দুই মণ আলুর দামে এক জোড়া জুতা

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি : ‘কিবারে, এবার আলুর দামতো ওঠোইছে না। বেচলেই অর্ধেক লস। হাতে টেকাও নাই, কয়দিন পর ঈদ। ছল-পল (ছেলে-মেয়ে) ঘরে নয়া কাপড়ের জন্য বারবার বলোছে (বলছে)। কিভাবে ঈদ পার করমু, খুব টেনশন হওছে।’ আজ বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সকালে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট হাটে কথাগুলো বলছিলেন ধারা-গাংগট গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম।
প্রতিবছর উৎপাদিত ফসল বিক্রির লাভের টাকায় সারা বছরের খরচ, পরিবারে জন্য দুই ঈদের কেনাকাটাসহ সংসার খরচ করেন। কিন্তু এবার লাভ তো দূরের কথা, আলু উত্তোলনের পর বিক্রি করতে গেলেই লোকসান গুনতে হচ্ছে। সবার হাহাকার শুরু হয়েছে।
তরিকুল ইসলাম জানান, গত আমন মৌসুমে ধান বিক্রির টাকা ও এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এবার ৬৫ শতক জমিতে আলু চাষ করেছেন। আলু উৎপাদনে তার প্রতিকেজিতে ২১-২২ টাকা খরচ হলেও বর্তমানে ৯-১০ টাকা কেজি দরে সেই আলু কেনাবেচা হচ্ছে। হিমাগারে জায়গা সংকট থাকায় বর্তমানে আলুর বাজারে আরও ধস নেমেছে। এ অবস্থায় আলু বিক্রি করলে অর্ধেকের বেশি লোকসান গুনতে হবে। শুধু তরিকুল নয়, কালাই-পাঁচবিবিসহ জেলার অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষকদেরই এবার একই অবস্থা। আলুর দাম না থাকায় ঈদের আমেজ তাদের মধ্যে নেই বললেই চলে।
প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার আলু বেচাকেনার জেলার বৃহৎ পুনট হাটের দিন। এই দুদিনে পুরো উপজেলা ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি উপজেলার মানুষ কেনাকাটা করতে এ হাটে আসেন। সরেজমিনে ঘুরে বিভিন্ন কাপড়ের মার্কেট গিয়ে দেখা যায়, দোকানিদের তেমন কর্মব্যস্ততা নেই। দু/একটি দোকানে কয়েকজন ক্রেতার দেখা মিললেও, প্রায় দোকানেই অলস সময় পার করছেন কর্মচারীরা।
আরও পড়ুনপাঁচবিবির চাটখুর গ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিন চাঁনপাড়া বাজার থেকে ছেলের জন্য জুতা কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি বলেন, ‘দুই মণ আলু বেঁচে ছেলের এক জোড়া জুতা কিনিছু। বাজারে জুতা-কাপড়ের এত দাম, কিন্তু হামাগেরে আলুর দাম নাই। যত সব ঝামেলা হামাগেরে মত কিষান-পাটের’।
ক্ষেতলাল উপজেলার মুন্দাইল গ্রামের আরেক কৃষক আশরাফ আলী বলেন, ‘৩০ শতক জমি বর্গা লিয়ে আলু নাগাছুনু। তিন বস্তা (৬০ কেজি) আলু আজ বৃহস্পতিবার পুনট হাটোত বেচার জন্য গেছুনু। অদাঅদি (অর্ধেক দাম) দাম করায় বাড়িত ফিরে আনিছু। আলুর দাম তো ওঠোইছে না, ঈদ করমো কী দিয়ে ?’
মন্তব্য করুন