ভিডিও শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২

প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৭:৫১ বিকাল

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর শতবর্ষী সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি এখন পরিত্যক্ত

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর শতবর্ষী সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি এখন পরিত্যক্ত

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর এলাকার সুজাপুর গ্রামে শত বছরের পুরোনো সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি। একসময় যে লাইব্রেরি ছিল পাঠকের পদচারণায় মুখর, বইয়ের পাতায় পাতায় জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত এক প্রজন্মের আশ্রয়স্থল- আজ তা শুধুই স্মৃতি। অবহেলা আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে লাইব্রেরিটি।

১৯১৬ সালে তৎকালীন জমিদার সুরেশ চন্দ্র রায় ও তাঁর ছেলে ক্ষিতিশ চন্দ্র রায়ের উদ্যোগে সুজাপুর গ্রামে যাত্রা শুরু করে এই পাবলিক লাইব্রেরি। সুজাপুর হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার পর দরিদ্র ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের বইয়ের সংকট দূর করতে স্কুলসংলগ্ন এলাকায় নির্মিত হয় এটি। বাবার স্মৃতিকে অমর করে রাখতে এর নামকরণ করা হয় সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি।

শুধু পাঠ্যবই নয়- সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা গ্রন্থে ভরপুর ছিল এর তাকগুলো। কালের বিবর্তনে ধীরে ধীরে প্রাণ হারিয়েছে এটি। তবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনী আগুনে পুড়ে দেয় লাইব্রেরির অমূল্য সব বই ও আসবাবপত্র। স্বাধীনতার পর আর নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি এই জ্ঞানের ঘর।

দীর্ঘ নীরবতার পর ২০১১ সালের ১৪ অক্টোবর তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান এমপি লাইব্রেরি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন। পুরো ভবনের পাশে ১২ শতাংশ জমিতে নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়। ২০১২ সালে পুরোনো ভবন সংস্কার ও নতুন ভবন নির্মাণের পাশাপাশি কেনা হয় ১ হাজার ১২০টি বই।

২০১৫ সালে আরও ২ লাখ টাকা অনুদানে নির্মিত হয় অতিরিক্ত আরও একটি ঘর। ২০১৭ সালে চালু হয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এলাকার শিক্ষিত যুবকরা সেখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শুরু করে। পাঠকদের পদচারণায় আবরও মুখর হয়ে উঠে লাইব্রেরি। গঠিত হয় পরিচালনা কমিটি।

তবে অর্থাভাব, লাইব্রেরিয়ানের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ- সব মিলিয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। পরে করোনা মহামারিতে বন্ধ হয়ে যায় সকল কার্যক্রম। ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি চুরি হয় প্রশিক্ষণ কেন্দের ৬টি কম্পিউটার। আর এভাবেই নতুন আশার শেষ আলোটুকুও যেন নিভে যায়।

আরও পড়ুন

লাইব্রেরি চত্বরে গিয়ে দেখা যায়- পুরোনো ভবন আগাছায় ঢেকে গেছে, নতুন ভবনের সামনেও ঝোপঝাড়। তালা খুলে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে মাকড়সার জাল। এক কোণে একটি বুকশেলফে এখনও থরে থরে সাজানো কিছু বই নীরবে অপেক্ষায়।

সুরেশ লাইব্রেরির পাঠক ৮৮ বছর বয়সী নূরুল ইসলাম বলেন, আগাছায় ঢাকা এই ভবন শুধু ইট-পাথরের কাঠামো নয়, এটি ফুলবাড়ীর ইতিহাস, শিক্ষা ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত দলিল। যথাযথ উদ্যোগ আর সামান্য পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি আবারও হতে পারে নতুন প্রজন্মের জ্ঞানের আশ্রয়স্থল।

লাইব্রেরি পরিচালনা কমিটির সম্পাদক প্রদীপ কুমার সরকার বলেন, শুধু অর্থের অভাবে লাইব্রেরি চালানো সম্ভব হচ্ছে না। লাইব্রেরিয়ানের বেতন ও দেখভালের খরচই সবচেয়ে বড় বাঁধা। এখানে প্রায় আড়াই হাজার বই আছে তবে কিছু বই নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলা পরিষদ বা পৌরসভার মাধ্যমে যদি লোক নিয়োগ দিয়ে চালু রাখা যেত, তাহলে এই প্রাচীন লাইব্রেরি আবারও জ্ঞানের আলো ছড়াতে পারত।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহমেদ হাছানের সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি লাইব্রেরি পরিদর্শন করে পরিচালনা কমিটির উদ্দেশ্যে বলেন, আপাতত আপনারা পরিষ্কার করে লাইব্রেরি খুলে বসার ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে লোকের সমস্যা সমাধান করা হবে। একইসাথে তিনি লাইব্রেরির জন্য সরকারি বরাদ্দেরও ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর শতবর্ষী সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি এখন পরিত্যক্ত

লং ডিসটেন্স রিলেশনে কেমন আছেন তানজিকা?

রাতভর শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা ইনকিলাব মঞ্চের

বগুড়ার শেরপুরে ৩ বিঘা জমির আলুর গাছ উপড়ে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা

ভারতের ‘প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় বাল পুরস্কার’ পেলেন বৈভব সূর্যবংশী

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে নৈশকোচের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত