তিস্তা নদীতে পানির অভাবে উত্তরের পাঁচ জেলায় ১০ হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদন ব্যাহত

রংপুর প্রতিনিধি : তিস্তা নদীতে পানির অভাবে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। নদীতে পানি না থাকার কারণে জেলেদের জীবন জীবিকা থেকে শুরু করে নৌ-চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে প্রতি বছর বোরো মৌসুমে সেচ সংকট দেখা দেওয়ায় কৃষকদের উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হচ্ছে।
তিস্তা নদী বেষ্টিত এলাকার কৃষকেরা জানান, বর্ষাকালে পানির স্রোতে তাদের ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আর শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে ঠিকমতো জমিতে ফসল ফলাতে পারছেন না। এখন পানি না থাকায় গভীর নলকূপ বসিয়ে সেচ দিতে হচ্ছে। আর জেলেরা জানান, নদীতে পানি না থাকায় আগের মত মাছও মিলছে না।
স্বাধীনতার পর থেকে তীস্তা নদী পরিচর্যা করা হয়নি। পানির অভাবে নদীর নাব্যতা হারিয়েছে, তলদেশ ভরাট হয়ে পানি ধারণের সক্ষমতাও হারিয়েছে। ফলে প্রতি বছর বন্যায় নদীর তীব্র স্রোত দিগবিদিগ ছোটার কারণে ওই এলাকার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, জমি হারিয়ে পথে পথে ঘুরছে।
শুষ্ক মৌসুমে যেখানে তিস্তার পানির প্রবাহ ৫ হাজার কিউসেক থাকার কথা, সেখানে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে তা ২শ’ থেকে ৪শ’ কিউসেকে নেমে এসেছে। ফলে পানির অভাবে প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এক সময়ের প্রমত্ত তিস্তা নদী এখন শুকিয়ে ছোট-বড় অসংখ্য চর জেগে উঠেছে। এখন তিস্তা নদী রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিহাট জেলার দুই কোটি মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুনআন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই ভারত উজানে একাধিক বাঁধ, খাল, জলবিদ্যুৎ ও সেচ প্রকল্প নির্মাণ করেছে। ফলে তারা ইচ্ছেমতো তিস্তার পানি ব্যবহার করছে, আর বাংলাদেশকে রেখেছে পানির সংকটে। নদী গবেষকরা বলছেন, বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের দুই কোটি মানুষের জীবনমান রক্ষায় একমাত্র সমাধান হচ্ছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন রংপুরের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু বলেন, ভারত সরকার তিস্তা নদীর উজানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নিয়ে তারা তাদের কৃষিক্ষেত্রে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে তাদের উন্নয়ন সাধিত করেছে। এতে করে আমরা আমাদের পানির হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। যা আন্তজার্তিক আইন লঙ্ঘন।
নদী গবেষক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক তরিকুল ইসলাম জানান, তিস্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে তার একটা প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে। দরিদ্র মানুষ আরও দরিদ্র হচ্ছে। সেই সাথে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার সম্পদ পানিতে ভেসে যাচ্ছে।
মন্তব্য করুন