্যাটের মাধ্যমে আত্মাদের ডেকে আনার ধারণাটি বেশ পুরনো। মূলত আঠারো শতক থেকেই প্ল্যানচ্যাট নিয়ে গবেষণা ও মৃতদের আত্মাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু হয়। ১৮৫৩ সালে অ্যালান কারডেক নামে এক ফরাসি ব্যক্তি সর্বপ্রথম আত্মাকে ডেকে আনার উপায় আবিষ্কার করেন বলে দাবি করেন। আত্মা নিয়ে বিজ্ঞানীদেরও যথেষ্ট কৌতূহল ছিলো বিধায় বিভিন্ন সময় আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গঠিত হয়েছিল একাধিক আত্মিক অনুসন্ধান কমিটি। ১৮৮২ সালে লন্ডনে গঠিত আত্মিক সমিতির সভাপতি ছিলেন খোদ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত প্রফেসর হেনরি সি জুইক। তার সহকারীদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আর্থার জে বেলফোর। পরবর্তীতে মৃত আত্মাদের সাথে যোগাযোগের এই চর্চা ছড়িয়ে পড়ে এশিয়া, আমেরিকাসহ আরো অনেক দেশে।
আত্মার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে চাই একটি প্ল্যানচেট বোর্ড৷ গোল টেবিলের ওপর বোর্ডটি রেখে চারদিকে চারটি চেয়ারে চারজন বসেন৷ বোর্ডের এক প্রান্তে জ্বলে একটি মোমবাতি৷ এবার যে আত্মাকে ডাকতে চান, তার নাম নিয়ে মনে মনে ডাকতে থাকুন৷ চারজনের মধ্যে যাকে মিডিয়াম বা মাধ্যম বানাতে চাইবেন, সেই আত্মাকে তাঁর মধ্যে প্রবেশ করতে বলুন৷ অবশ্যই একে অপরের হাত ধরে থাকবেন৷ ব্যস! বাকি অভিজ্ঞতাটা নিজেকেই অর্জন করতে হবে৷ আরও একটি উপায়ে প্ল্যানচেট করা যায়৷ একটি সাদা কাগজে সমস্ত বর্ণ বা লেটার এবং সংখ্যা লিখে রাখুন৷ সেই কাগজের মাঝে একটি তামার কয়েন রাখতে হবে৷ কয়েনটির ওপর তিনজন নিজেদের তর্জনী আলতোভাবে স্পর্শ করিয়ে রাখুন৷ এবার যাকে এ দুনিয়ায় আনতে চান তার একটি ছবি সামনে রেখে তাকে ডাকতে থাকুন৷ অন্ধকার ঘরে যেন সেই সময় একটি মোমবাতির আলো বাদে আর কোনও আলো না থাকে৷
এবারে চলুন জেনে নেই প্ল্যানচ্যাটে নিয়মিত ব্যবহার করা ওইজা বোর্ডের (Ouija Board) ব্যাপারে। এটি প্ল্যানচ্যাটে ব্যবহার করা হলেও ডাকিনীবিদ্যার কাজেও অনেক সময় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ওইজা বোর্ডের আবির্ভাব সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হয়, বহু শত খ্রিস্টপূর্বাব্দে এর আবির্ভাব হয়। প্রাচীন গ্রিক বা রোমানদের সময় থেকে এর ব্যবহার চলতে থাকলেও ঝামেলা বাধে যিশুখ্রিস্টের সময়কালে। যিশুখ্রিস্ট যখন নিজেই মৃতদের মাঝে আত্মা ফিরিয়ে দেয়া বা আত্মাদের সাথে যোগাযোগ করার সক্ষমতা প্রকাশ করেন তখন প্ল্যানচ্যাট চর্চাকারীরা অনেকটা তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরুপে আবির্ভূত হয়। এ নিয়ে যিশুর অনুসারী ও প্ল্যানচ্যাট চর্চাকারীদের মাঝে দ্বন্দ্ব দেখা যায়। এ কারণে দীর্ঘকাল খ্রিস্টানদের বড় একটি অংশ প্ল্যানচ্যাটকে খ্রিস্টধর্মের পরিপন্থী হিসেবে মনে করতো। ফলে অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে পড়ে প্ল্যানচ্যাটে বিশ্বাসীরা। দীর্ঘদিন এ ধরনের টানাপোড়েন থাকার পরে মূলত আঠারো শতকের মাঝামাঝিতে এটা আত্মা বিশারদদের মাধ্যমে আধুনিক বিশ্বের মানুষদের নিকট ধীরে ধীরে আবার পরিচিতি পেতে শুরু করে।
মন্তব্য করুন