ভিডিও সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৪:৪৮ দুপুর

গ্রামবাংলার শিক্ষাব্যবস্থা সংকট না সম্ভাবনা 

এক সময় ছিল যখন গ্রাম বাংলায় শিক্ষার আলো তেমন চোখে পড়তো না। ধীরে ধীরে সময়ের প্রয়োজনে শিক্ষার ব্যাপকতা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। তুলনামূলকভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার হার আগে থেকেই কম ছিল। ফলে পিছিয়ে ছিল গাঁও-গ্রামের কৃষকের সন্তানরা। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা ব্যতিত আলোকিত জীবন অসম্ভব। সেই আলোর প্রতিফলন সব জায়গা সমভাবে প্রতিফলিত হতো না এক সময়। যুগের পরিবর্তনে সচেতন হয়ে উঠে সবাই। নিজেকে কাক্সিক্ষত পর্যায়ে অধিষ্ঠিত করতে শিক্ষার দিকে ঝুঁকে পড়ে। 

“যে সমাজে শিক্ষা নেই, সে সমাজ সভ্য নয়” এই সত্যটি সর্বজনবিদিত হলেও বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের দিকে তাকালে সেই সমাজকে আমরা কতটা ‘সভ্য’ বলতে পারি, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। শহরের ঝলমলে শিক্ষা কাঠামোর পেছনে যে গ্রামীণ শিক্ষা অবহেলিত ও অপূর্ণতার ভারে নুয়ে আছে, তা স্বীকার করতে আমরা যেন কুণ্ঠাবোধ করি।

গ্রামই এ দেশের মূল চালিকাশক্তি অর্থনীতি, কৃষি, সংস্কৃতি, শ্রম সবকিছুর ভিত্তি এই গ্রাম। অথচ এখানকার শিক্ষাব্যবস্থা বছরের পর বছর ধরে থেকে গেছে অবহেলার ছায়ায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো -এর ২০২৩ সালের তথ্যমতে, দেশের মোট শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৬৭ শতাংশ গ্রামীণ এলাকার। অথচ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি গ্রামে, যেখানে অনেক স্কুলে একজন শিক্ষকই ৫টি শ্রেণি দেখছেন!  ইউনিসেফ-এর ২০২২ সালের রিপোর্ট বলছে, দেশের প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ২০% শিশুই পঞ্চম শ্রেণি শেষ করার আগেই স্কুল ছেড়ে দেয়, এবং এর বেশির ভাগই গ্রামীণ শিশুরা। 

অনেক গ্রামের স্কুল ভবন এখনো কাঁচা বা আধা-পাকা। স্কুলে নেই পর্যাপ্ত বেঞ্চ, ছাত্রীদের জন্য নেই আলাদা টয়লেট, নেই স্যানিটারি ন্যাপকিন, ফলে অনেক মেয়ে প্রজনন বয়সে স্কুল থেকে ঝরে পড়ে। ২০২১ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, গ্রামে মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রীদের ঝরে পড়ার হার ছিল ৩৫%, যা শহরের তুলনায় দ্বিগুণ। এ ছাড়া, দারিদ্র্য, বাল্যবিবাহ এবং অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।

তবে সমস্যা যতই গভীর হোক না কেন, সম্ভাবনার দ্বারও কিন্তু একেবারে বন্ধ নয়। গ্রামবাংলায় এখনও এমন অনেক শিক্ষক আছেন যারা নিষ্ঠা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। কিছু এনজিও ও স্থানীয় উদ্যোগের মাধ্যমে চালু হওয়া শিক্ষা কার্যক্রম নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। সরকারও “প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট শিক্ষা” বাস্তবায়নে নানা পরিকল্পনা নিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবায়নের গতি অত্যন্ত ধীর। কাগজে-কলমে যত পরিকল্পনা থাকুক, মাঠপর্যায়ে পরিবর্তন আনতে হলে আগে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, পর্যাপ্ত নিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও স্থানীয় সচেতনতা তৈরি করতে হবে। 

আরও পড়ুন

গ্রামের শিশুদেরও শিক্ষা পাওয়ার অধিকার আছে শুধু বই মুখস্থ করার নয়, বরং মনন গঠনের শিক্ষা, মানবিকতা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতার শিক্ষা। আমরা যদি সত্যিই “স্মার্ট বাংলাদেশ” গড়তে চাই, তবে শহরের গন্ডি পেরিয়ে গ্রামবাংলার শিক্ষাব্যবস্থাকেও স্মার্ট ও সমৃদ্ধ করতে হবে। না হলে শিক্ষার আলো শুধু শহরের কয়েকটি অলিগলিতেই আবদ্ধ থাকবে, আর অন্ধকারেই হারিয়ে যাবে বাংলাদেশের বিশাল সম্ভাবনাময় একটি প্রজন্ম।

লেখক

মোছাঃ রোকেয়া সুলতানা

শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী কলেজ

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গ্রামবাংলার শিক্ষাব্যবস্থা সংকট না সম্ভাবনা 

বাবরি মসজিদ নির্মাণের জন্য ট্রাঙ্ক ভর্তি টাকার পাহাড়!

কুটিরশিল্প : বেঁচে থাকার লড়াইয়ে পরাজিত শিল্প

মঞ্চে অশালীন নাচ নেহার, তোপের মুখে গায়িকা

মায়ামি শিরোপা জেতায় মেসির নির্ঘুম রাতের অবসান ঘটেছে : বেকহাম

জাপানের যুদ্ধবিমানে রাডার লক, চীনা রাষ্ট্রদূতকে তলব