না ফেরার দেশে চলে গেলেন শরীফ ওসমান হাদি
মারা গেছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৩৩ বছর। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ইনকিলাব মঞ্চের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদের মোকাবিলায় মহান বিপ্লবী ওসমান হাদীকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন।’ আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদে লড়াই করার কথা ছিল ওসমান হাদির। গত ১২ ডিসেম্বর গণসংযোগের জন্য রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গেলে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে হাদিকে গুলি করা হয়। গুলিটি তার মাথায় লাগে। ঢাকা মেডিক্যাল থেকে অস্ত্রোপচার শেষে তাকে প্রথমে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়।
এর আগে ১৭ ডিসেম্বর ওসমান হাদিকে দেখতে গিয়েছিলেন সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান। এদিন প্রেস উইং থেকে বলা হয়, এদিন রাত ৯:৪০ মিনিটে ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করেন এবং হাদির চিকিৎসা কার্যক্রম সম্পর্কে তাকে অবহিত করেন। তিনি জানান, হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন।
প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে হাদির জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করার অনুরোধ করেন।
এর আগে ওসমান হাদির অবস্থা অতন্ত্য ক্রিটিক্যাল বা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছিলেন জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ও ন্যাশনাল হেলথ অ্যালায়েন্সের (এনএইচএ) সদস্য সচিব ডা. মো. আব্দুল আহাদ।
তিনি বলেন, ‘আজকেও শরিফ ওসমান হাদির সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। তার ব্রেনের যে স্কেমিয়া ছিল, সেটি কিছুটা বেড়েছে। হার্ট, লাংস, কিডনি ভেন্টিলেশন সাপোর্টে ফাংশন করছে। ইউরিন আউটপুট আগের মতোই সাপোর্টের মাধ্যমে হচ্ছে।’
আরও পড়ুনগত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয় হাদিকে। হাদির চিকিৎসার সব খরচ সরকার বহন করবে বলে জানায় অর্থ উপদেষ্টা।
এদিকে ওসমান হাদি হত্যাচেষ্টায় এখন পর্যন্ত নয়জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব ও পুলিশ। তারা হলেন, ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু, ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা, হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের কথিত মালিক আবদুল হান্নান, সীমান্ত এলাকায় মানব পাচারে জড়িত সন্দেহে সঞ্জয় চিসিম ও সিবিরন দিও এবং ফয়সালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও মোটরসাইকেলের মূল মালিক মো. কবির এবং ফয়সালের বাবা হুমায়ুন কবির ও তার স্ত্রী মোসাম্মাৎ হাসি বেগম। এর মধ্যে আবদুল হান্নানকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে রোববার তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। সোমবার ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এছাড়া গ্রেফতার কবিরকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আদালতে জবাবন্দী দিয়েছেন অভিযুক্তের বাবা-মা।
আজ ওসমান হাদির হত্যাকারী ফয়সালের পলায়নে সহায়তাকারী সঞ্জয় চিসিম ও সিবিরন দিওকে রিমান্ডে নিয়েছে আদালত। শরিফ ওসমান হাদি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায় এক মুসলিম পরিবারে ১৯৯৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন মাদরাসার শিক্ষক। নেছারাবাদ কামিল মাদরাসায় হাদির শিক্ষাজীবনের শুরু, পরে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে হাদি সবার ছোট। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
ইংরেজি শেখার কোচিং সেন্টার সাইফুরস–এ একসময় শিক্ষকতা করেন হাদি। সর্বশেষ তিনি বিশ্ববিদ্যালয় অব স্কলার্স নামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর ওসমান হাদির হাত ধরে গড়ে ওঠে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’। সব ধরনের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান, স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ—একে সংগঠনটির ঘোষিত লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন


_medium_1766071029.jpg)
_medium_1766070448.jpg)
_medium_1766070029.jpg)




