সংরক্ষণের জায়গা নেই
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে হিমাগারে আলু রাখতে ছয় উপজেলার কৃষক চরম বিপাকে

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুর দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র হিমাগার ফুলবাড়ী কোল্ডস্টোরেজে আলু সংরক্ষণের জায়গা না পেয়ে ৬ উপজেলার কৃষক আলু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। অপরদিকে আলু রাখতে তোড়জোড় চালাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল। হাকিমপুর উপজেলার খট্টামাধবপুর ডাঙ্গাপড়ার কৃষক মোমিনুল ইসলাম।
এবার তিন বিঘা জমিতে আলু আবাদ করেছেন। একটি ট্রাক্টরে করে ১৮ বস্তা আলু নিয়ে ফুলবাড়ী উপজেলার রাঙামাটিস্থ ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজে এসেছেন। সিরিয়ালের কোনো স্লিপ পাননি। আদৌ আলু হিমাগারে রাখতে পারবেন কি না? তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। জায়গা না পেলে হয়তো ফিরে যেতে হবে তাকে। এতে একদিকে সময়ের অপচয়, অন্যদিকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি গাড়ি ভাড়া। একে তো আলুর দাম কম, অপরদিকে সংরক্ষণের জায়গার অভাবে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
কৃষক মোমিনুল ইসলামের মত এমন ভোগান্তিতে পড়েছেন একই এলাকার কৃষক এরশাদ আলী, ডাঙ্গাপাড়া এলাকার জাকিরুল ইসলাম, কবির হোসেন, পার্বতীপুরের ভবানীপুর এলাকার মো. নূরুন্নবীসহ অন্তত শতাধিক আলু চাষি।
সরেজমিনে দেখা যায়, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী ক্লোল্ড স্টোরেজের ভেতরে অন্তত শতাধিক ট্রাক্টর, ভটভটি ও ব্যাটারি চালিতভ্যান ভর্তি আলু নিয়ে অপেক্ষায় কৃষক। হিমাগারের ভেতরের অংশের পাশাপাশি ভেতরের ঢোকার অপেক্ষায় বাইরেও অবস্থান করছে অন্তত শতাধিক আলুর বস্তা ভর্তি ট্রাক্টর। মোমনিুল ইসলাম বলেন, আলুর গাড়িতে ঘুমাতে হচ্ছে। ড্রাইভার-হেলপারও নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। এবার আলুর ফলন ভালো হলেও দাম কম। ফলে পরবর্তী সময়ে ভালো দাম পেতে সবাই হিমাগারে আলু রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
কৃষকদের মধ্যে অনেকেরই অভিযোগ, হিমাগারে আলু ভর্তি করতে কৃষকদের চেয়ে ব্যবসায়ীদের বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে হিমাগার কর্তৃপক্ষ। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে দ্রুত সিরিয়াল পেতে সহায়তা করছেন হিমাগারের কমিশন এজেন্টরা। যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করছেন ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক মাহামুুদুল হাসান।
আরও পড়ুনদিনাজপুর জেলার দক্ষিণ-পূর্বাংশের ফুলবাড়ী, পার্বতীপুর, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট এই ছয় উপজেলার মধ্যে একটি মাত্র হিমাগার রয়েছে ফুলবাড়ীতে। মৌসুমের শুরু থেকেই হিমাগারের সামনে আলু বোঝাই গাড়ির দীর্ঘ সারি। কেউ উৎপাদিত আলু নিয়ে নিজে এসেছেন, কেউবা এজেন্টের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন।
হাকিমপুর উপজেলার লোহাচড়া ডাঙ্গাপাড়া এলাকার কৃষক নূরুন্নবী বলেন, যে পরিমাণ জমিতে আলু আবাদ করেছেন তার বেশির ভাগ আলু হাটবাজারে বিক্রি করে উৎপাদন খরচ মিটিয়েছেন। শুনেছেন এবার হিমাগারে জায়গা নেই, তারপরও এলাকার কয়েকজন কৃষক তিন ট্রাক্টরে (৫৫ কেজি ওজনের) ১২০ বস্তা আলু নিয়ে এসেছেন ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজে।
গাড়ি ভাড়া দ্বিগুণ পড়েছে, তারপরও লাভের আশায় আলু রাখতে চান। কারণ এখন বাজারে আলুর দাম প্রকার ভেদে প্রতি কেজি ১১ থেকে ১৩ টাকা, পরে যদি দাম বাড়ে। দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর জেলায় আলু আবাদ হয়েছিল ৪৫ হাজার ৮২৮ হেক্টর জমিতে। এবার সেখানে ৫৬ হাজার ৬৫১ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৪৯ মেট্রিক টন। এরমধ্যে ফুলবাড়ী উপজেলাতেই আলু আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ৮১৫ মেট্রিক টন।
ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য দিয়ে হিমাগারে আলু ঢোকানো হচ্ছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক মাহমুদুল হাসান বলেন, সর্বোচ্চ পর্যায়ে কৃষকদের আগ্রাধিকার দিয়েই আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কোল্ড স্টোরেজের ধারণ ক্ষমতা ৬০ কেজি ওজনের ১ লাখ ৬০ হাজার বস্তা। ইতোমধ্যে আলু সংগ্রহ ধারণ ক্ষমতা পূরণ হয়েছে।
মন্তব্য করুন