ভিডিও শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

কোরআনের শাসন ছাড়া দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না : ডা. শফিকুর রহমান

কোরআনের শাসন ছাড়া দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না  : ডা. শফিকুর রহমান। ছবি : দৈনিক করতোয়া

দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান মানবিক বাংলাদেশ গড়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয় এমন কোন কার্যক্রম থেকে সকলকে বিরত থাকতে হবে। জাতীয় ঐক্য অটুট রেখে মানবিক বাংলাদেশ গড়তে হবে।

আর মানবিক বাংলাদেশ গড়তে আল্লাহর নির্দেশনা অর্থাৎ কোরআনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ৫৪ বছরে অনেক সরকার দেশ শাসন করেছে, হাত বদল হয়েছে। কিন্তু দেশে কোন শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তার একমাত্র কারণ আল্লাহর নির্দেশনা মানা হয়নি।

আজ শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দিনাজপুর গোর এ শহিদ বড় ময়দানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দিনাজপুর জেলা শাখার আয়োজনে কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি ২৪ জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করতে আমাদের ছাত্র-জনতা বুক পেতে দিয়েছে।

এ দেশের মাটিকে রক্তে রঞ্জিত করে ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। নিহত ও আহত এসব ছাত্র-জনতা যেন কষ্ট না পান, তাদের ত্যাগের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। তিনি বলেন, ২০০৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জামায়াতের ১১ জন দায়িত্বশীল নেতাকে-তার মধ্যে পাঁচজনকে ফাঁসি ও ছয়জনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এছাড়াও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের খুন-গুম করে এবং জেলে পুড়িয়ে জামায়াত ইসলামকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। দেশের প্রতিটি জামায়াত-শিবির কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে এদেশে জামায়াত-শিবির প্রকাশ্যে কর্মী সম্মেলন করছে এবং জনগণের সাথে আছে।

আওয়ামী লীগ প্রধানসহ সকল নেতাকর্মী দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-জনতা বুক পেতে রক্ত দিয়েছে, সেই রক্ত বৃথা হতে দেওয়া যাবে না। ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, শাপলা চত্বরে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। রক্তে রঞ্জিত হয়েছে শাপলা চত্বর। অথচ নির্লজ্জ ফ্যাসিবাদি সরকার ঘোষণা দিলো হেফাজত রাস্তায় রং ছিটিয়ে দিয়েছে।

শেখ হাসিনা লোহার বদলে বাঁশ, সিমেন্টের বদলে ছাই দিয়ে উন্নয়নের ধোঁয়া তুলে ২৬ লাখ কোটি টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে। তিনি বলেন, এত খুন, জেল জুলুম অত্যাচারের পরও জামায়াতে ইসলাম ও শিবির বসে থাকেনি। যেখানেই দুর্ভিক্ষ, খরা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সেখানেই জামায়াতে ইসলাম মানবিক দায়িত্ব পালন করেছে। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়েও অত্যাচার ও নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছে।

আরও পড়ুন

তিনি কুড়িগ্রামের রৌমারী ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে দু’টি ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, যা কিছু হচ্ছে সব দোষ জামায়াত-শিবিরের। তিনি, দিনাজপুরের একজন বিচারকের নাম উল্লেখ না করে বলেন, প্রকাশ্যে এই বিচারক যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তা পক্ষপাত দুষ্ট, শপথ ভঙ্গ করেছেন। যার ফলে আমরা আদালতে কোন বিচার পাইনি। তিনি এই বিচারকের ফৌজদারী আইনে মামলা দাবি জানান।

তিনি ফ্যাসিস্টদের বাংলার মাটিতে আশ্রয়-প্রশ্রয় হবে না উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সকল হত্যার বিচার চায় জামায়াত ইসলামী। চুরি-চামারি না করি, চাঁদাবাজি না করি, দখল বাণিজ্য না করি, ঘুষের ভাগ না বসাই, মামলা বাণিজ্য না করি তাহলেই ফ্যাসিদের কবর রচিত হবে এদেশেই। তিনি সকল চাঁদাবাজ, জমি দখলকারী, মামলা বাণিজ্যকারীদেরও বিচার দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, যাদের মধ্যে দেশপ্রেম আছে তারা এব কাজ থেকে বিরত থাকবেন।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, জামায়াতে ইসলামী সরকার গ্রহণ করলে ঘুষ, দুর্নীতি, দখলবাজি বন্ধ করে দেওয়া হবে। মহিলাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা দেওয়া হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে কেন কোন দলের ও কোন ধর্মের তা বিবেচনা করা হবে না। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবেই বিবেচনা করা হবে। আইন আইনের গতিতে চলবে। সকল ধর্মের মানুষকে নিয়ে আল্লাহর দেওয়া বিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হবে।

এর আগে ১১টা ১০ মিনিটে ৫ আগস্ট আন্দোলনে নিহত ছাত্র রুদ্র সেনের বাবা অধ্যাপক সুবীর কুমার সেন কর্মী সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। দিনাজপুর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি ড. এনামুল হক ও সহকারী সেক্রেটারি রাজিবুর রহমান পলাশের সঞ্চালনে এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুর হালিম, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য ও সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দোলোয়ার হোসেন।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন-বিরামপুর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিশির কুমার সরকার, জেলার সাবেক আমির আনোয়ারুল ইসলাম, জামায়াত নেতা আবতাফ উদ্দীন মোল্লা, মাহবুবুর রহমান ভুট্টু, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি জাকিরুল ইসলাম, শহর আমির সেরাজুস সালেহীন, শিবিরের সাবেক নেতা মতিউর রহমান, নিতাই চন্দ্র দেবনাথ, অধ্যক্ষ আব্দুর হাকিম, বেলাল উদ্দীন প্রধান, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, মুসফিকুর রহমান, মাওলানা জোবায়ের সাঈদ, রেজাউল করিম, সাজেদুর রহমান সাজু , রাসেল রানা প্রমুখ। উল্লেখ, প্রায় ২০ বছর পর জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্যে দিনাজপুরের গোর এ শহিদ বড় ময়দানে বিশাল কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফ্লাইওভার থেকে যাত্রাবাড়ী পার্কে ককটেল বিস্ফোরণ, আহত ৪

শনিবার সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে এনসিপি

নওগাঁর রাণীনগরে পাখি পল্লীর পাখি উধাও

সিরাজগঞ্জে দ্রুত বাড়ছে যমুনার পানি

নাটোরের সিংড়ায় সেনাবাহিনীর অভিযানে ১৬ টন সরকারি চাল উদ্ধার

বগুড়ার শাজাহানপুরে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামীলীগ নেতা গ্রেফতার